বাগবাজার রীডিং লাইব্রেরী ভ্াাব্রিখ ন্িিদে্দে্ক সভ্র

পনের দিনের মধ্যে বইখানি ফেরৎ দিতে হবে। ..

গ্রহণের তারিখ

প্রদানের : গ্রহণের প্রদানের ] গ্রহণের পত্াঙ্ক পত্রাঙ্ তারিথ ; তারিখ | তারিখ ; তারিখ চা টা সি ]

তি

বেদ-বাণী |.

প্রথম প্রচার। রি রর চি শপ কু |

দ্বিতীয়া আবৃতি।

প্রকাশক শ্রীমতিলাল সেন, বি-এ। বরিশাল। ১৩৩২ সাল।

কাগজে বাঁধাই ১২ টাকা

সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিত ল্য +-- 1 ] কাপড়ে বাধাই, ১৮ আনা

পারছ প্রথন্মঞ্ ভ্িতীম্ব প্রচ্গান্প প্রার্তিল 8ক্চানা

১। শ্রীশৈলেন্দ্র কুমার বস্থু, ২৯ নং মদন মিত্রের লেন, কলিকাতা ২। শ্রীললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়, বি-এল্‌, পটুয়াখালী, বরিশাল। ৩। শ্ত্রীমতিলাল সেন, বি-এ, চক্‌ বাজার, বরিশাল

৪। ডাক্তার শ্রীরামানুজ চক্রবর্তী, ১৪ নং ফর্ডাইস্‌ লেন, কলিকাতা ৫। গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স,

পুস্তক-বিক্রেতা প্রকাশক, ২০৩।১।১, কর্ণওয়ালিস গ্রীট, কলিকাতা স্মুতলায ৪-- কাগজে বাধাই ১৯ টাকা প্রথম প্রচার ১-- কাপড়ে বাধাই ১৮০ আনা) কাগজে বাধাই ১০ আনা দ্বিতীয় প্রচার £-_

কাপড়ে বাধাই ১।৮%০ আনা

শপ

কুস্তলীন প্রেস, ৬১নং বৌবাজার ষ্ট্ট, কলিকাতা, শ্রীপণচন্্র দাস দ্বারা মুদ্রিত।

প্রকাশকের নিবেদন)...

কোনও মহাপুরুষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাধকের কল্যাণার্থ যে সকল পত্র লিখিয়াছেন, তাহার কয়েকখানি মাত্র এই ক্ষুদ্র গ্রন্থাকারে প্রকাশ করিলাম। উদ্দেশ্ঠ--যদি আর কাহারও কল্যাণ হয়।

গ্রশ্থোক্ত বিষয় সহজবোধ্য করিবার জন্য, পার্খব-স্থচী (1878799] 2906৪) পাদ-টীকা (6০০£-068) যৌগ করিয়া দিলাম।

ভগবান যদ্দি সকল পত্র প্রকাশ করিবার শক্তি দেন, তবে সাধনার বিভিন্ন অবস্থার সমুদয় জ্ঞাতব্য বিষয়ই জানাইতে পারিব। খণ্ডে তাহার অংশমাত্রই দিতে সমর্থ হইলাম।

সাধক ! মনে রাখিবেন--“সকল ওঁষধই যেমন সকল রোগীর জন্ত নয়, সকল নিয়মও তেমনি সকলের জন্য নয়”। গ্রস্থে সাধনার কত কথাই আছে, আপনার সাধন ভাবের যেটা অনুকুল, আপনি কেবল সেইটাই গ্রহণ করিবেন

এই গ্রন্থের মধ্যে অধ্যাত্ব-রাজ্যের যে সকল তথ্য মিলিবে, তাহার একটাও অন্ুমান-কল্পনা-বা-অতিরঞ্ন-মূলক নহে; সকলই অন্থভূতির কথা। আপনারাও নেই জ্বতলম্ত-ততযকে লাভ করুন, ইহাই প্রার্থনা ওম্‌।

) রর ১২৬, রত 4 টা টে ২২277 পর সা (1 তে রত ২২ ১4 সি 8 ৫, রড চি পা ১? তে ১) ২৯৫৭ 41811 ৮1 সিজন

আকাশ বাতাস, দিবস যাঁমিনী, মরণ অমরণ, ব্রহ্ম জগৎ কিছুই ধখন ছিল না, যাহা! আছে এবং যাহা নাই, তাহার কিছুই যখন ছিল না, তখন কেবল একই বর্তমান ছিলেন; সেই একক হইতে শ্বতন্্ব আর কিছুই ছিল না; “কিছুনা*য্ব আবরিত হইয়া সেই এক চৈতন্ত- সভা! যেন মহাধ্যানেই বিরাজমান ছিলেন 1

স্নাসদাসীন্নো সদাসীত্দানীং নাসীদ্রজে। নো! ব্যোম! পরো যৎ।

. কিমাঁবরীবঃ কুহ কন্ত শর্মনংভঃ কিমাসীদ্গাহনং গভীরং ॥১। সৃত্যুরাসীদম্ৃতং তহি রাত্রা! অহন আসীত প্রকেতঃ। আনীদবাতং ্বধ়া! তদেকং তন্ান্ধস্থন্ন পরঃ কিংনাস।খ তম আসীতমস গুড় হমগ্রে২প্রকেতং মলিলং সর্বম! ইদং। তুচ্ছযেনাভ্‌ পিহিতং যদাসীত্তপমস্তন্মহিনাজায়তৈকং ॥৩।

খণ্থেদ-নংহিতা ১ম মণল, ১২৯শ সৃত্ত।

বেদ-বাণী

সে এক গভীরতম গভীরতা ! মে এক অতুলনীয় গাভীধ্য ! মে এক সীমা-হীন অনন্ত !

সেই এক পরমাত্মাই যখন ছিলেন, তখন কে কাহাঁকে দেখিবে, কে কাহাঁকে শুনিবে, কে কাহাকে বলিবে, কে কাহাকে বুঝিবে?

অন্ধকারে আবার অন্ধকারের প্রকাশ কি? অনন্তে আবার অনন্তের প্রকীশ কি? অদ্বৈতৈ আবার অদ্বৈতের প্রকাশ কি?

সেই এক প্রকাশিত হইলেন। লীলাই বল, স্বভাবই বল, আর যে কারণই বল, তিনি গ্রকাশিত হইলেন।

অদ্বৈতের প্রকাশের জন্য দ্বৈত, অনন্তের প্রকাশের জন্য সাস্ত, সুখের প্রকাশের জন্য দুঃখ, পরমাত্মার প্রকাশের জন্য জগত প্রয়োজন

দুঃখই সুখময়কে প্রকাশ করিল। জড়ই চৈতন্তকে গ্রচার করিল। অনিত্যই নিত্যের সন্ধান বলিয়! দিল। বছই একের আভাস প্রদান করিল।

তুষার-মপ্ডিত হিম-গিরি তাহার মহিম! প্রকট করিল। সীমা-শৃন্ত অন্থুনিধি তাহারই গা্তী্য প্রদর্শন করিল াহারই তেজ মার্ভৃণ্ডে, তাহারই সৌন্দর্য্য বুস্থমে, তীহারই প্রেম মাতৃ-স্তন্যে”_তাহারই ক্ষমতা জগচ্ক্তে প্রকাশিত হইল।--অনন্ত প্রকারের অনন্ত চিম্ণীর (6৮00069)

বেদ-বাণী

ভিতর দিয়া এক অনস্ত-জ্যোতির অনন্ত প্রকারের প্রকাশ হইল!

কে বলিবে, কেমন করিয়া এই স্ৃ্টি হইল? সর্বগত নিরঞ্জন চৈতন্ত-দেব ত্রদ্ধাণ্ড রূপে, বিরাট শরীরে প্রকাশিত হইলেন।

কি মহিমা-মণ্ডিত বিশ্ব-মূত্তি! স্বর্গ তাহার মস্তক, ভাস্কর তাহার লোচন, পবন তাহার নিশ্বাস, আকাশ তাহার দেহ, পৃথিবী তাহার পদ!

কিন্ত, মনে করিওনা, ব্রদ্মাণ্ডের প্রকাশেই পরমাত্মা নিঃশেষিত হইয়াছেন বা কমিয়া গিয়াছেন বা পরিবন্ভিত হইয়াছেন। তিনি পূর্বেও যেমন ছিলেন, এখনও তেমনই রহিলেন ! এখনও তেমনই পূর্ণ, তেমনই স্থির, তেমনই অনন্ত, তেমনই এক-রস, তেমনই অবকাশ- বিহীন !

রক্ষ-সমুদ্র যেমন ছিলেন, ঠিক্‌ তেমনই রহিলেন; অথচ ইহার মধ্যে, ইহারই শক্তিতে, ্রদ্ধাগ-বুদ্বুদ উঠিল, ভাদিল, খেলিতে লাগিল! আবার, সেই বুদ্বুদের ভিতরেও, বাহিরেরই মত, এক অখণ্ড চৈতন্ত-সত্তা সর্ধ্র সমভাবে বিরাজ করিতে লাগিলেন! ইহা কেমনে হইল, কে জানে? |

কিন্ত, বুদ্‌বুদ কতক্ষণ থাকে? চপলা৷ কতক্ষণ নৃত্য করে? ব্রন্ধাগ্ুই বা কতক্ষণ থাকিবে?

ভগত্বৎ্প্রাঞ্থিই উদ্দেস্ঠ

বেদ-বাণী

বুদবুদ সাগরে বিলীন হইবে। যাঁকিছু আছে, তাও থাকিবে না; যা নাই, তাও থাকিবে না। কোন চিহ্নও থাকিবে না। কেবল এক্হ এক্কেন্স উপর বিরাজ করিবেন। কেবল একই যে ম্হাধ্যানে বিরাজমান থাকিবেন !

আর, এই এক্ষেল্স ভিতরে যে বিশ্বের অভিনয়, ইনি তাহার নিয়ন্তা হইয়াও অচল, কর্তা হুইয়াও অকর্তা, সর্ধগত হইয়াও নিলিপ্ু! ইনি সর্বদাই ধীর, স্থির শান্ত, “শ্তদ্ধম-অপাপবিদ্ধম্” |

এই যে বিশ্বের খেলা, ইহাকে সত্য বলিতে হয়, বল; মিথ্য। বলিতে হয়, বল; আর যাঁকিছু বলিতে হয়, বল; কিন্তু খেলা একবার ছুইবারের জন্য নয়;-_কতবার কত বিশ্ব, বুছুদের মত, ইহাতে উঠিবে, উঠিয়। খেলিবে, খেলিয়া আবার ইহাতেই লয়প্রাপ্ত হইবে। একটিও বরাবর থাকিবে না কিন্ত, এই অবকাশ-হীন, বিকার- হীন, সম-রস একই একই ভাবে বরাবর ছিলেন, বরাবর আছেন, বরাবর থাঁকিবেন। এই এক টৈতন্ত- সন্তাই সর্বদা সর্ধত্র সমভাবে বিরাজমান। এই এক আনন্দ-ম্বরূপই সর্বদ। সর্বত্র পূর্ণরূপে বিদ্যমান

ইহাকে না পাইলে অভাব-বোধ ঘোঁচে না, সংসার- বন্ধন টুটে না, দুঃখের অবসান হয় না।

ইহাকে পাইলেই আনন্দ, ইহাকে পাইলেই তৃষ্ধি,

৮৮: বেদ-বাণী বাজি, সি তে হি টি

ইহাকে পাইলেই শান্তি।

ইহাকে পাওয়াই জীবনের লক্ষ্য; ইহাকে লাভ করাই পরম পুরুষার্থ; এবং, ইহাকে পাইবার চেষ্টাই কর্তব্য এবং একমাত্র কর্তব্য ;_-তাহাই পুণ্য, তাহাই ধর্ম এবং তাহাই মানব-জীবনের শ্রেষ্ঠতম অধিকার

ইহাকে যদি এই শরীরেই লাভ করিতে পার, তবেই জীবন সফল।

ইহাকে পাইবার জন্য প্রাণপণ কর। “ইহাকে ন| পাইয়৷ কিছুতেই নিবৃত্ত হইবে না"বুদ্ধ-দেবের মত, এমন প্রতিজ্ঞ। কর। উৎসাহের সহিত, অধ্যবসায়ের সহিত, নিপুণতার সহিত অগ্রসর হও।

কিন্ত, ইছাকে কেমন করিয়। পাইবে? চক্ষু ধাহাকে দেখিতে পায় না, বাক্য ধাহাকে বর্ণন করিতে পারে না, মন ধাহাকে চিন্তা করিতে সমর্থ হয় না, ধিনি সৃষ্টির অতীত এবং বুদ্ধির পর, সেই গুণাতীত পর-ত্রক্ষকে কেমন করিয়া মিলাইবে?

উপায় আছে। অবাঙ্মনসগোচরমূ + হইলেও, তিনি.

ভক্তি-লভ্য, তিনি ভাব-গম্য

মনকে বিষয়-বিমুখ করিয়া! ভগবনুখী কর। সর্বদা ভাবের আশ্রয় গ্রহণ করিয়া থাক।

ভগবানে যার অনুরাগ জন্মিয়াছে, তার বেদ-পুরাণে প্রয়োজন কি? যে বিবেক-বৈরাগ্য লাভ করিয়াছে, তার

তরী ৯১ 38 নি ৩৪ চে ১" পাশা

চা

উপান

$ 7

১৯৯,

দি কত

বেদ-বাঁণী “শনশান্ত্রে প্রয়োজন কি? যে জগদ্প্ুরুর মঙ্গল-হস্ত সর্বদা দেখিতে পাইতেছে, তার অন্ত সাহায্যের প্রয়োজন কি? যার মন ভগবানে ডূবিয়াছে, তার জগতে প্রয়োজন কি? |

সর্ধদা তাহাকে ভাব, তাহার চিন্তা কর, তাহাতে ডূবিয়া! থাক, তাহাতে বিলীন হইয়া যাও। নিত্য-ম্মরণেঃ গ্রহলাদের মত, কৃতার্থ হও

৬কাশীধাম; ১১ই পৌষ, ১৩২৪।

স্পা

নিরাপৎ্থ |

*্* * * দীর্ঘ পত্র লিখিতে বলিয়াছ; লেখা-পড়ায়, কথা-বার্তীয় আর বেশী ফল কি? উপনিষৎ বলেন £-- অনুভূতি বিনা মূঢো বৃথা ব্রন্মণি মোদতে। প্রতিবিদ্বিত-শাখাগ্র-ফলাশ্বাদন-মোদবৎ তাই, অনুভূতি চাই। বুঝিতে হইবে, ভগবানই সকল হইয়াছেন সকল করিতেছেন। সকল রূপই তাহার রূপ, সকল শব্দই তীহার নাম এবং সকল কর্মই তাহার আনন্দ-লীলা। বৃক্ষের মন্ধরে, ভ্রমরের গুঞজরে, নদীর কুলু- ধ্বনিতে, ব্যাত্রের ভয়াবহ গঞ্জনে, ক্রোধীর উত্তেজিত চীৎকারে এবং প্রেমিকের পবিত্র সঙ্গীতে প্রেমময়ের রসময় নামই শুনিতে হইবে। পরার্থে আত্ম-বিসর্জনে এবং আত্মার্থে পর-পীড়নে সমভাবেই তাঁহার প্রেম-লীল। দর্শন করিতে হইবে। চিত্রকরের তুলিকা, কশাইএর ছুরিকা এবং দেব-ৃদ্ঠির পুষ্প-মালিকা,_এ সকলই “তিনি” বলিয়া মনে করিতে হইবে। আবার, যে অনন্ত-শক্তি বিধাতা এই বৈচিত্র্যময় অনস্ত-কোটি ব্রন্ধাণ্ডে প্রতিমূহূর্তে অনন্ত রূপ ধারণ করিতে পারিতেছেন, তিনি--সেই ইচ্ছাময় কৃপা-

অনুভূতি

কি কর্তব্য

_বেদ-বাণী

পপি পপ

নিধান ভক্তের মনোরপ্নের জন্য, আমাঁদিগের মঙ্গলের নিমিত্ত, উপাসকের ইচ্ছ! প্রকৃতি অন্ুসারে, এক বা অনেক মৃদ্তি যে ধারণ করিতে পারেন,ইহাও বুঝিতে হইবে। বুঝিবার জন্য প্রথমে বিশ্বাস, পরে আলোচন। চিন্তা করিতে হয়। চিন্তা করিতে করিতে বিশ্বাস উপলব্ধিতে পরিণত হয়। এবং এই প্রকার উপলব্ধি, সময়-ক্রমে উচ্চতর উপলব্ধি সমূহে সাধককে লইয়া যায়। তখন জ্ঞান ভক্তি, সাকার নিরাকার, দ্বৈতবাদ অদ্বৈতবাদ_-এ সকল বিবাদ সন্দেহ চিরকালের জন্য বিদায় গ্রহণ করে

এই অবস্থা লাভ করিবার জন্য, অবশ্যই, চেষ্টা করিতে হইবে। যদিও ত্রন্মচর্্যবলে শরীর চলিশ বর বয়সেও কন্মক্ষম থাকিতে পারে, তথাপি ত্রিশ বৎসর অপেক্ষা চল্লিশ বৎসর বয়সে যে কর্ধ-ক্ষমতা কমিয়া যাইবে, ইহা প্রকৃতির অলঙজ্ঘনীয় নিয়ম তাই, একটু সময়ও যেন বৃথ। ব্যরিত না! হয়। যে প্রকার বন্দোবস্ত .করিলে সাধনের অধিকতম স্ৃবিধ! হয়, তাহাই করণীয়। যে কম্ম ভগবান-লাভের সহায়, তাহাই কর্তব্য,তাহাই পুণ্য এবং তাহাই মঙ্গলজনক; আর যাহা ভগবৎ-পথের অন্তরায়, তাহাই অকর্তব্য, তাহাই পাঁপ এবং তাহাই অশুভের নিদান। লোকের মনরক্ষা করিবার জন্ত কিম্বা অন্ত কোন কারণে সাধনের বিদ্ব ঘটান মানসিক দুর্বলত। মাত্র। সাধনের পক্ষে সকল প্রকার

চঞ্চলতাই দোষজনক। এক প্রকার নিয়ম অনুসারে

বেদ-বাণী

বহুকাল চলিতে হয়। থাকা, খাওয়া, শোওয়া, সাধনকরা! প্রভৃতি সকল কশ্মই স্থশৃঙ্খলা সুনিয়মের সহিত চল! উচিত চি চে চে ন্ চে

তবে, যদি ভগবানে সম্পূর্ণরূপে নির্ভরতা থাকে, 'ঘাহা বখন প্রয়োজন, তিনিই করিয়া দিবেন, মানুষের কোন হাত নাই, মানুষ তাহার হাতের পুতুল মাত্র'-_এইরপ দৃঢ- বিশ্বাস থাকে, তবে কিছুই করিতে হয় না। প্রকার সাধকের নিয়মিত ধ্যান, জপ কিছুই বেশী দিন থাকে না। গানে আছে

“মদনের যাগ-ষক্ঞ ব্রক্মময়ীর রাঙা পায়”

অবস্থা আসিলে, “সাধন করিব”, “মুক্তিলাভ করিব», ভগবদর্শন করিব” সকল ইচ্ছাও থাকে না। তখন কেবল বলে, “তোমার ইচ্ছ। হউক্‌ পূর্ণ, করুণাময় স্বামি !” “ধনং মদীয়ং তব পাদ-পন্কজম্‌।” * * * * ইতি।

বগাশ্রম ) _ শুভাকাজ্জী__

১১১১৪

নিন, ০১7০৯ ৬০০০৮ সা

অনাথ বালক

ওঁ নিরাপৎস্তু।,

চিঠি লিখিবার পূর্বের একটি কথা জিজ্ঞাসা করিয়! লই। তোমরা কত লোককে দয়! কর,_একটি অনাথ বালককে আশ্রয় দিতে পার? ছেলেটির না আছে মা, না আছে. বাবা; থাকিবার ঘর নাই, পরিবার কাপড় নাই। এর প্রতি কি তোমাদের দয়! হইবে?

ছেলেটি আয়ের জন্য কত লোকের নিকটে গিয়াছে! অন্ধকারময়ী রজনীর ক্রোড়ে যখন জগৎ নিদ্রা-হুখ-মগ্র, তখন একটু আশ্রয়ের জন্য কত লোকের দুয়ারে ধাকা! দিয়াছে! কিন্তু প্রায় কেহই দুয়ার খোলে না__কেহ সাড়। দের না--কাহারও ঘুম যেন ভাঙ্গে না! ভাকের পর ডাক শুনিয়া, ধান্কার পর ধাক্কার শব্দ পাইয়া, ঘুম এক এক বার ভাঙ্গিলেও আবার অম্নিই নাক ডাকিতে আরম্ভ করে! এই বাঁলকটির কথা কত লোকে শুনিয়াছে, কিন্তু কেহই বিষয়ে মনোযোগী হয় না। মনোযোগী হইবেই বা কেন? সংসারের লোক তে'লো মাথায়ই তেল ঘষে, ফিরে পাবার জন্যই দান করে এখানে প্রেমের হাট নাই» সর্ধত্র কেনা-বেচা--দোকানদারী ! তাই, লোকে একে

রর

বেদ-বাণী

আশ্রয় দিতে চায় না। অবশ্ত, ছেলেটির একটু দোষও আছে। সে বলে, “যে ঘরে আমাকে থাকিতে হইবে, সে ঘরে আর কেহ থাকিতে পাইবে না,_গৃহস্বামীও না। আমিই সে ঘরের সর্বময় কর্তা হইব।” কয়জনে তেমন ভাবে-অতিথিকে নাগমহাশয়ের মত--ঘর ছাড়িয়া দিতে গারে? আরও একটু দোষ আছে,-_স্থযোগ পাইলেই, আশ্রয়দীতার যথাসর্বস্ব চুরি করে ! পওহারী বাবার মত কজন আছে যে জানিয়া শুনিয়া, ইচ্ছ৷ করিয়া চোরকে সর্বস্ব অর্পণ করিবে? অক্রোধ-পরমানন্দ নিত্যানন্দের মত উন্মাদ কোথায় পাওয়। যায় যে হত্যাকামীকেও অবাধে প্রেম বিলাইবে?

সংসারের “দয়ালু” বড়লোকদের আশা ছাড়িয়া দিয়া বালকটী আশ্রয়ের জন্য প্রায়ই বনে বনে, পাহাড় পর্বরতে__ যেখানে ভিক্ষগণ কিছু হারাইবার আশঙ্কা করে না ঘুরিয়া বেড়ায়। বালকটি কিন্তু সদাই বলে, “যে আমাকে আশ্রয় দান করিবে, তার কোনই ভয় নাই।” প্রলাপ বাক্যেরই বা অর্থ কি?

তাহাকে ,পাইবার জন্ প্রয়োজন,-দেহরূপ দেবালয়- খানি সম্পূর্ণরূপে তাহাকে ছাড়িয়া দেওয়া, _সর্বস্ব-দক্ষিণ বিশ্বজিৎ-যজ্ঞ সম্পন্ন করা--শরীর, মন, প্রাণ, বুদ্ধি, অহঙ্কার সমুদয়ই, বিনা প্রত্যাশায়, তাহাকে অর্পণ করা সরল ভাবে বলিতে হইবে |

১১

ভগবানে আত্ম

বেদ-বাঁণী

“নিবেদয়ামি চাত্সানৎ, ত্বং গতিঃ পরমেশ্বর |” এই সঙ্কল্প ঠিক ঠিক হইলেই তাহার উত্তর হয় “অহং ত্বাৎ সর্বপাপেভ্যেো। মোক্ষয়িস্যবামি, মা শুচঃ 1৮ এই যে আত্ম-নিবেদন, ভগবানে সম্পূর্ণপে আত্ম- বিসজ্জন, ইহার মধ্যে, লক্ষ্য করিলে, প্রেম-প্রবাহই দেখিতে পাইবে প্রেম প্রত্যাশা রাখে না, দোকানদারী জানে না, স্বার্ঘপরতার ধার ধারে না। সে দিয়াই সুখী, সে পাইতে চায় না। “ভাল না বাসিয়া পারি না_-তাই ভালবাসি ; কেন,»জানি না। ভালবাসিতে হয়,_তাই ভালবাসি কিছুই চাই না আমাকে যে ভাবে রাখিয়া তিনি সন্ভষ্ট, তাহাতেই আমি স্থখী। তিনি রুপা করুন্‌ বা না করুন্, আমি চাই কেবল তাকে ভালবাসিতে ।_ ইহাই প্রেমের স্বরূপ এই প্রেম লাভ করিবার জন্য ষোল-আনা মনই তাতে লাগাইবার চেষ্টা করিতে হয়। চেষ্টা করিতে করিতেই চেষ্টা ফলবতী হয় কেহ বলেন, “যতই সাধন-ভজন করি, যতই আশ। করি, তার ইচ্ছ! ব্যতীত কিছুই হইবার নহে তবে আর আশা করিয়া বৃথা অশান্তি ভোগ করিব কেন? ধার অঙ্গুলি-সঞ্চালনে এই বিশ্ব-্রন্মাণ্ড পরিচালিত হইতেছে ; ধার ইচ্ছার প্রতিকূলে একটি সামান্য ধুলি-কণাকেও স্থান- ভ্রষ্ট করিবার ক্ষমতা কাহারও নাই; যে অনস্ত-ম্্গলময় বিধাতা আমাদের প্রত্যেকের উন্নতি এবং মুক্তির জন্য, ১২

বেদ-বাণী

তাহার প্রেম-লীলার পূর্ণস্বের জন্য, প্রত্যেক জীবকে, প্রত্যেক জাতিকে প্রত্যেক জগৎকে প্রতি মুহূর্তে শুভ. পথে নিয়ন্ত্রিত করিতেছেন ; যিনি আমাদের বাস্তব-মঙ্গল আমাদিগের অপেক্ষা অনেক অধিক জানেন ইচ্ছা করেন; আমার্দিগের কর্তব্য,__সমুদয় অজ্ঞানকৃত বাসন! ও. কম্ম পরিত্যাগ করিয়া সর্বথ। তাহার ইচ্ছার অন্বর্তন করা “তোমার ইচ্ছাই পূর্ণ হউক্‌” ইহা হইতে শ্রেষ্ঠতর প্রার্থনা কখনও মানব-কণ্ঠে ধ্বনিত হয় নাই

“ছোট আমি”কে ত্যাগ করিতে হইবে নিজের কর্তৃত্ব বিসজ্জন দিতে চেষ্টা করিতে হইবে

ক্রৌপদী যতক্ষণ লজ্জা নিবারণের জন্য হাতে কাপড় ধরিয়া উচ্চৈঃস্বরে “বিপদে কাগারি মধুস্থদন 1” বলিম্না চীৎকার করিতেছিলেন, ততক্ষণ অবিচলিত-প্রেমময়ের কর্ণে সে কাতর বিলাপ প্রবেশ করে নাই। কিন্ত খন কাপড় ছাড়িয়। দিয়া ছুই হাত উর্ধে তুলিয়া! সরল মনে বলিলেন, “তোমারি ইচ্ছা হউক্‌ পূর্ণ, করুণাময়স্বামি 1” তখনই সেই মনের অস্ফুট-বাণী ভগবানের বধির কর্ণ প্রবিষ্ট হইল-__বস্ত্রের দীর্ঘতা ছুঃশাসনের আস্থরী শক্তিকে পক্সাজিত করিল!

যীশুধুষ্ট তীহার শিশ্তগণকে বলিয়াছিলেন, “অনস্তশক্তি- বিশ্ব-বিধাতাই সকল করাইতেছেন। তাহার নিকটে কিছুই অসম্ভব নাই,_-এ কথ! বিশ্বাস করিতে হইবে যখন.

১৩

বেদ-বাণী

কোথায়ও বক্তৃতা করিতে হয়, পূর্বে ভ্জন্ত প্রস্তত হইও না। কারণ, প্রস্তুত হওয়া নিজের শক্তির উপরই নির্ভর করা। যিনি মৃককেও বাঁচাল করিতে পারেন, বক্তৃতা যদি তাঁহারই ইচ্ছায় হয়, তবে, পূর্বের চেষ্টা না করিলেও তাহার শক্তি বক্তৃতা-রূপে তোমার ওটদ্য় হইতে প্রকাশিত হইবে ।”

নির্ভরশীল ব্যক্তি কখনও মনে করে, “যতদিন তিনি অহং রাখিবেন, ততদিন কেবল তাহারই নাম, তাহাকেই চিন্তা করিতে থাকি। এই শরীরকে যে ভাবে ইচ্ছা, বাখুন।

আবার, কখনও কখনও সাধন ভজন করিতেও ইচ্ছা হয় না, নাম করিতেও ভাল লাগে না।

কখনও সাধক মনে করে, “তিনিই সকল করাইতে- ছেন?; কখনও বা মনে হয়, তিনিই সকল করিতেছেন-__ সাধনও তিনিই করিতেছেন কোন শরীরে মুক্ত হইয়া, কোন শরীরে সাধক হইয়া, কোন শরীরে বা বদ্ধ থাকিয়! সেই আনন্দময় প্রেম-লীল! সম্পাদন করিতেছেন ।,

কখনও কেহ বলে, প্তিনিইত সকল করেন। আমি যে বিষয়চিত্তা করি, নানা ব্যাপারে লিপ্ত আছি, এও তারই ইচ্ছা। তার ইচ্ছ। নয় বলিয়াই আমি সাধন করি না।* কথাটাতে সত্য আছে বটে) কিন্ত, যে ঠিক ঠিকৃ মনে করে যে ভগবানই সকল করেন, যে ঠিক ঠিক্‌

১৪. |

বেদ-বাঁণী

ভগবানে আত্ম-সমর্পণ করে, সে ভগবানকে ভুলিয়৷ থাকিতে পারে না। সে যাই করুক্‌, জপ-ধ্যান করুক আর না করুক্‌, সর্বকর্মের-কর্তী-ভগবানে মন থাকিবেই। এইটাই পরীক্ষা

“আমি তীহাতে সর্ব-সম্র্পণ করিয়াছি, মেই বলেই ত্বাহাকে পাইব", ভাবও থাকিবে না। কঠোর সাধনই কর, আর সর্বস্ব তাহাকে সমর্পণ করিয়া তাহার উপর বিশ্বাস নির্ভরই কর, আর যে উপায়ই অবলম্বন কর, তার কৃপা ব্যতীত তাহাকে পাইবার অন্ত পন্থা নাই এবং কোন কর্মই সেই পরমানন্দকে পাইবার পক্ষে প্রচুর নহে। তাই, সমুদয় বাসনা ত্যাগ কর! চাই; সমুদয় চিন্তা বঙ্জন করা চাই; সর্বদা ভগবানে মন রাখা চাই। এই ভাবের চেষ্টা চলিতে চলিতে মন নির্মল হইবে, অবিষ্ার গ্রস্থি ভিন্ন হইবে, হৃদয়ে শাস্তিময়ের আসন স্থপ্রতিষ্ঠিত হইবে।

একটি বিশ্বাস থাঁকা চাই,_-ভিনি যখন যা ইচ্ছা, তাই করিতে পারেন। তীর ইচ্ছা হইলে প্রত্যেক মুহূর্তেই আমাকে যে কোন রূপ ধারণ করিয়! দেখ। দিতে পারেন। আমি যাহাই করি না কেন,.যেমনই হই না কেন, কোন বাধা নাই।” সকল সময়ে ইহা মনে রাখিতে_হইবে। ইতি।

্বর্গাশ্রম ) শুভাকাজ্জী ৮1১1+১৪ চে রং

নিশ্বৈগুণা হই- বার উপায়

নিরাপৎস্থ |

সকল বাসনা-কামনা ভগবানের পাঁদপদ্মে বিসঙ্জন দিতে হইবে__এরপ পূর্বপত্রে লিখিত হইয়াছে। কিন্ত “আশা-পাশ-শতৈর্ধদ্ধ” ক্ষুদ্র মানব কেমন করিয়া তাহাতে সমর্থ হইবে? সে যে জ্িগুণময়ী প্রকৃতির করায়ত্ব হইয়াই রহিয়াছে! তাহার ইন্দ্িয়গ্তলি যে আপাতমনোরম বিষয়- জালেই আবদ্ধ! সে যে দেহকেই আত্মা মনে করিয়া দৈহিক-সৃখ-সাধনেই ব্যস্ত! সে যে কাহাকে আপন, কাহাকে পর মনে করিয়া আত্ম-রক্ষণে পর-দমনে সদাই নিযুক্ত ! সে যে নান প্রকার আশঙ্কার সর্বদ! ভীত সন্স্ত! যাহারা ভাললোক, তাহারাও যে পর-দুঃখ- মোচনেচ্ছায় কাতর ! এখন উপায় কি?

শাস্ত্র বলেন, কাটা দিয়া যেমন কীটা তুলিতে হয়, তেমনি সত্বগুণের আশ্রয় লইয়া রজ তম গুণকে পরাভূত করিতে হয়ঃ পরে সত্বগুণকেও পরিত্যাগ করিলে গুণাতীত, আনন্দময় হওয়া যায়। প্রথমতঃ সাত্বিক বিভীষণের সাহায্যে কুস্তকর্ণরূপী তম রাবণরূপী রজ গুণকে পরাস্ত করিয়া, পরে লঙ্কার বিভীষণকে আবার

১৬

বেদ-বাঁণী

লঙ্কায়ই পাঠাইয়। দিতে হয়। ভগবান বলিয়াছেন,--

“ত্রৈগুণ্য-বিষয়! বেদ, নিস্ত্রগুণ্যো ভবাজ্জীন |”

অনেক সময়ে বহিরাবরণ দেখিয়া তামসকে সাত্বিক বা গুণাতীত বলিয়া ভ্রম হইতে পারে। তাই ত্রিগুণের প্রকৃতি বেশ করিয়া বুঝিতে হয়। গীতা বিষয় বেশ স্পষ্টরূপে নির্দেশ করিয়াছেন। |

বাসনাগুলিকে ক্রমে ক্রমে ভগবনুখী করিতে হয়। জ্ঞান, ভক্তি ভগবদ্র্শন এই সকলই কামনা করিতে হইবে এবং তন্রিমিত্ত, তৎ্সঙ্গে অন্যান্য ইচ্ছাগুলিকে দমন করিতে হইবে। যতই ভগবানের দিকে টান বাড়িবে, ততই অন্থান্ত: প্রবৃত্তি আপনিই সংযত হইতে থাকিবে। তারপর যা প্রয়োজন, ভগবানই করিয়। লইবেন

ভগবদিষয়ক কামনায় দোষ নাই। তুমি ওগুলি বেশ রাখিতে পার।

থে মনে করে, পপুতুল-বাজীর পুতুল আমর|, যেমন নাচায়, তেম্নি নাচ”) যে চিন্তা করে, “তিনিই সকল যন্ত্রের যনত্রী'; যে ভাবে, “সাপ হয়ে কাট তুমি, ওঝা হয়ে ঝাড়" » যে দেখে, “এত দয়। পরোপকারের চেষ্টা সত্বেও পৃথিবীর দৈন্, দুর্দশা যেমন তেমনই আছে; দুঃখকে এক্‌- কালে তাড়াইয়া দেওয়া! সম্পূর্ণ অসম্ভব; তার মন আর 985

খ। ১৭ নর

বাসন!

আত্ম-সমর্পণ

বেদ-বাঁণী

আরম্ভ করে--“যখনই মনে তরঙ্গ উঠিতে থাকে, তখনই ভগবান হইতে দূরে সরিয়৷ যাই” তার মন কি আর কম্মে আসক্ত হয়?

লোকের প্রকৃতি কি? সেখ চায়, ছুঃখ চায় না। যে স্থথটুকু পাই, তাহা ধরিয়া থাকিব; অথচ তৎসঙ্গে অবিচ্ছেম্ত-ভাবে-সম্বদ্ধ যে ছুঃখটুকু, তাহা! লইব না! তা হবে কেন? হয়, ছুইই ছাড়; নয়, দুইই লইতে হইবে। সকল বিচার করা চাই

যখন পূর্বসংক্কার-বশতঃ কর্শ-প্রবৃত্তি মনে জাগে, তখন ভগবানে সমপিত-চিত্ত সাধক মনে করে, “সকলই যখন ভগবানে সমর্পণ করা হইয়াছে, তখন আর আমি কর্তা হইবার কে? কার জন্য কে কি কম্ব করিবে ?

যদি সংসারের ছোট-খাটো স্থ ত্যাগ করিলে অনন্ত স্থথ পাওয়া যায়, তা+তে ক্ষতি কি?

কিন্তু, মা্গষ যতই বিচার করুক, দেহে আত্ম-বুদ্ধি বশতঃ কামনা চাঞ্চল্য নিঃশেষে ত্যাগ করিতে পারে না। কিন্তু, তজ্জন্ত কোন আশঙ্কা করিতে হইবে না। সাধন-পথে-অগ্রসর মানব যখনই শক্তির অল্পতা বোধ করে, চড়াই উঠিতে হাপাইয়া পড়ে, তখনই ছুর্ধবলের বল দীনবন্ধু-_“জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায়” নির্জীব দেহে সন্ত্ীবনী জুধা সঞ্চারিত করেন এবং প্রয়োজন হইলে স্বয়ংই পথশ্শ্রান্তকে বহন করিয়া লইয়। যান। এই জন্যই তিনি মঙ্গলময়;

১৮

বেদ-বাণী

এই জন্যই তিনি প্রেমময় পতিতপাবন ! নহিলে, মায়া- জীল-জড়িত ছুর্ববল মন্তস্তের উপায় কি? নহিলে, কোন্‌ আশ্বাসে, কোন্‌ বিশ্বাসে, কোন্‌ প্রাণে মানব তাহার প্রতি নির্ভর করিয়া থাকিবে? “ন মে ভক্তঃ প্রণশ্যতিশ_-এই আশ্বাস-বাণী কি প্রেম-করুণাই ঘোঁষণ। করিতেছে! গীতার কথা একটাও অবিশ্বাস করিও না ভগবান যোগযুক্ত-_ সমাধিস্থ হইয়া গীতা বলিয়াছিলেন,_-এ কথা মহাভারতে আছে।

যেযে প্রকারের লোকই হউকৃ না কেন,_-পাপী- তাপী, সাধু-অসাধু- প্রত্যেকেরই কতকগুলি শুভ মুহূর্ত আসে, তখন সে প্রশান্ত-চিত্ত থাকে সময়ে যদি বথাসাধ্য সরল ভাবে বলে, ঠাকুর ! তুমি আমার সমস্ত ভার গ্রহণ কর; আমি চলিতে পারি না, তুমি কোলে করিয়া লইয়। যাও আমি আশা-পাঁশে বদ্ধ, মোহ-মদিরায় অচেতন, ভাল-মন্দ বুঝিতেছি না,-তুমি আমার মঙ্গল কর। আমি সাধন জানিনা, কৃপা করিয়া তুমি আশায় দেখ। দাও”; তাহা হইলে, সে কথা ভগবানের কর্ণে নিশ্চয়ই পছছ'ছিবে ; ক্রমে ক্রমে এরুপ শুভ মুহূর্তের সংখ্য। বদ্ধিত হইবে এবং অনস্ত করুণার বিশাল দ্বার তাহার জন্য চির-মুক্ত হইবে।

প্রথম প্রথম অনেক চাঞ্চল্য হয়। একবার আত্ম- সমর্পণ করিলাম; একটু পরেই. অহ আসিয়া আমার

১৯

বেদ-বাণী

অজ্ঞাতসারে কোথায় লইয়া গেল! যখনই টের পাই, তখনই পুনরায় আত্ম-সমর্পণের সঙ্কল্প করিতে হয় এই- রূপ করিতে করিতেই অহঙ্কার চাঞ্চল্য দূর হয়।

তাই বলিতেছি, কাহারও নিরাশ হইবার কারণ নাই। যে অবস্থাপন্ঈই হও না কেন, যত অধিক সময় যত অধিক বার সম্ভব, তার দিকে তাকাইয়। থাক। তিনি নিশ্চয়ই কোলে তুলিয়া লইবেন যাহা প্রয়োজন, সকলই ঘরে বসিয়া পাইবে অনেক বড় লোকের ছেলে স্কুলে যায় না; শিক্ষক বাড়ী আসিয়া পড়াইয়া যান। “মায়ের- ছেলে” রাম্কষ্জের শিক্ষার জন্যও শিক্ষকগণ যথাসময়ে বাড়ীতেই আসিতেন। আবশ্তক হইলে ভগবান নিজেই ভক্তিযোগ, রাজযোগ, জ্ঞানযোগ-- আরও কত কি-- শিখাইয়। দিয়া থাকেন।

মনে রাখিও, তাহার একটা ছূর্বলতা আছে; চোখের জল--সরল হৃদয়ের ব্যাকুল ক্রন্দন মৌটেই সহ্য করিতে পারেন না ! ধ্যান করিতে পারিতেছ না ?--একবার কাছ দেখি দেখিবে--পর মুহূর্তে ধ্যানে সজীব মুর্তি আসিয়াছে।

আরও একটা কথা যতকিনু কম্ম হইতেছে, যত

কিছু ঘটনা ঘটিতেছে, ভগবানই সে সকলের একমাত্র

স্বাধীন কারণ। “এইটী ঘটিয়াছে, অতএব এইটা

হইবেই”_-ইহা ঠিক নহে। ইচ্ছাময়ের স্বৃহা ইচ্ছা, ৮৭

রি

/8৮০ 3১০১৮,৪৮ বেদ-বানী

১1 3102৮,

তাহাই সংঘটিত হইতেছে হইবে তাহার রাজ্যে অসম্ভব বলিয়া কিছুই নাই। তোমার কনিষ্ঠা কন্া পিচ্ছিল ময়দানে দৌড়িতেছে বলিয়াই যে সে আছাড় খাইবে, এমন নয়। অনেকেই অবস্থায় আছাড় খায় বটে; কিন্তু সকলকেই আছাড় খাইতেই হইবে, ইহা মিথ্যা কথা। ইচ্ছাময়ের ইচ্ছাতে আছাড় থাইতেও পারে, আবার তীর ইচ্ছা হইলে স্থানে দৌড়াইলেও সে পড়িয়! যাইবে না। তার ইচ্ছাতে অনেক লোকেই ভাবে দৌড়াইতে যাইয়া আছাড় খায়। আবার, যদি তিনি ইচ্ছা করেন, তবে সকলেই আছাড় খাইবে। আছাড় খাওয়া না খাওয়া পিচ্ছিলতার বা দৌড়াইবার বা অন্য কিছুর উপর নির্ভর করে না; সর্ব-কর্মের কর্তা ভগবানের ইচ্ছার উপরই নির্ভর করে। বিশ্ব-সামত্রাজ্যের যিনি আইন- কর্তা, সেই সর্বশক্তিমান ইচ্ছা করিলে কোন সময়ে কোন আইনের ব্যতিক্রম করিতেও সমর্থ। তাহার ইচ্ছাতে রক্ত-জবার গাছে সাধারণতঃ লাল ফুলই ফোটে বটে ? কিন্ত, কখনও সাদা ফুল ফুটিতেও পারে। এটী চিন্তা করিও এবং সমুদয় বাসনা চাঞ্চল্য পরিহার করিয়া, সর্বদা

তাহার উপর মির্ভর করিতেই যত্রশীল থাকিও। নিতরতার ভিত্তি কি, জান ? “তিনি মরঙ্গলময়, প্রেমময়” -এই বিশ্বাস। ঈশ্ষ দ্‌চ বাজার রী

ডাক্ষ সংখ্য। পরিগ্রছণ সংখ্য।”” পারঞাহছণের দ্বাবিখ

ভগবানের মঙ্গলময়ত

বেদ-বাঁণী

করিতে হয়। প৭তিনি সর্বদা সকলের মঙ্গলই করিতেছেন ; আমরা অজ্ঞান-বশতঃ যাহাকে অমঙ্গল মনে করি, তাহাও বাস্তবিক পক্ষে মঙ্গলই”; এই সত্যটা বিশ্বাস উপলব্ধি করিতে হইবে নতুবা অনেক সময়ে চাঞ্চল্য আসিবে একজন কোন এক প্রকারের সাধন করিয়। বেশ উন্নতি লাভ করিল ; অমনি মনে হয়, আমি কেন নির্ভর করির়। বসিয়া আছি? আমারও এরূপ করিলে তাড়াতাড়ি সিদ্ধি লাভ হইত ।» কিন্ত, পম্থা অবলম্বন করিলে যে তোমার অধিকতর সময় লাগিবে না, বাঁ কোন প্রকারের অস্থৃবিধ। ঘটিবে না, তাহার প্রমাণ কি? আর তুমি কোন্‌ শক্তিমান যে নিজের বলে সিদ্ধি লাভ করিবার আসম্পদ্ধা কর ? ফলতঃ, নিজে কিছু করিতে পারি'_-এই বিশ্বাস ঘতদিন থাকে, ততদিন ঠিক ঠিক নির্ভরতা আসে না

অবোধ মানব বোঝে না যে যাহার যেরূপ ওষধের প্রয়োজন, বৈদ্যরাজ তাহাকে তাহাই দিতেছেন। মা এক ছেলেকে মাছ-ভাত দিলেন, এক ছেলেকে সাগু দিলেন, আর এক ছেলেকে কিছুই দিলেন নী। বিভিন্ন ব্যবস্থ। যে ছেলেদের মঙ্গলের জন্যই ইহা যে মায়ের প্রেমেরই পরিচায়ক যেখানে প্রেম নাই, সেখানেই পেটেন্ট ওষধ;--সকলের জন্য একরূপ ব্যবস্থা প্রেমের রাজ্যেই বিভিন্ন অবস্থায় বিভিন্ন ব্যবস্থা ৮৬

বেদ-বাণী

বলিতে পার, “তিনি দি মঙ্গলময়ই হন, তবে জগতে এত রোগ-শোক, ছুঃখ-টৈন্ত, জরা-মৃত্যু কেন? ইহার উত্তরে তোমাকে এই ধলিলেই বোধ হয় যথেষ্ট হইবে যে তুমি আত্মা, তুমি শরীর নহ। আত্মার বিকীশের জন্যই শরীর আত্মার উন্নতির জন্য ভগবান শরীরকে কখনও সুখে, কখনও বা ছুঃখে নিপাতিত করেন আবার, বর্তমান শরীর দ্বারা যতটুকু কাধ্য হইবার সম্ভব, সে-টুকু পূণ হইলেই অধিকতর উন্নতির জন্য, উতৎকৃষ্টতর শরীর লাভের নিমিত্ত, তিনি পুরাতিন জীর্ণ শরীর ত্যাগ করাইয়া থাকেন।

ছাত্র যখন পাঠশালায় বেত্রাঘাত প্রাপ্ত হয়, রোগীর স্ফোটকে যখন অস্ত্র-প্রয়োগ করা হয়, তখন শিক্ষক চিকিৎসককে কি কেহ অমঙ্গলকর মনে করে ?

আছাড় খাওয়। কষ্টকর বটে, কিন্তু আছাড় খাইতে খাইতেই ছেলে দীড়াইতে শিখে একবার আগুণে আঙ্গুল পুড়িলেই শিশু সতর্ক হয়। নতুব! শুধু উপদেশে লোক প্রস্তত হয় না।

রোগের ভয়, সমাজের ভয়, আইনের ভঙ্ব ন। থাকিলে কি সাধারণ লোক সতযমী হইত? অপমান এবং লাঞ্চনা, অনুতাপ এবং বিবেকের দংশন কত লোককে উন্নত করিতেছে !

অন্য দিকে, আবার, মনে কর, কর্তব্য-পরায়ণ ভীমসেন ২৩ রি

বেদ-বাঁণী

যখন ভগবানের আদেশ সত্বেও অন্ত্রত্যাগ করিলেন না, তখন বৈষ্কবান্ত্র হইতে রক্ষা করিবার জন্য ভগবানই তাহাকে আবৃত করিলেন !

পত্রে আর কত লিখিব? সাধন-পথে যতই অগ্রসর হইবে, ভগবানের মঙ্গলময়ত্ব তোমার নিকটে ততই অধিক- তর পরিস্ফুট হইবে বর্তমানে, বিচার করিয়া কিছু কিছু বুঝিতে পারিবে, আর বাকীটুকু বিশ্বাস করিয়া লইতে হইবে সর্বদাই মনে রাখিতে চেষ্টা করিবে, প্রত্যেক জীবের পক্ষে যেমন, সমাজ এবং জগতের পক্ষেও তেমনি, ভগবান সদাই প্রেমময় এবং মঙ্গলময়” |

স্ুষ্যের তেজ সর্বত্রই সমান ভাবে পতিত হয়। সেখানে মুড়ি, মিছরির সমান দর। ভক্তের প্রতি অধিক প্রেম, অভক্তের প্রতি স্বণা বা অল্প প্রেম--ইহ ভগবানের রাজ্যে নাই। বিশ্বজননীর নিকট সকল সন্তানই সমান প্রিয় তিনি সকলকেই বিভিন্ন পথ দিয়া একই স্থানে লইয়া যান। শিব প্রত্যেককেই শিবত্ব, দান করেন। তিনি সম-দর্শন। বড় নদী ছোট নদী সমুদ্রে পড়িলে কি আর তাহাদের ভেদ থাকে ?--উভয়েই সমুদ্র হইয়া যায়। যমুনার পবিজ্র সলিল আর নর্দমার ছুর্গন্ধময় ব্ধ-জল, জাহুবীতে পতিত হইলে উভয়েরই ভেদ ঘুচিয়া যায় ; উভয়েই তখ্‌ গ্গার

২৪

বেদ-বাণী

জগৎ-পাবণী শক্তি প্রা্চ হয়। তাই, ভয় পাইও না, সন্দেহ করিও না, অবিশ্বাসী হইও না। অকুতোভয়, ্রশান্তচিত্রে, বিনা প্রত্যাশায়, অহ্থরাগের সহিত, তাহাতে আত্ম-নিবেদন কর; সর্বতোভাবে তাহার আশ্রয় গ্রহণ কর, তাহার মধ্যে ঝাঁপাইয়া পড়। অমৃত-কুণ্ডে ভুবিয়া থাক। চির-অমরত্বের ইহাই সনাতন পন্থা।

স্ব্গীশ্রম;

১৪।১।১৪ চর সং সং

ত্৫

নিরাপৎস্থ।

যে লোকে বলে, “চোর পালা"লে বুদ্ধি বাঁড়ে,”_- এটা কথার কথা নয়, সম্পূর্ণ সত্য। আর কথাটা যে কেবল চোর সম্বন্ধেই সত্য, তা নয়; যাবতীয় ঘটন। সম্বন্ধেই এই কথাটা খাটে। অতীত ঘটনাবলী ম্মরণ করিয়। আমর। কত সময়েই কত প্রকার জল্পনা-কল্পনা করিয়া থাকি। ঘ্রিরূপ না করিয়া এইরূপ করিলে ভাল হইত» “মে এই কথা বলিলে এই এই প্রকার উত্তর দিতাম”, “অমুক ব্যক্তি অমুক কাজ করিলে অমুকের ক্ষতি হইত'__ এবদ্বিধ-অনন্ত-গ্রকারের-কল্পনা-জাল-জড়িত হইয়া কত অনাবগ্তক মৃত ঘটনা আমাদিগের মনোরাজ্যে চারিযুগের অমর হইয়া বাস করিয়া! থাঁকে। কেবল যে অতীত কশ্মুই মানস-ন্র্গের অমর দেবতা, তা নয়; কত ভবিব্যৎ আশা, অনুমান কল্পনাকে অবলম্বন করিয়া কত সময়েই আমর: সুখ-দুঃখ, স্থবিধা-অস্থৃবিধা উন্নতি-অবনতির কত নভম্প্শী প্রাসাদ গড়ি এবং ভাঙ্গি। নিজ্রা-কালে যত স্বপ্ন দেখ! যায়, তদপেক্ষা অনেক অধিক স্বপ্ন জাগরণ-কালে ঘটিয়া থাকে। ব্রন্ধার ন্যায় আমাদের মনও প্রীতি মুহূর্তে

২৬

বেদ-বাণী

অনন্ত ব্রদ্ধা্ড স্ষ্টি করিতেছে

সাধকের প্রধান কর্তব্য,__এই স্থ্টি বন্ধ করা ত্রদ্ধার পুজা করিতে হইবে না,_তীহাকে পেন্সন্‌ দিয়! বিদায় করিতে হইবে বাহিরের জগৎ আছে থাক্‌; দেখিতে হইবে, বেন ভিতরে সংসারারণ্য না জন্মায়

এজন্য, প্রথমতঃ সঙ্কল্প কর! চাই। “আমার মন কোনও দিকেই যাইতে পারিবে না; আমি কোনও বিষয়েরই চিন্তা করিব না”--এইরূপ দৃঢ় নিশ্চয় করা চাই। সর্বদ। জ্ঞান-খড়গ হাতে লইয়া সতর্ক থাকা চাই মনে যখনই থে চিন্তা উঠিবে, তখনই সেটিকে ধ্বংস করিতে হইবে। এইরূপে মন-রাবণের “এক লক্ষ পুত্র সওয়! লক্ষ নাতি'কে নিধন কর! চাই।

অনেক সময়ে অনেক চিন্তা আমাদের অলঙক্ষিতে, মৃহিরাবণ ভিম্বকাদির মৃত, আমাদিগকে ভগবৎ-সমীপ হইতে দূর দূরান্তরে লইয়া যায়। কত দূর যাইয়! টের পাই। টের পাওয়া মাত্রই, বলরামের মত, দৈত্য-দলন করিতে হইবে

এই ভাবে কিছু কাল যুদ্ধ চালাইতে পারিলে,- রাবণের পুত্র পৌত্রাদির বিনাশ হইলে, রাবণের মৃত্যু অবশ্তজ্ভাবী। “রাবণের ম্ৃত্যু-বাঁণ রাবণেরই ঘরে”? মন তখন নিজেই নিজকে মারিয়া ফেলিবে।

অতি সাবধানে সংগ্রাম করিতে হয়। কোন চিস্তাকেই

২৭ ,

মনোনাশ

বেদ-বাঁণী

উপেক্ষা করিতে হইবে না কোন শক্রকেই কৃপা করিলে চলিবেনা। শক্রর শেষ রাখা নিরাপদ নহে। প্রত্যেক চিন্তাই রক্তবীজ,_ইহা! মনে রাখিতে হইবে। কেবল সংহার, কেবল সংহার। এইরূপ অন্বরত সংহারের ফলে যখন মনোরাজ্য শ্মশানে পরিণত হইবে, তখনই তথায় শ্বশান-রঙ্গিনী আনন্দময়ীর আবির্ভাব হইবে

যুদ্ধে কম্পিত-কলেবর হইবার কোনই কারণ নাই। পার্থ-সারথী সমুদয় ভ্রান্তি দূর করিবেন, বর্শের মত আবরণ করিয়া ত্রহ্ধান্ত্র হইতে রক্ষা করিবেন এবং, শক্তির অল্পত দেখিলে, নিজেই রথ-চক্র হস্তে লইয়া শত্র-বিনাশে অগ্রসর হইবেন। তাহারই নাম করিতে করিতে, কালীয়-দমন- কারীর মৃত, মনের মস্তকে নৃত্য করিতে হইবে দমন তিনিই করিয়া দিবেন। “নিমিত্তমাত্রং ভব সব্যসাচিন্‌!”

চিন্তা-বঞ্জনের জন্ত, মনকে প্রশান্ত করিবার জন্ত, বিষয়ের দৌষ-দর্শন এবং ধর্ম-লীভের উপকারিতা-চিন্তন করিবেই ; তৎসন্গে যথাসম্ভব দৃশ্ত-মার্জনের চেষ্টাও করিতে- হইবে। যানা করিলে চলে, তা করিবে না; যানা বলিলে চলে, তা৷ বলিবে না; যা না ভাবিলে চলে, তা ভাবিবে না। সর্বদা মনে রাখিতে হইবে--

“্ধ্যানং নিব্বিষয়ং মনঃ1৮

কোন বিষয়ের চিস্তা, কোনও প্রকারের সংকল্প-বিকল্প,

কোনও রকমের বাসনা-কামনা যাহাতে না হয়, তজ্জম্য ২৮

বেদ-বাণী

সর্ধবদা হ'সিয়ার থাকিতে হইবে কিন্তু, কেবল ইহাতেই কাজ চলিবে না; সর্ধর্ধী ভগবত-ম্মরণও আবশ্যক সর্বদাই ভগবানে মন রাখিবার চেষ্টা করিবে। যখনই মন অন্য দিকে যায়, তখনই তাহাকে ফিরাইয়া আনিয়। ভগবানে লাগাইতে হইবে। “ময়ি চানন্তযোগেন ভক্তিরব্যভিচারিণী।”: গীতায় আছে £--

“অনন্তচেতাঃ সততং থে। মাং স্মরতি নিত্যশঃ | : ভম্তাহং স্থলভঃ পার্থ নিত্য-যুক্তস্ত যোগিনঃ॥৮

প্রত্যহ নির্দিষ্ট সময়ে এক বার বা ছুই বার বা তিন বার কোন নির্দিষ্ট আসনে সম-কায়-শিরোগ্রীব হইয়া! বপিয়। নির্দিষ্ট প্রকারে ধ্যানাদি করিবে। অন্যান্য সময়ে, যেমন ভাবে হয়, চিন্তা-সম্মরণ-মনন করিলে চলিবে

জানাহার প্রভৃতি অবশ্ঠ-করণীয় কর্মগুলি কোন-না- কোন প্রকারে ভগবানের সহিত যুক্ত করিয়৷ লওয়! ভাল; নতুবা, সর্বদা ভগবত-্মরণ স্থসাধ্য হয় না।

ঘোগবাশিষ্ঠ বলেন, “আত্মজ্ঞান, মনোনাশ বাসনা-

ক্ষয_-এই তিনটিই একই সময়ে অভ্যাস করিতে হয়

যাহা সাধনের, কোনরূপ মহায়তা করে না, সেরূপ কণ্ম চিন্তা সম্পূর্ণরূপেই বজ্জনীয়।

যদি ইচ্ছ। হয়, তাহা হইলে প্রত্যহই গীতাখানা, পড়িও। কেবল পাতা৷ উল্টাইয়া গেলে চলিবে না। ৭৮টির অধিক শ্লোক পড়িবার দরকার নাই। পড়িয়া,

২৯ *

বেদ-বাণী

শ্সোক কয়েকটির সম্বন্ধে আধ-ঘণ্টা বা তিন-কোয়াটার কাল চিন্তা করিতে থাকিবে। টীকা অনুযায়ী চিন্ত। করিতে বলিতেছি না। তোমার মনই টীকা হইবে।

ভাল লাগিলে বিষুপুরাণ যোগ-বাশিষ্ঠ রামায়ণ কোন কোন উপনিষৎ পড়িতে পার।

স্ব্গাশ্রম;

৫1২1১১৪ সং চর সং

নিরাপৎসু।

লছ্ছমন্*ঝোলার নিকটে সময়ে সময়ে ঝাঁকে ঝাকে শুক-পক্ষী দেখিতে পাওয়া যায়। শুক-পক্ষীর বুদ্ধি-চাতুর্য্যের অনেক কাহিনী পুস্তকে পড়িয়াছি, লোক-মুখেও শুনিয়াছি। মনে হয়, বিনা কারণে সে এই প্রশংসার অধিকারী হয় নাই। ব্যোম-বিহারী, মুক্ত-স্বভাব একটা শুককে ধৃত করিয়া সুনিগ্মিত লৌহ-পিগ্ররে আবদ্ধ কর, তোমার হৃদয়ের সমুদয় স্সেহ-৩-প্রীতিঘবারা তাহার উধাও মনকে আকর্ষণ করিতে সচেষ্ট হও, সুবর্ণ-পীত্রে রুচিকর পান-ভোজনাদি প্রদানে তাহার চিত্ত-ভ্রান্তি জন্মাইতে চেষ্টা কর;--সকলই বিফল হইবে সে তাহার মুখের (মুখ বুদ্ধির স্থান) সাহায্যে শৃঙ্খল কর্তন করিয়া লুপ্ত স্বাধীনতার উদ্ধার সাধন করিবে। আমাদিগের আদর্শ পূর্বপুরুষ-_ মহীয়ান আদি-মানব-_সনকাদি ব্রদ্ধার-প্রথমজাত-পুত্র- চতুষ্টঘ়ও জন্মদীতার সমুদয় প্রয়াস বিফল করিনা, দেহ- পিপ্তর হইতে চিরমুক্তির নিমিত্ত গহন বনের অতিথি হইয়াছিলেন। বিশ্ব-শিল্পির প্রথম উদ্যম ব্যর্থ হইল! কিন্ত তিনি ছাড়িবার পাত্র নহেন। শুক-পক্ষীর জন্ত অহিফেনের

৩১

সিিভতিশা

শুক-পক্গী

বন্ধন মুক্তি

বেদ-বাঁণী

আবিষার হইল,মোহন"বাশী প্রস্তত হইল, ইন্দ্রিয় দ্বার-গুলি বহিদ্দিকে উদ্ঘাঁটিত হইল মানব মোহ-মদিরা পান করিল,“মোহ্‌ন” বাশীর “মোহিনী'তে ভ্রান্ত হইয়া তাহার মন-যমুনা উজান বহিল+__নিত্যানন্মময় বৈকুঠধাম ভুলিয়া যাইয়া স্থখের লোভে বিষয়ের দিকে ধাবমান হইল! কিন্তফল হইল কি? স্থথ কিমিলিল? কেমন

করিয়া মিলিবে? স্বুখকে পরিত্যাগ করিয়া, সুখ ভাবিয়া

ছুঃখের পেছনে চলিলে, কেমন করিয়া! স্থখ মিলিবে? তাই, স্থখের অন্বেষণ আর শেষ হইতেছে না। অনবরত ছুট! ছুটি চলিয়াছে, কিন্তু ্ুদীর্ঘ পন্থার অন্ত হইতেছে না। মাঝে মাঝে যখন পায়ে বেদনা! হয়, পথ-শ্রাস্তিতে দুর্বল পথিক হয়রান্‌ হয়, তখন পথি-পার্থে ক্ষণিক বিশ্রাম করিয়। একটু আরাম লাভ করে মাত্র কিন্তু তাহা আরাম মাত্র _ছুঃখের ক্ষণিক নিবৃত্ত মাত্র ;স্থখ নহে। আর সে আরামই বা কতক্ষণ? কয়েক মিনিট পরেই যে আবার গমন-ক্লেশ ভোগ করিতে হইবে! তাই, আরামে লাভ নাই। এবিশ্রাম যে পদ-যুগলকে আরও অবসন্নই করিয়া! দেয়! যত দ্রিন গমনের পরিসমাপ্তি না হইবে, যত দিন বিষয়-কাননে ভ্রমণ চলিতে থাকিবে, তত দিন এরাবত-পৃষ্ঠে অমরাঁবতীর নন্বন-কাননেই বিহার কর আর দ্্-কমগুলু-হন্তে উত্তরাখণ্ডেই বিচরণ কর, সুখ--অপরি- চ্ছেন্ন নিত্য-স্থখ মিলিবে না। ৩২

বেদ-বাণী

ভবের হাঁটে আসিয়া সকলেই স্থুখ কিনিতে ব্যস্ত। সখের স্বরূপ কি, কত মূল্যে কোথায় পাওয়া! যায়» তাহা জানে না; কেবল রব্--সুখ চাই, সুখ চাই। মানব প্রথমতঃ বাল্যকালে নানা ভাবের, নান! সাজের, বং বেরৎ্এর পুতুল পাইয়াই সুখী হয়; তখন মনে করে, “আমি স্থখী”। কিন্ত কিছু কাল পরে, কৈশোরে আর পুতুলকে স্থুখের উপকরণ মনে করে না। তখন পরীক্ষার উচ্চস্থান পরিচ্ছদাদিই স্থখময় বলিয়া ধারণা জন্মে কিন্তু সে-ই বা কত দিন? যৌবনাগমে বিবাহিত জীবনে সে বোধ করে, প্পূর্বেব কত বিষয়তেই সুখ মনে করিয়া সে ভ্রান্ত হইয়াছে !, কিন্তু কাল-শ্রোত সদাই প্রবহমান ; প্রৌটে এশ্বধ্য খ্যাতিই স্থখের নিদান বলিয়া প্রতীত হয়। এইকব্ূপে দেখিতে পাই, কোন বিষয়ই নিরবচ্ছিন্ন স্থুখ প্রদান করিতেছে না! সথথ যদ্রি বিষয়ে থাকিত, তবে আজ যাহাতে স্থখী হই, কাল তাহাতে হই না কেন? আমি যাহা পাইলে উৎফুল্প হই, তুমি তাহাতে প্রীত হইতেছ না কেন? শীত-কালে ঘে গরম কাপড় ব্যবহার করিয়া আরাম পাই, গ্রীক্ম-কালে তাহা কষ্টদায়ক' হইবে কেন? যে সম্পত্তি পাইলে আমি নিজকে চরিতার্থ জ্ঞান করি, তাহ! থাকিতেও ধনী ব্যক্তি পুত্রশোকে অধীর কেন? বাস্তবিক, চিন্তা করিয়৷ দেখ, বুঝিবে” বিষয়ে সখ নাই, থাকিতে পারে না। যে

গা ৩৩

বেদ-বাণী

“আবিল-মধুগকে* (গল্পটা মনে আছে ত?) সাংসারিক মানব সুখ বলিয়া মনে করে, তাহা 1১95115%৩ স্থখ নহে 7--526৮৩১, দুঃখের সাময়িক-নিবুত্তি-মাত্র ; তাহা বেদনার ব্যারামের অহিফেন-_ভ্রমণ.পথে ২।১ মিনিট বিশ্রাম মাত্রব_এতদতিরিক্ত নহে।

* ঘোর এক দুর্যোগের সন্ধ্যায় দিগ্ত্রাস্ত এক পথিক শ্রাস্ত-দেহে যখন নিবিড় এক জঙ্গলের মধ্য দিয়া আশ্রয়-আশীয় চলিতেছিল, এক উন্মত্ত হস্তী আসিয়া তাহাকে ভীষণ ভাবে আক্রমণ করিল। পথিক প্রাণ-ভয়ে উদ্ধ-শ্বানে দৌড়াইতে দৌড়াইতে এক গভীর গর্তের মধ্যে পড়িয়া গেল। পড়িতে পড়িতে গর্ভ-মুখের লতাজালে প৷ আট্কাইয়া যাওয়ায় পথিক হেট-মুণ্ডে উদ্দ-পদে ঝুলিতে লাগিল। গর্ভের নীচে ছিল এক ক্রর সর্প, ফণ। বিস্তার করিয়া! সে পথিককে দংশন করিবার জন্য উদ্াত হইয়া উঠিল। হস্তী তো গর্ভ-মুখেই দ্ড়াইয়াছিল। পথিক ভয়ে একেবারে নিঃশব্দ নিল্পন্দ হইয়া ঝুলিতে লাগিল। এমন সময়ে সমীপবর্তা বৃক্ষের মৌচাঁকটা ভাঙ্গিয়! গেল; ক্ষিপ্ত মৌমাছির দল দংশন-জ্বালায় বিহ্বল করিলেও পথিক একটুও নড়িতে সাহস করিল না। ওদিকে এক মুষিক আঁসিয়। গর্ভ-মুখের লতাগুলির মূল একটী একটী করিয়! কাটিতে লাগিল এমন সময়ে এক ফেৌঁ?ট। মধু ধুল।-বাঁলিতে মিশিয়! আঠার মত গিয়। পথিকের ওষ্ঠে পড়িল। পথিক চাটিয়৷ মধুর আম্বাদ পাঁইতেই আর এক ফৌট। গিয়। পড়িল। পথিক আসন্নতম মৃত্যুর মুখেও মধুর লৌভে সব ভুলিয়। গিক্স! নিশ্চিস্ত আরামে সে ফোঁটা চাঁটিতে চাটিতে ভাবিতে লাগিল, আবার কখন এক ফেটা পড়িবে !

৩৪

বেদ-বাণী

কুইনাইন খাইয়! মাঝে মাঝে একটু হুস্থবোধ কর, বহিলে ম্যালেরিয়া! লাগিয়াই আছে। আফিং খাইলেও বেদনার ব্যারাম একেবারে সারিয়া যায় না। ছুঃখ জগতে টরস্থায়ী বন্দোবস্ত করিয়! বসিয়া আছে।

আর যে £51$91 দুঃখের সাময়িক নিবৃত্তি_ইহাই সর্বদা পাওয়া যায়? কত সময়ে দেখা যায় ক্ুন্িবৃত্তির সন্ত খাছ লইয়া আসিতে আসিতে রাস্তায় আছাড় খাওয়াতে ধাবার নষ্ট হইয়া গেল! সকল পরিশ্রম বিফল হইল! হলতান মামুদ কত অর্থ লুষ্ঠন করিলেন, কিন্তু ভোগ করিতে পারিলেন না। ভাবী স্থখের অমোঘ উপকরণ ঠাহার মৃত্যু-যন্ত্রণীকে বদ্ধিতই করিয়াছিল! যে দিকেই চাই, ছুঃখ যেন বিশ্বগ্রাস করিয়া বসিয়া আছে। আচ্ছা, এই ছুংখাক্থরের কি নিধন হয় না? ছুঃখের চির-নিবৃত্তি কি হয়না? কেন হইবে ন1? উত্তম চিকিৎসকের ন্যায়, রোগের কারণ অনুসন্ধান কর। দেখিবে--স্থুখের লৌভে ভ্রমণ করিতেছ বলিয়াই পথ-শ্রান্তি-ক্লেশ; বুঝিবে-_স্থখের আশা করিতেছ বলিয়াই ছুঃখ তাই, সুখের আশা পরি- ত্যাগ কর ;_-ছুঃখের চির-নিবৃতি হইবে স্থখের আশা করিলে স্থুখ পাইবে না) আশা বিসঞ্জন করিলেই শাস্তি, নিরাশী হইলেই নিত্যানন্দের অধিকার-প্রাপ্চি। তাই, ছুঃখ নিবারণ করিতে হইলে, পূর্ণানন্দ লাভ করিতে হইলে, যমুনার উজান-শ্রোত ফিরাইয়া দিতে হইবে, স্বাভী-

৩৫

ত্যাগেই শাস্তি

বেদ-বাণপী

বিকী গতির প্রবর্তন করিতে হইবে, সনকাদির অন্থ্বর্তন করিতে হইবে-_আশা, বানা সম্পূর্ণরূপে বজ্জন করিতে হইবে। নতুবা, ক্রন্দনে যাহার আরম্ভ, যন্ত্রণায় যাহার সমাঞ্চি, চাঞ্চল্যই যাহার স্বভাব, এমন জীবনে ছুঃখ-ভোগ অনিবাধ্য। তাই, খধিগণ বলিয়াছেন, ত্যাগেই স্থুখ, ত্যাগেই শান্তি, ত্যাগই অমৃতত্ব-লাভের একমাত্র উপায়। আবার মজা এম্নি, ঠিক ঠিক ত্যাগ হইলে কিছুই ত্যাগ হয় না;_সকলই যেন চত্রবৃদ্ধি-হারে-স্থদসহ ঘরে ফিরিয়া আইসে। ত্যাগের অবশ্ঠস্তাবী ফল প্রেমানন্দ যখন জন্মে, তখন এই ছুঃখময় জগৎ আবার স্থুধাময় হইয়া যায়। তখন প্ররুতিরাণী যেন নৃতন বেশ পরিধান করিয়া কত আনন্দ প্রদ্দান করেন; তখন প্রত্যেক দ্রব্যে--প্রেমময়ের অঙ্গাবরণের এক একটা বোতামে কত সৌনধ্য, কত লাবণ্য প্রতিভাত হয়; তখন প্রত্যেক পরমাণু যেন অনস্তত্ব লাভ করে); তখন জড়জগৎ চতন্যময়, প্রেমময় হইয়। নীরব ভাষায় কত কথা বলিয়৷ থাকে ;-সে কথায় কত প্রেম, কত জ্ঞান, কত শান্তি!

স্ব্গাশ্রম;

581২1১১৪

৫2৫

নিরাপৎস্থু।

আচ্ছা, বল দেখি, তোমাদের পোষ্টাফিসের “পিয়ন” হইতে হইলে কি বেদাত্-পরীক্ষা পাশ করিতে হয়? তাঁর আচরণ কিন্তু খাটি বৈদান্তিকেরই মত। তোমরা তাকে যে চিঠির তাড়াই দাও, তা৷ লইয়াই সে ছুটিতে থাকে। “দক্ষিণ মহাসাগরের একটি দ্বীপে একটা কুকুরের ছুইট! 'ল্যাজ, আছে” এই অত্যাবস্তক সংবাদটা পড়িবার জন্য আমরা “বন্মতী”র সকল দিক্‌ তন্ন তন্ন করিয়া খুঁজি। কিন্ত, তার হাতে নানা প্রকারের কত চিঠি,-অথচ কোন সংবাদের দিকেই সে জক্ষেপ করে না। রাস্তা দিয়া চিঠির তাড়া লইয়া, আপন মনে চলিয়া যায়।__কত লোককে হাসায়, কত লোককে কীদায়; কিন্তু, সে আত্ম- সং্»-কোন হাসি-কান্্ার সহিতই যোগ দেয় না? সম্পূর্ণ নিলিপ্ত। কেহ. একমাত্র পুত্রের মৃত্যুসংবাদে অচেতন হইল) কেহ বহুকাল পরে, শিব-পুজীর ফলে পুন্রলাভ করিয়াছে জানিয়া উৎফুল্ল; কেহ পত্র পাইবার আশা! বিফল হইল বলিয়! বিষগ্ন ; কেহ বা শক্রর বিজয়-সংবাদে কাতর হিংসাযুক্ত ! সকল প্রকারের ভাব-তরঙ্গ রাস্তার

৩৭

পোঁ্টাফিসের পিয়ন

বেদ-বাণী

উভয় পার্থে পরিবেষণ করিতে করিতে সে চলিয়া যায়» কিন্ত কেহই তাহাকে শত্রু মিত্র মনে করে না, সে-ও কাহাঁকে আপন বাঁ পর মনে করিয়া ভাল বা মন্দ সংবাদ দেয় না! আরও দেখ তোমাঁদিগের অপেক্ষা যারা বড় বড় কশ্মচারী, তাদের কথাই নাই,_-তোমরাই কি সকলকে সমান ভাবে দেখ? তোমর। বন্ধুর বাড়ী যাইতে প্রীত হও, সম-পদস্থ লোকের বাড়ী যাইতে পার, কিন্ত “নীচ” জনের কাছে যাইতে চাও না। কিন্তু পিয়ন তার গবাক্ষ-মণ্তিত, ধূলিকণাপূর্ণ জামা গায়ে দিয়া, ধনীর প্রানাদে বৃক্ষতলবাসী কাঙ্গালের নিকটে, মহাবিদ্বীন মহামূর্খ উভয়ের নিকটে, সৎ অসৎ সকলের নিকটেই সমভাবে উপস্থিত হয়;__কিছুই দ্বিধাবোধ করে না। লোক যদি ৭২ বেতন পায় বলিয়া! বৈদাস্তিক না হয়, তবে, যে ৩০০২ টাক? মাহিয়ানা পাইয়া, লিখিবার কলম খারাপ হইলে কলমের তিন পুরুষ তুলিয়। গালি দিতে থাকে, সে কি অনেক কেতাব কণ্স্থ করিয়াছে বলিয়াই বৈদান্তিক হইবে? আচ্ছা, আর এক দ্বিক দিয়া! দেখা যাউক্‌। তুমি ৪০২ টাকা বেতনের চাকর, আর পিয়ন ৭২ টাকার চাকর, এই তফাৎ। কিন্তু উভয়েই যদ্দি একত্র হইয়া কোথায়ও যাও, আর উভয়কেই একরকমের আসনে বসিতে বল! হয়, তবে কি তুমি নিজকে অপমানিত মনে কর না? পিয়ন তোমা অপেক্ষা চরিত্রবান হইতে পারে; গু ৩৮

বেদ-বাণী

_কিন্তু সে যে অল্প বেতনের চাকর! কাজেই যে ব্যক্তি উভয়কে সমান আসন দেয়, সে সংসারের হিসাবে নেহাৎ বে-আক্কেল। এই প্রকারের এক বে-আক্েলের কথা একটু লিখি। সে-ক্র্য। সমুদ্রের লোণা জল এবং নর্দিমার ছুর্গদ্ধ বদ্ব-জল তোমার আমার নিকটে বিভিন্ন আসন পাইলেও, হুর্য্যের নিকটে এক আসনই পায় ;-- সকলেরই একই মেঘে স্থান। সেখানে কোন ভেদ নাই, কোন তফাৎ নাই। অভেদ-দর্শনই জ্ঞান, সম্ত্ই যোগ, এক ভাবে অথবা নিজের ভাবে সর্বদা থাকাই গুণাতীত অবস্থা।

যে দেখে, “সকলই প্তিনি'ময়; অন্তরে বাহিরে তিনি; অন্তর-বাহিরও তিনি”; যে জানে, “তার ভিতরেই সকল, প্রত্যেকের ভিতরেই তিনি এবং প্রত্যেক- টিও তিনি”; যে বোঝে, “তিনি ভিন্ন আর কিছু নাই, সকলই তার রূপ, সকলই তার বিকাশ”; যে উপলব্ধি করে, “নকল শরীর, সকল অগুপরমাণু তার শক্তি-প্রকাশের, প্রেম-লীলার যন্ত্রমাত্রঃ তিনিই সকল শরীরে দেখেন, বলেন, শুনেন ও, আস্বাদন করেন, তিনিই সকল মনে চিন্তা করেন, তিনিই সাপ হয়ে কাটেন ওবা হয়ে ঝাড়েন”) যে মনে করে, “স্থখ-ছুঃখ, ভাল-মন্দ, ধশ্মীধন্ম, পাঁপ-পুণ্য, কর্তব্যাকর্তব্য, উচ্চ-নীচ--এ সকলই দেই একেরই বিভিন্ন প্রকাশ”; সে আর ভাব-বিপর্ধ্যয় দ্বারা

৩৯

সমদর্শন

কর্মফল

বেদ-বাঁণী

মুগ্ধ প্রতারিত হইবে কেন? সে যে বদ্মীয়েসের বদ্মাইসিতে সাধুর সাধনীয় তুল্য ভাবেই তাহাকে দেখিতে পায়। তাই তার কাছে হেয় উপাদেয়, নিন্দা প্রশংসা, উন্নতি অবনতি, ভাল মন্দ--এ সকলই বিভিন্নতা-শূন্য হইয়া যাঁয়। সংসারের কম্মের জন্য-_ অধ্যাত্ম-রামায়ণের রামের মত-_-সে নানা ভাবের অভিনয়ই করে; কিন্তু মে কোন ভাবই ভিতরে গ্রহণ করে না; সে “আপনাতে আপনি” থাকে।

সাধন! দ্বারা ভাব দৃঢ় স্থায়ী হয়। “দকলই তিনি; রূপ-রস-গন্ধ-্পর্শ-শব্দ, ভাবজ্ঞান-কম্ম এবং সকলের অতীত চৈতন্ত-স্বরূপ, আনন্দ-স্বব্ূপ--এ সমুদয়ই তিনি”--এই প্রকার চিন্তা করিতে হয়। চিন্তার ফলে তামস রাজন ভাব দুরীভূত হয় সাত্বিক সমতা আমে এবং তৎপর ভাবাতীত, গুণাতীত অবস্থা! লাভ হয়। ইহাই সাধনার লক্ষ্য।

তাই, সকল সময়ে হু'সিয়ার থাকিতে হয়, যেন কখনও কোন কর্ম, কোন ভাব, কোন বস্ত আমাকে আন্দোলিত করিতে না পারে।

আরও একটা কথ! মনে রাখিতে হয়। প্রত্যেক কর্মেই ফল আছে। যখনই যে ভাব মনে আপে, যে কশ্বই কর,-তা সামান্ত হউক বা মহ হ্উক্‌, অন্তে জাঙ্ছুক আর নাই জান্কুক্‌,--

রি ৪০

বেদ-বাণী

তার ফল ভোগ করিতে হইবে। যেমন কর্ম কর, যেমন চিস্তা কর, ফলও তেমনই হইবে। অন্যের দোষের নিমিত্তও যদি তাহার উপর বিরক্তি-ভাব মনে জাগে, তবে তৎফলে দুঃখ আসিবেই। যেমন ভাব, তেমন লাভ।

স্বর্গাশ্রম;

৩০।১1১১৪ সং চে

৪১

তিন পুতুল

ভক্তি

নিরাপৎন্তু।

একবার মহাঁবারুণী উপলক্ষে তিন সহোদর সমুদ্র-স্ান করিতে গিয়াছিল। দুপুর বেলা, একই সময়ে-_এক শুভ মুহূর্তে--তিন জনই জলে নামিল। কিন্তু ফল হইল কি? সর্ধজ্যে্ট-চিনির পুতুল--আর ফিরিল না! শরীর পরি- ত্যাগ করিয়া--অনন্ত সমূত্ধে ক্ষুদ্র দেহ সম্পন করিয়া অনস্ত কালের জন্য অনন্ত সাগরে মিশিয়া রহিল। মধ্যম-- স্যাক্ড়ার পুতুল-_দেহ লইয়া-_দ্রেহের বহিরাকার লইয়া উঠিল বটে; কিন্তু সর্বা্গ জলময়, ভিতর বাহির সর্বত্রই জল। আর সর্ধ-কনিষ্ট-উত্তপ্ত পাথরের পুতুলটা-_যেমন ছিল, তেমনই রহিল ;তার ভিতরে এক বিন্দু জলও ঢোকে নাই; বাহিরে যা লাগিয়াছিল, তাও শীঘ্র শুকাইয়া গেল।

বিষয়-পরায়ণ সংসারী লোক এই প্ররস্তরের পৃতুল)-- যতই তীর্থ-স্গান দেব-মুক্ি-দর্শন, শান্ত্-পাঠ উপদেশ- শ্রবণ করুক না কেন, কিছুই তাদের ভিতরকে সহজে পরিবরিত করিতে পারে না।

কিন্তু, ভগবানের অন্ত-করুণা-বলে যখন মানব ভক্তি-

৪২

বেদ-বাঁণী

ধনের অধিকারী হয়, তখন ভক্তির মাহাত্য্যে, প্রস্তর বস্ত্র পরিণত হয়, বস্ত্র চিনিতে পরিণত হয়, আর চিনি নিজের সমুদয় ক্ষুত্রত্ব বিসঙ্জন করিয়া, সর্বগত অনন্ত বিশ্বরূপ ধারণ করে। একমাত্র ভক্তিই এই অসাধ্য সাধন করিতে সক্ষম। নারদ যখন মুক্তি-লাভের নিমিত্ত কঠোর তপশ্চরধ্যায় নিযুক্ত ছিলেন, তখন একদা দৈববাণী ধ্বনিত হইল £__

যদি অস্তরে-বাহিরে সর্ধত্র হরি বিরাজমান থাকেন, তবে আর তপস্তায় লাভ কি? যদি অন্তরে-বাহিরে কুত্রাপি হরি না থাকেন, তবেই বা তপস্ত। করিয়া ফল কি? সুতরাং হে বস! ক্ষান্ত হও, তপক্তা পরিত্যাগ করিয়া হরি-ভক্তি লাভ করিতে সচেষ্ট হও হরি-ভক্তির গুণেই অনন্ত আনন্দের অধিকারী হইতে পারিবে অতএব আর কাল বিলম্ব না করিয়া জ্ঞান-সিন্ধু শঙ্করের নিকটে যাইয়া ভক্তি শিক্ষা কর।»

গীতাতে ভগবান বলিয়াছেন £__

“পুরুষঃ পরঃ পার্থ ভক্ত্যা লভ্যস্ত্নন্যয়া ॥*

ধাহারা সৌভাগ্যবলে প্রেম-কণিকার অপূর্ব আস্বাদ অন্গভব করিয়াছেন,তীহারাই বুঝিয়াছেন--প্রেম কি অমূল্য বস্তঃ তীহারাই বুঝিয়াছেন--প্রেমের তুলনায় সমগ্র ব্রন্মাণ্ডের যাবতীয় খ্রশ্বধ্য বৃথা এবং অকিঞ্চিংকর। তাই, যখন মহাভক্ত রায়দাসের সাংসারিক অর্থ-রুচ্ছতা৷ দূর করিবার নিমিভ্ত ভগবান বৈষ্ণব-বেশ ধারণ করিয়া তাহাকে

৪৩ রি

ভক্তি-লীভের উপায়

বেদ-বাণী

একখানা স্পর্শমণি প্রদান করিলেন, তখন প্রেম-বিজড়িত কণ্ঠে রায়দাস বলিয়াছিলেন, “ভক্তগণের নিকটে প্রেমময়ের চরণ-কমলই অমূল্য নিধি। হৃদয়ের স্থদূঢ ছূর্গে আমি সেই অমূল্য নিধিকে সযত্ে রক্ষা করিতেছি ;-দিবসের আলোকে কিম্বা রজনীর অন্ধকারে কখনই কেহ তাহাকে চুরি করিতে পারিবে না। মেই অতুল সম্পত্তি আমার হদয়-ভাগ্ডারে সঞ্চিত থাকিতে সামান্য একখান প্রস্তর লইতে যাইব কেন?” রায়দীস স্বচ্ছন্দ চিত্তে সাত-রাজার- ধন স্পর্শমণি প্রত্যাখ্যান করিলেন। এখন প্রশ্ন এই,কেমন করিয়া ভক্তি লাভ করিব? পাষাণ-হৃদয়ে কেমন করিয়া প্রেম-গন্ধা প্রবাহিত হইবে? ভগবান বলিয়াছেন ঃ-- “ধ্যায়তো বিষয়ান্‌ পুংসঃ সন্বস্তেযুপজায়তে। সঙ্গাৎ সংজায়তে কাম: কামাৎ ক্রোধোহভিজায়তে ক্রোধাদ্‌ তবতি সম্মোহঃ সম্মোহাৎ স্থৃতিবিভ্রমঃ। স্বৃতিভ্রংশাদ্‌ বুদ্ধিনাশো বুদ্ধিনাশাৎপ্রণশ্ততি |” বিষয় সম্বদ্ধে যে নিয়ম, ভগবান সম্ন্ধেও সেই নিয়মই কাধ্যকারী হইবে ভগবচ্চিত্তা করিতে করিতে ভগবানে আসক্তি জন্মিবে, আসক্তি হইতে তীহাকে পাইবার জন্য ব্যাকুলতা জন্মিবে। ব্যাকুলতা জন্মিলেই বৈরাগ্যের উদয় হইবে। তাহা হইতে ভগবানের সহিত নৈকট্য-_ প্রেম আসিবে। প্রেমের ফলে বিষয়-স্থৃতি দূর হইবে; এবং রে 8৪ রখ

বেদ-বাণী

সঙ্কল্প-কল্পনার সঙ্গে সঙ্গে সাংসারিক ভাল-মন্দ প্রভৃতির বিচারও বন্ধ হইবে। তাহার ফলে অহঙ্কার-+জীবস্ব ঘুচিয়া যাইবে।

তাই, দুর্বল মন্ুস্তগণের নিমিত্ত ভগবানের উপদেশ £__

“অনন্যচেতাঃ সততং যে মাং স্মরতি নিত্যশঃ। তস্তাহং স্থলভঃ পার্থ নিত্য-যুক্তস্য যোগিনঃ ॥৮

সর্ববদ| তাহাকে চিন্তা করিতে চেষ্টা করিলে তিনিই দয় করিয়া সাধককে জ্ঞান-ভক্তির অধিকার প্রদান করেন।

আত্মত্যাগী, ধন্মপরায়ণ শিবি রাজার উপাখ্যান জান ত? একদা শ্রেনরূপী দেবরাজ কর্তৃক অনুস্থত হইয়! কপোতবূপী অগ্নি ধর্মনিষ্ঠ শিবির নিকটে উপস্থিত হইলেন শিরি নিজের শরীর শ্ঠেনকে অর্পণ করিয়া সযত্বে কপোতকে রক্ষা করিলেন। এই আত্মোৎ্সর্গের ফলে শিবি-শরীর বিদীর্ণ করিয়া এক স্প্রসিদ্ধ লাঁবণ্যময় তনয় জন্মগ্রহণ করিল।

যে জ্যোতিত্বয় মহীয়ান পুরুষের তেজে সকল প্রকাশিত তেজঃসম্পন্ন হয়, সেই স্বপ্রকাশ, সর্বগত করুণা-নিধান বিশ্ব-বিধাত| উপযুক্ত সময়ে জ্ঞান-ভক্তির শান্তিময় বিমল জ্যোতিকে ধন্ধ-পরায়ণ সাধকের নিকটে প্রেরণ করেন। মধু-লুন্ধ সাধক তখন দেহ-মমতা! বিসর্জন করিয়া--তন্ু, মন, ধন সকলই সম্পূর্ণরূপে ভগবৎ-পদে সমর্পণ করিয়া নিশ্চিন্ত প্রশান্ত হন। তখন-_আত্ম-সমর্পন সম্যক্‌

৪৫

বেদ-বাণী

অনুষ্ঠিত হইলে, সাধক নশ্বর দেহের বিনিময়ে বিজ্ঞানানন্ৰ -প্রেমীনন্দ--নিত্যানন্দ নামক মনোৌমোহ্ন পুত্র-রত্ব লাভ করিয়া ধন্য হন কিন্ত একটা কথা আছে কর্তব্য কম্মাদি সম্পন্ন করিতেই হইবে যখন হাতে কোন কাজ থাকিবে না, তখনই না হয় ভগবানকে চিন্তা করা চলে। যখন কণ্ধ করিব, তখন ভগবচ্চিন্তা কিরূপে করিব? যদি তোমাদিগকে বলি, “একটা বরফের পুতুল গঞঙ্গা- জলে দীড়াইয়া গঙ্গা-জল দিয়া গঙ্গা-পূজা করিতেছে”; তাহা হইলে কি তোমরা আশ্র্ধ্যান্বিত হইবে? কিন্ত, ভাবিয়া দেখ, আমর প্রত্যেকেই কি প্রকারের এক একটি বরফের পুতুল নই ? ভক্ত-কবি গাহিয়াছেন ১-- “সে কোন্‌ জোছন! দেশ সইরে যে দেশের অভিধানে, “আমি” মানে “তুমিরে | “তুমি” মানে “আমি” বই অন্ত কিছু নাইরে সাকার ডুবিয়া মরে নিরাকার চুপে নিরাকার ফুটে উঠে সাকার রূপে ॥% যদি এক অনস্ত ভগবান ব্রহ্ষাগুব্ূপে প্রকাশিত হইয়া থাকেন যদি ক্রহ্ধাণড তাহাতে অধিষ্ঠিত হয়, এবং তিনি প্রত্যেক জীবে-_প্রত্যেক পদার্থে বিরাজ করেন; যদি তিনিই সকল শরীরে “আমি+ "আমি করেন, এবং ৪৬

জা

খা

বেদ-বাণী

প্রত্যেক শরীরে “আমি, সাজিয়া নিজকেই নানাপ্রকারে “তুমি” “সে” বলিয়া থাকেন; যদি সমুদ্রয় শক্তি__সমুদয় স্পন্দন_ সমুদয় পরিবর্তন-_সমুদ্ধয় কর্ম তিনিই এবং তাহারই অভিব্যক্তি, ইহা ঠিকৃ হয়; যদি তিনি ভিন্ন অপর কিছুরই অস্তিত্ব না থাকে ; তবে সর্বদা সর্বত্র ব্রহ্ম-দর্শন অসম্ভব হইবে কেন? | গীতায় পড়িয়াছ £-_- 'ত্রন্গার্পণং ব্রহ্ম হবিব্র্ধাগৌ ত্রন্মণা হুতম্‌ ব্রন্মেব তেন গন্তব্যৎ ব্রহ্মকম্সমাধিনা ॥৮ সকল বিষয় তিনি, সকল কম্ম তিনি, সকল ভাব তিনি--তিনি ভিন্ন যে কিছুই নাই--জগৎ তিনি, আবার জগৎ “তিনি”ময়। রামপ্রসাদ গাহিয়াছেন £-- “নগর ফের,মনে কর, গুদক্ষিণ শ্যামা মাকে। আহার কর,_মনে কর, আহুতি দেই শ্ঠামা মাকে শয়নে প্রণাঁম জ্ঞান, নিদ্রায় কর মাকে ধ্যান। যত শোন কর্ণপুটে, সবই মায়ের মন্ত্র বটে ॥% এই প্রকার ধারণা করিতে করিতে বহ্ুত্ব একত্বে পরিণত হয়, সমতা শাস্তি হৃদয় অধিকার করে, শোক- মোহ চিরকালের জন্য পলায়ন করে। একত্বই কি প্রেম নহে? যেখানে একত্ব, সেইখানেই ভালবাসা; যেখানে দ্বিত্ব, সেইখানেই বিরোধ। তাই, যখন

৪৭ চা

বেদ-বাঁণী

সাধন করিতে করিতে একত্ব হৃদয়ে বদ্ধমূল হয়, তখনই প্রেমগঙ্গার আবির্ভাবে মন নিত্যানন্দে মগ্ন হইয়া যায়। তখন সাধক কোলাহল-মুখরিত নগরেই থাকুন, আর জন- মানব-শূত্ত গিরি-কন্দরেই বাঁস করুন; কর্ধেই রত থাকুন আর সমারধি-স্থিতিই করুন; তিনি সর্বদাই মনাননদে ভগবানের পৃজাই করিতেছেন তাহার কাছে আর নবমী তিথি আসিতে পারে না-_তাহার সদ্ি-পৃজার শেষ হয় না।

তিনি যে কেবল নিজেই প্রেমময়ের পৃজাপরায়ণ হন, তা নয়; তিনি দেখিতে পান,--সমস্ত ব্রদ্মাণ্ড প্রত্যেক অণুপরমাণু প্রতিমুহূর্তে ভগবানের পুজা করিতেছে গঙ্গী- দেবী বরফে পরিণত হইয়া গঞ্গায় দীড়াইয়া গঙ্গা-জলে গঙ্গা-পুজা করিতেছেন ! প্রেমপূজার--এ আনন্দলীলার বিরাম নাই--বুঝি আদি-অন্তও নাই!

স্ব্গাশ্রম

২৫।২।১৪ চি |

৪৮

দুঃখের মত বন্ধু, ছুঃখের মত সহায়, দুঃখের মত হিতকারী আর কে আছে? কল্যাণময় ভগবানের দ্বারা প্রেরিত হইয়া যখনই সে আমার নিকটে উপনীত হয়, তখনই যেন তাহাকে প্রীতির সহিত, আদরের সহিত সম্বদ্ধিত করিতে সক্ষম হই। ্‌

দুঃখের মত কে.আমীকে অনলস কন্মপরায়ণ করে? কে আমাকে নিপুণ শক্তিমান করিয়া তোলে ? কে আমাকে অভিজ্ঞ বহুদর্শী করিয়া দেয়?

দুঃখের মত কে আমাকে ধৈর্ধ্য এবং অধ্যবসায় প্রদান করে? কে আমাকে শ্রদ্ধাবান, বীর্যবান উৎসাহসম্পন্ন করে? কে আমার শক্তি-মন্দিরের গুপ্তঘবার উদঘাটিত করিয়া দেয়? ৪৯

বেদ-বাণী

দুঃখের মত কে আমার প্রহরীর কার্য করে? কে আমার ভ্রম সংশোধন করে ? কে আমার ভ্রম নিবারণ করে?

ছুঃখের মত কে আমাকে নির্মল করে? কে আমাকে সত্পথে প্রেরণ করে ?

দুঃখের মত কে আমাকে উদারতা সহানুভূতি শিক্ষা দেয়? কে আমাকে পরার্থে আত্মদানে প্রেরণা করে ? কে আমাকে জীব-প্রেম, বিশ্ব-প্রেমে মাতোয়ারা করিয়া ভগবৎপদারবিন্দে উপনীত করায় ?

দুঃখের মত কে আমাকে তক্তিমান সমর্পিত-চিত্ত করে? কে আমাকে একাগ্র একনিষ্ঠ করিয়া দেয়?

দুঃখের মত কে আমাকে বিচারবান বৈরাগ্যবান করে ?"

৫০

বেদ-বাণী

কে আমাকে আমার জগতের শ্বরূপ-বোধ জন্মাইয়। দেয়? কে আমার কর্তব্য-বুদ্ধি জাগাইয়া দিয়া আমাকে শাস্তিপথে পরিচালিত করে?

দুঃখের মত কে স্থুখ-প্রাপ্তির হেতু হয়? কে ছুঃখ-বিনাশে সক্ষম ? €কে শান্তিনান করিতে সমর্থ?

তাই৮-যে কোন নামে, যে কোন রূপে, যে কোন বেশে, যে কোন অন্ুচরের সহিতই সে আমার সমীপস্থ হউক্‌ না কেন, সর্বদাই যেন তাহাকে সন্তোষের সহিত, শাস্তির সহিত গ্রহণ করিতে সমর্থ হই।

দুঃখই গ্রুবকে নিত্য-পদ প্রদান করিয়াছে। ছুঃখই প্রহনাদ-চরিত্রকে উজ্জ্বল করিয়াছে ছুঃখই যবন হরি- দাসকে বরণীয় করিয়াছে।

নল এবং রাম, সীতা এবং সাবিত্রী, যুিষ্টির এবং হরিশ্ন্্র_ছুঃখই ইহাদিগের মহত্ব ঘোষিত করিয়াছে।

ছুখই সাধককে সিদ্ধ করে। দুঃখই তপস্বীকে ঝষি করে। ছুঃখই আমাদিগের তগবং-স্থৃতি বজায় বাখে।

৫১

বেদ-বাণী

কস্তীদেবী বলিয়াছিলেন, “প্রভো ! আমার ছুঃখ-ছূর্দশার মেঘ কদাপি যেন অপসারিত করিও ন1।”

ভগবানের কৃপায় যে স্থধা-সমুদ্রের অধিকার লাভ করিব, তাহার তুলনায় জন্ম-জন্মান্তরের হঃখরাশিও তুচ্ছাতিতুচ্ছ এবং গোম্পদাপেক্ষাও নগণ্য তবে, ধর্ম-লাভের জঙ্য, শীত্তি-লাঁভের জন্য যে ছুঃখ-ভোগ অনিবাধ্য, তাহা আমাকে নিরুৎসাহ পশ্চাৎ্পদ করিবে কেন?

গ্রারন্ধ ভোগ করিতেই হইবে। যতটুকু ছুঃখ ভোগ করিতেছি, ততটুকু প্রারব খণ্ডিত হইয়া যাইতেছে ; আর সেই পরিমাণে আমি শাস্তির দিকে, আনন্দের দিকে অগ্রসর হইতেছি। তবে আর ছুঃখাগমে আমি উৎফুল্ল হইব না কেন? ্‌

তিনিই যখন সকল সাজিয়াছেন, তিনিই যখন সর্বত্র রহিয়াছেন, তখন দুঃখের মধ্যেও কেন তার প্রসন্ন বদন-_ কেন তার বরাভয়দায়িনী মধুর মৃত্তি দেখিব না?

সকলই যখন তাহারই রূপ, তখন বিশ্ব-মুত্তির সেবক আমি কেমন করিয়া ছুঃখকে প্রত্যাধ্যান করিব?

যে প্রেমময়ের দর্শনাভিলাষে আমি দিন-যামিনী গ্রতীক্ষা করিতেছি, তাহার অগ্রদৃতত্বরূপ ছুঃখরাশিকে কেন আমি সাদরে অভিনন্দিত করিব না?

ঘে মঙ্গলময়ের পাদমূলে আমি আত্ম-বিসঙ্জন করিয়াছি,

৫২

বেদ-বাঁণী

তাহারই প্রেরিত দুঃখাকার দর্শন করিয়া আমি বিষ হইব কেন?

অমৃত-সরোবরের দিকে পিপাসার্ভ আমি ব্যাকুল প্রাণে ছুটিয়াছি;_ছুঃখনূপ সামান্য ধুলিকণ! কোথায় আমার চরণে সংযুক্ত হইল, তা ভাবিবার, দেখিবার অবসর আমার (কোথায়?

সথখময়ের স্তুখ-স্থৃতি বক্ষে ধারণ করিয়া, প্রেমময়ের উপনেত্র চক্ষে ধারণ করিয়া যে বিশ্বমন্দিরে বিচরণ করিতেছে, তাহার নিকটে আর দুঃখের ছুঃখত্ব কি? সমুদয় ছুঃখ-কষ্টই যে তাহার নিকটে জুখময়, মধুময় হইয়। যায়।..

৮কাশীধাষ।

৫৩

অভ্যাস বৈরাগ্য

ওঁ

সর্ধনিয়ন্তা বিশ্ব-বিধাতা- জ্ঞানময়, প্রেমময় এবং সর্বব- শক্তিমান। সেই সর্বান্তর্ধ্যামী মঙ্গলময় সর্বদাই আমা- দ্িগের মঙ্গল সাধন করিতেছেন, সর্বদাই আমাদিগকে মঙ্গলের পথে, মুক্তির পথে পরিচালিত করিতেছেন। যাহাকে শুভ বলিতেছি, যাহীকে অশুভ বলিতেছি,-- আমরা বুঝি আর ন। বুঝি-_-সে সকলই আমাদের মঙ্গলের জন্য। বুঝি আর না বুঝি, জানি আর না৷ জানি, তিনি সর্বদাই আমাদিগের সমুদয় ভার বহন করিতেছেন, সর্বদাই আমাদিগের প্রয়োজনান্গরূপ সেবা করিতেছেন, সর্ব্বদাই

আমাদিগকে তাহার আশ্রয়ে রাঁখিয়। রক্ষা করিতেছেন।

তাহাতে বিশ্বাস স্থাপন করিয়া,তাহাঁর উপর নির্ভর করিয়া,_দেহ-মনের সমুদয় ভার তাহার প্রতি অর্পণ করিয়া, নিশ্চিন্ত নিরুদ্েগ হইয়া তার শান্তিময়ী চিন্তায় কাল কর্তন করিতে থাকিব।

এই পত্রধানির মধ্যে অভ্যান বৈরাগোর জন্য বিভিন্ন প্রকারের

বিচার আছে; তাহার সকলগুলিই প্রত্যেকের জন্ত নয়। বিভিন্ন প্রকৃতির সাধকের জন্ত বিভিন্ন প্রকারের বিচার গ্রহ্ণীয়।

৫৪

বেদ-বাণী

আমাদের যা*-কিছু প্রয়োজন, তৎসমুদয়ের উৎকৃষ্টতম ব্যবস্থা যখন তিনিই করিতেছেন, তখন আর আমাদিগের অন্য কর্ধের আবশ্যক কি? নিশি-দিন তারই মহিমা স্মরণ করিব।

অভিমান-বশে য| করি, তাতেই বন্ধন-গ্রস্ত হই; তবে আর আমি অভিমানকে, কতৃত্ব-বুদ্ধিকে প্রশ্রয় দিব কেন?

ভগবানই সকল কর্মের কর্তা আমার আবার করব

কি? আমার আবার কর্তব্য কি? কিনি থাকে, তাহা একমাত্র ভগবৎ-স্মরণ

সর্বশক্তিমান বিশ্ব-সম্রাট কি মরিয়া গিয়াছেন ? তিনি

কি আমাকে বিশ্বরাজ্যের শাসন-ভার অর্পণ করিয়াছেন ?

তিনি কি আম! অপেক্ষা কম বুদ্ধিমান এবং কম সমর্থ?

জগতের প্রতি কি তিনি আমা অপেক্ষা কম প্রেমসম্পন্ন ? ৫৫

বেদ-বাণী

তবে,--কেন আমি বিশ্ব-রাজ্যের ব্যবস্থার পরিবর্তন-প্রয়াসী হইব? কেন আমি অভিমান-বশে পাষগু-দলনে বদ্ধ-কটি হইব? কেন আমি নিজের কর্তব্য বিস্বৃত হইয়া! জগতের শাস্তিভঙ্গ করিব?

আমার উপরে এবং অন্যের উপরে--সমগ্র জগতের উপরে স্ুখ-ছুঃখের, ভাল-মন্দের ঘাত-প্রতিঘাত অবিরাম চলিতেছে ।, কে ইহাকে নিবারণ করিবে? কে ইহার গতিকে বিন্দুমাত্রও পরিবস্তিত করিবে? বৃথাই আমার চাঞ্চল্য, বুথাই আমার দাম্ভিক যত্ব। একটা সামান্য পিপীলিকা-দংশনে, একটা সামান্য ফোঁড়ীর যন্ত্রণায় আমি কাতর হই; আমার আবার শক্তির অভিমান ? যে সর্ধবদ] অপরের ভয়ে ভীত সম্মত, যে সর্বদা অপরের অন্ুগ্রহ-লাভের প্রয়াসী, সেই আমার আবার শক্তির অভিমান? যে নিজকে নিজে রক্ষা করিতে পারে না, যে ইচ্ছা করিলেই নিজের শরীর মনের মন্দটুকু দূর করিতে সমর্থ হয় না, যার ইচ্ছার বিরুদ্ধে সর্বদাই সকল কর্ম সম্পন্ন হইতে পারে, সেই আমার আবার কর্তৃত্বাভি- মান? দূর হউক্‌ আমার দত্ত, দূর হউক্‌ আমার অহঙ্কার, দূর হউক আমার অভিমান-প্রস্থত কর্ন সমুদ্রয়। খার ৫৬

বেদ-বাণী

অঙ্গুলি-সঞ্চালনে অন্ত বিশ্ব-্রক্মাণ্ড সর্বদা পরিচালিত হইতেছে, তাহাতে আত্ম-বিসঙ্জন করিয়া তন্ময় হইয়! থাকিব।

পাহাড় ছাড়িয়া বালির বাধের উপর দালান তুলিব কেন? ভগবানকে ছাড়িয়। জগতের উপর নির্ভর করিব কেন?

মিছরি ফেলিয়া কে গুড় খাইবে? ভগবৎ্-স্মরণ মুক্তি- প্র, বিষয়-স্মরণ বন্ধন-প্রদ ভগবৎ্-স্মরণ পরিত্যাগ করিয়। আমি বিষয়-স্মরণ করিব কেন?

গে

সমুদয় ভোগ্যবস্ত একত্রিত হইয়াও যখন আমাকে ব্রদ্মানন্দের সমান স্থখ দান করিতে পারে না, বিষয়ারণ্যে ভ্রমণ বন্ধ না হইলে যখন ব্রদ্ষানন্দ মিলিবে না, তখন ভগবচ্চিন্ত। পরিত্যাগ করিয়া আমি বিষয়-বাসনা করিব কেন? ব্য ৫৭

বেদ-বাঁণী

অদ্ভীতের অনন্ত জন্মে কত বিষয়-সেবাই করিয়াছি, কিন্তু তাহার ফলে জন্ম-বন্ধ ঘোচে নাই। তবে আর জন্মে বিষয়-সেবানিরত থাকিয়। শাস্তি-নাথের সেব! পরিত্যাগ করিব কেন? ১৩০

আমার মন যখন একাটি-মাত্র পদার্থকেও আশ্রয় দান করে, তখন দশ দ্রিক হইতে পঞ্চাশটি পদার্থ মুখ ব্যাদান করিয়া! তাহাকে গ্রাস করিতে আইসে। তবে আর আমি বিষয়-গত-চিত্ত হইয়া হৃদয় হইতে হৃদয়ের ধনকে তাড়াইয়! দিব কেন? ১১

অনিত্য বিষয়ে যার সন্তোষ, তার নিত্যানন্দে প্রয়োজন কি? নিত্যানন্দের প্রয়োজন-বোধ যাহার নাই, তার শান্তি লাভের সম্ভাবনাই বাকি? আমি ক্ষুদ্র বিষয়ে লুব্ধ হইয়া ভূমানন্দকে পরিত্যাগ করিব কেন?

১২

যেটুকু সুখ, যেটুকু শাস্তি পাইতেছি, তাহা যাহার ৫৮

বেদ-বাণী

নিকট হইতে পাইভেছি। ছুঃখ-কষ্টময় সংসার-পথে যিনি আমার একমাত্র আশ্রয় অবলম্বন; যিনি সর্বদা কোলে, করিয়া আমাকে রক্ষা করিতেছেন; যিনি সর্বদাই আমাকে শান্তির পথে পরিচালিত করিতেছেন; সত্য-লাভের পক্ষে ধাহার কপাই আমার একমাত্র আশার স্থল; ধাহার করুণা. আমি কতবার উপলব্ধি করিয়াছি; যিনি আমার আপনার হইতেও আপনার সেই অন্তর্্যামী হৃদয়-দেবতাকে বিস্থৃত হইয়। আমি কোন্‌ প্রাণে বিষয়-পঞ্চককে হৃদয় দান করিব?

১৩

যাহার প্রসাদে শুভবুদ্ধি প্রাপ্ত হইয়াছি, ধাহার কৃপায় সাধন-পথে অগ্রসর হইতেছি, তাহার-ইচ্ছায়-কিছু-সিদ্ধাই- ও-সাংসারিক-হুখ-স্থৃবিধা লাভ করিয়া তাহাকেই ভুলিয়া থাকিব?

ভোগ যখন অশান্তি দূর করিতে পারে না, ত্যাগই বখন শান্তিলাভের একমাত্র উপায়, তখন আমি ত্যাগী না হইয়া! ভোগী হইব কেন? ১৫

৫৯

বেদ-বাণী

যেমন কর্শ, তেমনই মজুরি তবে ভজন ছাড়িয়া অন্য কশ্মে প্রবৃত্ত হইব কেন ?. |

১৬

আমার অসৎ কম্ম অসৎ চিস্তা যেমন আমাকে অবনত করে, তেমন জগতৎকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে; তবে €কেন আমি আত্ম-চিস্ত/-পরাজ্মুখ হইয়া বিষয়-বাঁসনায়, দেহ- বাসনায়, স্বার্থ-বাসনায় নিযুক্ত হইব? ১৭

্রহ্মত্বই আমার স্বরূপ, ত্রহ্মত্বেই আমার পুর্ণত্ব, ব্রন্মেই আমার স্থিতি, ত্রদ্দেই আমার আমিত্ব, ব্রহ্মত্বেইে আমার মুক্তি। তবে কেন আমি আত্ম-বিস্ৃত হইয়া পঞ্চভূতকে “আমি, বলিয়া প্রতারিত হইব ?

১৮

যে অন্তঃকরণ লাভ করিয়াছি, ভগবচ্চিন্তাতেই ইহাঁর সার্থকতা যে শরীর প্রাপ্ত হইয়াছি, ভগবানের সেবাতেই ইহার সার্থকতা তবে কেন আমি ধন্মনিষ্ঠ না হইয়া

৬০

বেদ-বাণী পশু -বৃতিতে মানব-জীবন কর্তন করিব ?

১৯

মৃত্যু-কালের চিন্তা পরকালকে নিয়ন্ত্রিত করিবে, কখন মৃত্যু আসিবে, তাহারও স্থিরতা নাই বিষয়-চিস্তার নহিতই আমাকে যদি সে গ্রাস করে, তবে ভবিষ্যৎ অন্ধকারময়! তাই, বর্তমান কালে কিছুতেই আমি ভগবানকে ভুলিতে পারিব না ১৬০

এখন যদি বিষয়-চিস্তা করি, তবে সেই চিন্তার অভ্যাসে মৃত্যুকালে আমার মন বিষয়াকাঁর ধারণ করিতেও পারে। তাই, বিষয়-চিন্তা সর্বদাই বর্জনীয়।

পবিত্র জীবন যাপন করিতে পারিলে অকুতৌভয়ে, হাসিতে হানিতে, আনন্দের সহিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করিতে পারিব। তবে আমি কেন সর্বদা “শুদ্ধমপাঁপ- বিদ্বম্ঃ নিরগ্রনে মনঃসমাধান করিব না ? ২২ ) ৬১

বেদ-বাণী

একাই সংসারে আদিয়াছি, একাই সংসার হইছে বিদীয় লইব। অন্তের সহিত সম্দ্ধ গাতাইয়াই এই অশাস্তির জাল প্রস্তত করিতেছি মোহ-জাল ছিন্ন হউক্‌ আসক্তির বন্ধন মোচন হউক্‌, আমি শাস্ত-মনে আত্ম চিন্তায় রত হই।

২৩

কেহ ভাল বা মন্দ, তাঁতে আমীর কি আসে যায় আমি কেন বুথ সে চিন্তায় আত্মহারা হইব? আছি 'সর্ধদাই আত্ম-দেবের পূজায় নিযুক্ত থাকিব

২৪

ভগবানই সকল সাজিয়াছেন, তিনিই সকল করিতে" ছেন। তবে আর সমালোচনা কেন? তবে আর মনের চাঞ্চল্য কেন? তবে আর অভিমান-প্রবাহ কেন? তবে “আর মন সমরস থাকিবে ন! কেন? ২৫

“সর্বং খৰিদং ব্র্ধ |” এক তিনিই আছেন। তিনিই ৬২

বেদ-বাণী

সকল। সকলই তিনি। তবে আর জগৎ আমার সাধন- পথে কিরূপে ঈ্রীড়াইবে? তবে আর আমার সর্বদা ব্রহ্গ- স্মরণ কেন অসম্ভব হইবে? যখনই যে বিষয়ে মন যাইবে, তখনই তাহাকে ত্রন্ষময় মনে করিয়া মনকে ভগবন্ময় করিব।

২৬

তার জগৎ লইয়া তিনি ঘেমন' ইচ্ছা খেলুন। তা লইয়া! আমি মাথা ঘামাই কেন? আমি কেবল তাকে ডাকিব, তাঁকে ভাবিব, তীতে ডুবিয়া যাইব।

জগতের আবার গুরুত্ব কি? জাগতিক ব্যাপারের জন্ত আমার অশান্তি উপস্থিত হইবে কেন? সর্বত্র ভগবানের রসময় লীলা-বিলাস দর্শন করিয়া অন্গদিন তাহাতে ডূবিয় থাকিব। ২৮

যখনই কণ্ধ-প্রবৃত্তি জাগে, যখনই চিস্তা-তরঙ্গ মনকে আলোড়িত করে, অমনি সে প্রবৃত্তির বেগ, সে তরন্বের ৬৩

বেদ-বা

চাঞ্চল্য আত্ম-চিস্তা দ্বারা বন্ধ করিব না কেন? সস

যদি কখনও বিষয়-ব্যবহার করিতেই হয়, বিষয়ের বিষয়ত্ব বর্জন করিয়া, ব্ষিয়ে ভগবদ্বর্শন করিয়1, বিষয়- ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গেই ভগবৎ-পরায়ণ হইব

০০

বর্তমানের সঙ্কল্প-কল্পনা, বর্তমানের বিষয়-গ্রহণ কেবল যে বর্তমান কালকেই নষ্ট করে, তা নয়; ভবিষ্ততের সাধন- ভজনেরও অন্তরায় হইবে তাই, অস্তঃকরণকে, ইন্ছিয়- গুলিকে সর্বপ্রযত্বে বশীভূত করিয়া, অন্তমু্থ করিয়া সর্বদা ভগবানের ধ্যান করিব

৩১

আমি *নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাগুরচলোহয়ং সনাতিনঃ1৮ আমি কখনও কিছুই করি না। “গুণ গুণেষু বর্তাস্তে কর্মের সহিত আমার কি সম্পর্ক? যাহা হয় হউক্‌।

৬৪

বেদ-বাঁণী

কেন? ৩২

অনন্ত শরীর, অনন্ত ব্রদ্মা্ড আমার মধ্যে মায়া-বশে স্পন্দিত হইতেছে ইহাদের সহিত আমার কি সম্বন্ধ? এগুলি আমার মধ্যে থাকিয়াও নাই। আমি নির্বিকার পরমাত্ম!।

৩৩

রজ্ছুতে যেমন সর্প-ভ্রম, ব্রদ্েও তেমনি জগদ্ভ্রম হইতেছে জগতের আবার সত্যতা কি? সত্য-ভাবনা পরিত্যাগ করিয়৷ মিথ্যা-ভাবন! করিব কেন?

৩৪

আমি শরীর নই, আমি আত্মা তবে আর আমি দেহ-বাসনায় অস্থির হইয়া আত্ম-চিন্তা বিসঙ্জন দিব কেন?

৩৫

যখন আমি ব্র্মনিষ্ঠ থাকি, তখন আমি কি মহান্‌! ৬৫.

কন্ধ-চিন্তায় চঞ্চল হইয়৷ আমি ধর্ম-চিস্তা পরিত্যাগ করিব রি রর

বেদ-বাণী

আ'র যখন বিষয়াসক্ত হই, তখন চৌদ্দ-পোয়া-পুটুলিতে- আবদ্ধ আমি কত ক্ষুদ্র, কত ছূর্বল, কত ছুর্দশীপন্ন তবে আর আমি নিজকে নিজে ছোট করিব কেন? নিজের পায়ে নিজে কুড়ুল মারিব কেন? “বড় আমি না হইয়া “ছোট আমি, হইব কেন? চৈতন্য-স্বরূপ না হইয়। বিষয়ের দাস হইব কেন?

৩৬

ব্যক্তি-বিশেষকে সন্তষ্ট করিবার জন্যই কি আমি জন্ম- গ্রহণ করিয়াছি? তবে আমি লোক-রঞ্রনের নিমিত্ত শ্রেষ্ঠতম কর্তব্য ধন্মনিষ্ঠাকে পরিত্যাগ করিব কেন?

৩৭

সংসারে যাহাদিগকে “আপন” বলিয়! জানিতাম, তাহা- দিগকে পরিত্যাগ করিয়া যে আমি প্রেমময়ের অনুসন্ধানে বহির্গত হইয়াছি, সেই আমি আবার কোন্‌ মুখে, কোন্‌ উদ্দেশ্তে, কোন্‌ বিবেচনায় দেহ-স্থখের জন্য, যশ-মানের জন্য, লোক-রঞ্জনের জন্য নানা! বিষয়ে মনোযোগী হইয়! লক্ষ্য-ভষ্ট হইব ? ৩৮ ৬৬

বেদ-বাণী |

সর্বনস্ব-দক্ষিণ বিশ্বজিৎ-যজ্ঞ সম্পাদনে ব্রতী হইয়া! ষে আমি মৃত্যু্নয়ী হইবার আশা! করিতেছি, সেই আমি এক খণ্ড কৌগীনের অপহরণে চঞ্চল হইব কেন, প্রতিপত্তির ইচ্ছায় ব্যতিব্যস্ত থাকিব কেন, লাঞ্চনার ভয়ে সশঙ্ক রহিব কেন, ক্ষণিক আরামের লোভে ছুটাছুটি করিব কেন, বন্ধু-বিয়োগে কাতর হইব কেন, সমুদয় জাগতিক ব্যাপারে উদাসীন থাকিয়া শাস্ত মনে ভগবচ্চিস্তা করিতে পারিব না কেন?

৩৪

দুঃখ, দৈন্য সংসারে অপরিহাধ্য যত সহ করা যায়, ততই ছুঃখের ছুঃখত্ব কমিয়া যাঁয়। যত অস্থির হইবে, ততই দুঃখের ছুঃখরূপত্ব বাড়িবে। তবে আর আমি ছুঃখ- চিন্তায় অধীর হইয়া নিত্য-চিত্ত। বিসজ্জন করিব কেন?

৪০

অমৃতত্ব-লাভই যখন আমাদিগের লক্ষ্য, ভগবদ্দর্শনই

যখন মানব-জীবনের শ্রেষ্ঠতম অধিকার, শান্তি-লাভের

চেষ্টাই যখন আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ কর্তব্য এবং পরম পুরুষার্থ,

তখন সামান্য ছুঃখ, কষ্ট এবং অস্থবিধার ভয়ে কেন ৬৭

বেদ-বাঁণী

আমি ভগবচ্চিন্তা বজ্জন করিয়। ক্ষণিক স্থুখের চেষ্টায় নিষুক্ত হইব?

৪১

কোন্‌ কর্ম ধর্ম অপেক্ষা বড়? কোন্‌ কম্ম সাধন অপেক্ষা অগ্রে নিষ্পাদ্ঘ ? তবে, এখনই আমার সম্মুখে সাধনের যে স্থযোগ সুবিধা উপস্থিত, তাহার সদ্ব্যবহার না করিয়া বর্তমান সময়ে আমি অন্য করে প্রবৃত্ত হইব কেন? ৪২

বর্তমানে সাধনের যে স্বযোগ আছে, তাহা যে ভবিস্যাতে মিলিবে, তার নিশ্চয়তা কি? তবে আর সাধন-ভজন ভবিষ্যতের জন্য রাখিয়া এখন বিষয়-কন্মে মনোনিবেশ করিব কেন?

৪৩

শান্তিননাভই যদি আমার জীবনের লক্ষ্য হয়, লক্ষ্য- সিদ্ধির জন্য যদি আমার একান্তিক বাসনাই থাকে, তবে

৬৮

বেদ-বাণী

আমি লক্ষ্য-সিদ্ধির প্রতিকূল কশ্মে নিযুক্ত হইয়া সাধনার--. সিদ্ধি-লাভের বিশ্ব ঘটাইব কেন?

৪৪

ধর্শ-লাভ করিবার পূর্বে অন্ত কর্শে আমার কি অধিকার, অন্য কর্ধে আমার কি প্রয়োজন? ৪৫

এই মুহূর্তে ভগবানের নাম না! করিয়া আমি অন্ত কথা বলিৰ কেন? এখন ভগবানের রূপ ন! দেখিয়া অন্ত রূপ দেখিব কেন? বর্তমানে ভগবানের মাহাত্ম্য চিন্তা ন! করিয়া বিষয়-চিন্ত। করিব কেন?

৪৬

যখন অন্যের দোষের দিকে দৃষ্টি পড়ে তখন কেন আমি নিজের দৌষ দর্শন করিব না, কেন আমি নিজে নির্দোষ হইয়! ভগবানের সাক্ষাৎকার-লাভের অধিকারী হইব না? ৪৭

৬৯

বেদ-বাঁণী

কপটত ধশ্ম-সাধনের প্রধান অন্তরায় তবে কেঃ আমি চতুরতার আশ্রয় গ্রহণ করিয়া ভগবান টি সরিয় যাইব?

৪৮

কেন আমি শাস্ত্রের মর্যাদা লঙ্ঘন করিব? কেন আমি শান্ত্রালোকে-_সাধনালোকে সমগ্র জীবনকে উদ্ভীসিত নাকরিব? কেন আমি মিথ্যা জগতের মায়াময় পদার্থ- গুলিতে কৌতৃহলসম্পন্ন হইব? কেন আমি খধি-মুনি- গণের উচ্চাদর্শের অন্নকরণ ন| করিব? কেন আমি শ্রেষ্ঠতম পদবীতে আরোহণের চেষ্টা না করিব? কেন আমি রোগ শোকে, বাধা বিশ্বে, ভয় সংশয়ে, আলম্ত সাময়িক অরুতকাধ্যতায় উদ্যমশূন্য হইয়া সিদ্ধি- লাভের পূর্ধেই সাধন-সমর পরিত্যাগ করিব? সেই আফলোদয়-কশ্মা টিটিভের * মত, অধ্যবসায় সহকারে, আমিও কেন সকল সময় যথাসাধ্য ধন্ম-সাধনে অতিবাহিত

* এক টিটিভ-দম্পতি একবার বিদেশে যাইবার সময়ে তাহাদের ডিম- গুলি সমুদ্রের তীরে এক গর্ভে রাখিয়৷ গিয়াছিল। ডিমগুলি সমুদ্র ভাঙ্গিয়৷ ফেলিতে পারে, টিট্রিভীর এই আশঙ্ক। বুঝিয়! টিট্রিভ সমুদ্রকে শুনাইয়াই বলিয়া! গেল, সে তাহ। হইলে সমুদ্র শোষণ করিবে নিশ্চয়। সমুন্র কিন্তু কৌতুহলী হইয়! ডিমগ্ডলি লুকাইয্! রাখিল। কিছু দিন.

৭০

বেদ-বাণী

নাকরিব? কেন আমি শ্রদ্ধা-হীন, বী্ধ্য-হীন, ধৈর্য-হীন, উৎসাহ-হীন হইব?

৪৯

সময় কম, কাজ অনেক। আমার কি অন্য দিকে মন দিবার অবসর আছে? ৫৩ স্ব্গাশ্রম;

১৭1১১১১৭

পরে ফিরিয়৷ আসিয়! টিট্িভ ডিম না পাইয়। রাগে তার কথামত সমুদ্র শৌণ করিবার জন্য ঠোটে করিয়। এক এক বিন্দু জল লইয়া তীরে ফেলিতে লাগিল। টিটিভী শোকাচ্ছন্ন! হইলেও অবিলম্বে আসিয়া স্বামীর সহায়তা আর্ত করিল। কতক্ষণ পরে একবীক চড়ই পাখী আসিয়। এই কা দেখিয়। প্রথমে বিস্ময়ে হাসিয়। উঠিল, কিন্ত পরক্ষণেই সব শুনিয়। জাত-ভাইদের প্রতি কর্তব্য করিবার জন্য গম্ভীর ভাবে তাঁহাদের কাজে যৌগ দ্িল। এই রকম করিয়! ছোট বড় অনেক গাঁখী ঝ"কে ঝাঁকে আসিয়। তাহাদের সাহায্যে লাঁগিয়! গেল। সকলের সনবেত-চেষ্টায়ও যে জল উঠিতেছিল, তা'তে সমুদ্রের ভারী আনন্দ হইতেছিল। এমন সময়ে বিহঙ্গমরাঁজ মহাঁবল গরুড় আকাশ- পথে যাইতে যাইতে এই ব্যাপার দেখিয়। নামিয়।৷ আসিলেন এবং সমস্তট| গুনিয়। টিট্রিভের সত্যপ্রতিজ্ঞতা, আত্মশক্তির উপর শ্রদ্ধ! এবং অধ্যবসায় দর্শনে অত্যন্ত শ্রীত হইয়! পক্ষী-জীতির অবমাননার সমুচিত সাজা দিবার জন্য সমুদ্র-শোষণ আস্ত করিলেন। সমুদ্র ভয়ে ভিমগুলি টিটিভকে ফিরাইয়! দিয়। ক্ষম1 চাহিয়। তবে গরুড়কে নিরস্ত করিয়া আপনাকে বাঁচাইল।

৭১

বিজ্ঞানীর অবস্থ।

্বয়ঞ্জোতি চিন্মণির দিব্য প্রকাশে যে সকল ভক্তিমানের হৃদয়-কন্দর উদ্ভাসিত হয়, তাহারা সমগ্র বিশ্বকেই এক “নব রাগে রঞ্জিত? দর্শন করেন। নিরগ্রনকে সর্বত্র প্রাপ্ত হইয়া তীহারা নির্মল হন; তীহাদিগের চক্ষে জগৎও নির্মল হইয়া! যায়। তীহাদিগের নিকটে পাঁপ নাই, দোষ নাই, বিদ্বেষ নাই। তাহাদের নিকটে সমুদয় জলই গার্গ- বারি, সমুদয় স্থলই বৃন্দারণ্য, সমুদয় জীব-শরীরই দেব- বিগ্রহ এবং সমুদয় ব্রদ্মাগই ভগবানের মন্দির মহাত্ব। অ্নদাসের নাম শুনিয়াছ। আমরা যাহাকে ভাল বলি, আমরা যাহাকে মন্দ বলি, এমন সহজ সহ নর-নারী তাহারও দৃষ্টি”পথে পতিত হইয়াছে, কিন্তু তিনি তাহাদের মধ্যে দোষ-গুণ দেখেন নাই। তিনি দেখিতেন--প্রত্যেক হয়েই তাহার প্রিয়তম বিরাজমান রহিয়াছেন। তাই, যখনই কোন মানবনৃষ্তি তাহার নয়ন-গোচর হইত, তখনই তিনি প্রেমার্্রহদয়ে তাহার সম্মুখে আরতি করিতেন। তিনি অন্থভব করিতেন-_এক অন্তধ্যামী ভগবানই সকল শরীরে শরীরী, সকল দেহের কর্তা এবং নকল ইন্জরিয়ের

৭২

বেদ-বাণী

নিয়ামক। এই সকল মহাপুরুষ কেবল যে জীব-শরীরেই ভগবানের প্রকাশ উপলব্ধি করেন, ত। নয়; তাহারা জড়ের মধ্যেও চৈতন্-স্বরূপকে প্রাপ্ত হন। মহাত্মা তুলসীদাস-বংশাবতংস স্বামী রামতীর্থজী লিখিতে লিখিতে হস্তস্থিত পেন্সিলটার দিকে তাকাইয়! ভাবে বিভোর হইতেন এবং সেইটিকে বারশ্বার চুম্বন করিতে থাকিতেন। এই যে অনন্ত কম্ম-আ্োত, এই যে অনন্ত ভাঁব-প্রবাহ”+-- সকলকে তাহারা প্রেমময়ের লীলা-বিলাস বলিয়াই অবগত হন। কম্মের মধ্যেও বিশ্বরূপকে পূর্ণরূপে অনুভব করিতে সমর্থ হইয়াছিলেন বলিয়াই, গাজীপুরের মহাত্মা পওহাঁরী বাবা যে্ূপ প্রেমের সহিত, যেক্ধপ মনোযোগের সহিত ভজন করিতেন, ঠিকৃ তেমনই প্রেম, তেমনই মনোযোগের সহিত থালা-বাটাও পরিষ্কার কারতেন | এই বিজ্ঞানবান মুনিগণের প্রজ্ঞা-নেত্র সর্বদাই সর্বাধার অবিনাশী £চতন্ত-দেবের উপর স্ন্ত-দৃষ্টি থাকে তীহারা দেখিতে পান-__ধীর, স্থির, শান্ত চিৎ-সমুদ্রের ভিতরে অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড, অনন্ত পরমাণুপুগ্ত, অনন্ত শরীর, অনন্ত ভাব সর্বদা ক্রীড়া করিতেছে তাহারা বোধ করেন যে নিত্য, সর্বগত চিৎ-সমুদ্রই স্ব-ন্বরূপে সর্ধ্দ! পূর্ণরূপে বিরাজমান থাঁকিয়াও স্বীয় অনন্ত-শক্তি-বলে এই অনিত্য, অস্থির নাম-রূপাত্মক জগত্রূপে প্রকাশিত হইয়াছেন। তাহারা জানেন যে বিশ্বকম্মা ভগবানই সকল যন্ত্রের যন্ত্রী, সকল শরীরের কর্তা

৭৩

বিজ্ঞান সাধন-লভা

সাধন নিরবচ্ছিন্ন হওয়া চাই

বেদ-বাঁণী

এবং সকল কর্মের নিয়ন্তা। তীহারা অনুভব করেন-_- তিনিই সকল শরীরে বক্তা, তিনিই সকল শরীরে শ্রোতা, তিনিই সকল শরীরে ভোক্তা এবং তিনিই সকল শরীরে জ্ঞাতা এবং ভ্রষ্টা; একমাত্র তিনিই ছিলেন, একমাত্র তিনিই আছেন, একমাত্র তিনিই থাকিবেন; তিনি ভিন্ন অন্ত কিছু কখনও ছিল না, তিনি ভিন্ন অন্য কিছু এখনও নাই এবং ভবিষ্যতেও থাকিবে না; যা কিছু, সকলই তিনি, সকলই তার, সকলই তাহাতে এবং তিনিই সকলে

এই যে উপলব্ধি, এই যে অপরোক্ষান্ুভৃতি, ইহা মহা- পুরুষগণ জন্মকালেই প্রাপ্ত হন না। তীহারাও তোমার আমার মতই থাকিয়া সাধন-সহাঁয়ে পরিশেষে জ্ঞান-প্রেমের উচ্চতম পদবীতে আরোহণ করিয়া থাকেন। মহাত্ম! বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী মহাশয় একদিন বলিয়াছিলেন, “আমিও তোমাদেরই মত ছিলাম আমারও কত দুর্বলতা ছিল। কিন্তু সাধন করিতে করিতে ভগবানের কৃপা লাভ করিয়াছি। এখন এমন অবস্থায় আছি যে পূর্বের দুর্বলতাগুলি কেমন করিয়া আমার মধ্যে ছিল, তা৷ ভাবিতে- এখন বিস্ময় হয়। সাধন-বলেই আমি এরূপ হইতে পারিয়াছি; সাধন বলে তোমরাও এইরূপ হইতে পারিবে ।” উৎসাহের সহিত সাধন করিতে হইবে, সিদ্ধি লাভ পর্য্যন্ত সাধনে লাগিয়া থাকিতে হইবে। উপরোক্ত ভাগ্যবানদিগের হৃদয়-পঙ্বজ প্রেম-প্রবাহের মধুময় প্লাবনে - ৭8

বেদ-বাঁণী

যেমন ভাবে অভিষিক্ত হইয়াছিল, আমাদিগের হৃদয়কেও ঘদি তেমন ভাবে প্রেম-রসে আপ্লুত করিতে চাই, তৰে উহাদিগের প্রত্যক্ষের বিষয়ীভূত সত্য-স্বরূপকে দ্বিবানিশি অনুধ্যান করিতে হইবে। তাহাকে ভাবিতে হইবে, তাহাতে জুবিতে হইবে, তাহার মধ্যে নিজকে হারাইয়া ফেলিতে হইবে ।॥ কুন্ধুর যখন রুটি লইয়! পলায়ন করিতে- ছিল, তখনও বামদেবের * সর্ধবত্র-ত্রক্ম-দৃষ্টি অব্যাহত ছিল বলিয়়াই সে দিন তাহার জীবন চিরকালের তরে ঘন্য হইয়াছিল। পক্ষান্তরে, যে দিন রামদাস ** মহিষ-মৃস্তিতে

* দ্িনমীন তপস্তাঁয় যাপন করিয়। সন্ধ্যায় বামদেব ভগবানকে ভোগ নিবেদন করিয়া প্রসাদ পাইতেন। এক সন্ধ্যায় ভোগের জন্য কুটিতে খী মখিতেছিলেন, এমন সময়ে একট! কদাকার কুকুর আসিয়। এক- খান! রুটি লইয়! পলাইয়। গেল। রুটিখাঁনাতে ঘী মাথান হইয়াছিল নঃ বামদেব খী'র ভীঁড় হাতে করিয়। কুকুরের পিছন পিছন দৌড়াইতে লাগিলেন আর বলিতে লাগিলেন “ওরে ! দ্রীড়া, ঘীট! মাখিয়ে দেই।” কিছুদূর গিয়। আর কুকুর দেখ! গেল না। বামদেবের সম্মুখে প্রসন্ন" মৃন্তি তাহার উপাস্ত দেবতা, শ্মিতমুখের একপ্রীস্তে রুটিখান। রহিয়াছে দেবতা আশীর্ধ্বাদ করিয়া বলিলেন, “বামদেব ! তোমার সাধন! পূর্ণ হইঙ্লাছে, তুমি সব্ব্ৃভৃতেই আমাকে তুল্যরূপে ভালবসিতে শিখিয়াছ।”

+ একদ। সাধু রামদাস আপন আশ্রমের নিকটেই মহাজ্ম। তুলসী- দাসের দর্শন লাভ করিয়! তাহাকে ধরিয়! পড়িলেন, “মহারাজ ! আমাকে কূপ করিয়! ভগবানকে দেখাইতে হইবে ।” তুলসীদাস কহিলেন “আচ্ছা কাল ছুপুরে ভগবান তোমার আশ্রমে যাঁবেন।” রামদাস ৭৫

লাধন

বেদ-বাঁণী

ভগবদ্দর্শন করিতে অসমর্থ হইয়াছিলেন, সেই দিন সমীপাগতা কৃপাময়ী সৌভাগ্য-লক্মীর প্রসন্গতা লাভে বঞ্চিত হইয়া কি পরিতাপেই না দগ্ধ হইয়াছিলেন! তাই বলিতেছি, যদি জীবনকে কৃতার্থ করিবাঁরই বাসন! থাকে, তবে একটু সময়ও নষ্ট করিতে হইবে না সর্বদাই ভগবচ্চিন্তা করিতে হইবে, সর্বদাই কোন না কোন প্রকারে ভগবানে মন লাগাইয়া রাখিতে হইবে

যদি কখনও ভাগ্যবলে কোন তত্বদর্শী প্রেমিকের সঙ্গ- লাভ করিতে পার, তাহার সেবা! কর এবং তাহার নিকট হইতে ভগবানের মাহাত্ম্য শ্রবণ কর। উহার চরণোপাস্তে

আশ্রমে আদিয়! কতরকম করিয়! আশ্রম সাঁজীইলেন এবং ভগবানের

প্রসাদ পাইবার জন্য সকলকে নিমন্ত্রণ করিয়। আসিয়া বিবিধ ভোগ সম্ভার প্রস্তুত করিলেন। এদিকে তো পরদিন দুপুর প্রায় অতীত হইয়। গেল, ভগবান আর আঁসিতেছেন না! রাঁমদাঁস উৎকঠিত হইয়। ঘর- বাহির করিতেছেন, এমন সময়ে চীৎকার উঠিল, এক মহিষ আঁসিয়। সব খাইয়া ভাঙ্গিয়! চুরিয়! ফেলিতেছে। রামদান তাড়াতাড়ি এক লাঠি দ্বার! মহিষকে উত্তমরূপে প্রহার করিয়। তাড়াইয়। দিলেন, এবং সন্ধ্যার সময়ে স্ুব্ব-চিত্তে আসিয়া তুলসীদাসকে তাহার ছুর্ভাগ্যের কথ! বলিয়। নিন্দা করিলে, তুলসীদাস কহিলেন, "ভগবান আসিয়। বলিয়! গিয়াছেন, তিনি ছুপুরেই তৌমার . আশ্রমে গিয়াছিলেন, কিন্তু তুমি তীহাকে মারিয়া তাড়াইয়। দিয়াছ।” রামদাঁস কীদিতে লাগিলেন, “ভগবান কতরূপেই কতমময়ে অভাগাদের কাছে আসিয়! থাক! হায়! অগ্ধ আমরা তোমীয় চিনিতে পরি না।” ৭৬

বেদ-বাণী

উপবিষ্ট হইয়। উপনিষণ্, গীতা, বিষু₹-ভাগবৎ্, দেবী-ভাগবত্ অধ্যাত্স-রামায়ণ প্রভৃতি গ্রন্থ অধ্যয়ন কর। অথবা, তাহা সম্ভব না হইলে, পুস্তকগুলি নিজে নিজেই বুঝিবার চেষ্টা কর। নিজ্জনে সমাসীন হইয়া ভগবত্বত্ব চিস্তা কর এবং স্ু্টি-কার্যের পধ্যালোচন। দ্বারা! বিধাতার অনস্ত শক্তি, অনস্ত জ্ঞান, অনন্ত প্রেম, অনম্ত সৌন্দর্য্য এবং অনন্ত মহিমীর ধারণা করিতে যত্ববান হও শ্রবণ বিচারাদির সাহায্যে তাহার মঙ্গলম্য়ত্বের অন্থভব করিতে সচেষ্ট হও। তাহার মহিমাব্যঞ্রক স্তোত্র এবং সঙ্গীত গান এবং শ্রবণ কর। তাহার নিকটে প্রাণ খুলিয়া প্রার্থনা কর। যখন কোন মন্দিরে গমন কর, তখন চিন্তা কর--“তিনিই পুজ্য দেব-মুক্তি সাজিয়াছেন, তিনিই পূজক হইয়াছেন, তিনিই পূজা! এবং তিনিই পুজার উপকরণ» প্রদক্ষিণ করিবার সময়ে মনে কর--“নিরাধার অনন্ত-দেবের আবার পরিক্রম্ণ কি? তবে তিনিই তাহার কতকগুলি শরীরে তীহার এই বিগ্রহ শরীরকে প্রদক্ষিণ করিয়া লীলা করিতেছেন। অথবা, সর্ববাধার হইলেও তিনি প্রত্যেক স্থানেই পূর্ণবূপে বিরাজ- মান; তাই, এই মন্দির-প্রদক্ষিণে বিশ্বাধারকেই প্রদক্ষিণ করা হইতেছে ।” সংকীর্তন শুনিয়া মনে কর-তিনিই এই সকল শরীরে নিজের মহিমা নিজেই কীর্তন করিয়া কি অপরূপ নাট্যেরই না অভিনয় করিতেছেন ! তিনিই সাপ সাজিয়। দংশনকরেন, ওঝা সাজিয়া চিকিৎসা করেন, রোগী টা

বেদ-বাণী,

সাজিয়া ছুংখ ভোগ করেন প্রত্যহ নিয়মিত সময়ে উপযুক্ত আসনে য্থানিয়মে উপবিষ্ট হইয়া অখণ্ড, অদ্বৈত সচ্চিদানন্দবের ধ্যান কর। ধ্যান-কাঁলে অথবা অন্য সময়ে প্রণব-মন্ত্র জপ কর। প্রণবের অর্থ এবং মাহাত্ম্য চিন্তা! কর। মেঘের গঞ্জনে, বিহঙ্গের কলরবে, রোগীর আর্তনীদে প্রণব-ধ্বনিই শ্রবণ কর। নিস্তব্ধ নিশীথে শুনিতে থাক-_- 'অনাহত ধ্বনির প্রবাহ-তরঙ্গে জগৎ প্লাবিত হইতেছে আর, সম্ভব হইলে, অনুভব কর--তোমার ভিতরেও অনাহত-ধ্বনির অচ্ছিন্ন প্রবাহ বহিয়া যাইতেছে সন্ধ্যা কালে নানকের* মত চিন্তা কর--ভগবান প্রকৃতি সাজিয়া কেমন সুন্দর ভাবে নিজের আরতি করিতেছেন !' আকাশে পক্ষী পুকুরে মাছ দেখিয়া চিস্তা কর--'সকল শরীরই চিদাকাশের উড্ডয়নশীল পক্ষী এবং চিৎ-সমুব্রের সম্তরণশীল মস্ত 1 রেলগাড়ীতে চড়িয়া মনে কর-প্ড্রাইভার যেমন গাড়ীগ্তলিকে আপুন ইচ্ছায় চালাইতেছে, অন্তধ্যামী

%* গুরু নানক শ্রীক্ষেত্রে আসিয়া এক সন্ধ্যায় শ্রীশ্রীজগন্নাথ-দেবের আরতি দেখিতে যখন মন্দিরে প্রবেশ করিতেছিলেন, গুরুজীর দীরশ্মশ্র দর্শনে পাণডাগণ তাহাকে মুসলমান মনে করিয়। বাধা দ্িল। সঙ্গের শিষ্যবর্গকে ব্যথিত বুঝিয়! নানক নিঃশব্দে সমুদ্র-তীরে আলিলেন এবং ভগবানের অখণ্ড বিরাট আ'রতি--গগনের থালায় চন্ত্ সুধ্য দীপ- যুগল আর তারার মীল্য লইয়া, পবন চাঁমর অনাহত শব্দের বাঁজজ্ত .ডেরী দ্বার পুজারাণী প্রকৃতি যে মহান্‌ হুন্দর--গম্ভীর আরতি করিতে-

নীচ

বেদ-বাণী

ভগবানও তেমনই তাহার ইচ্ছামত সকলকে পরিচালিত

করিতেছেন ।” তোমার ইচ্ছা সম্মতির অপেক্ষা না

করিয়াই যে তোমার শরীরে জাগ্রৎ, স্বপ্ন, সুযুণি-_সকল

কালেই অনবরত প্রাণ-ক্রিয়। চলিতেছে, তাহা! উপলব্ধি

কর এবং তাহার মূলে ভগবত-শক্তি দর্শন কর। যে

বালকটী একটী কাচের গেলাস হস্তে লইয়া যাইতেছে,

এঁ চলন্ত গেলাসটির ভিতরে বাহিরে রোদ্‌ থাকিলেও রোদ্‌

যেমন কখনও চলে না, তেমনই পরমাত্মা এই সকল চলন-

শীল শরীরের ভিতরে বাহিরে সমভাবে থাকিয়াও সর্বদা

ধীর, স্থির, শাস্ত, নির্বিকার মনে কোন ভাব-তরঙ্গ

উঠিলে মনে কর--ণউহা! চিৎ-সাগরেরই তরঙ্গ কোন

বিষয়ে যখন মন যাইবে, তখন চিন্তা কর-__:ভগবানই

বিষয়রূপে প্রকাশিত হইয়াছেন ; উহা! ভগবান ভিন্ন আর

কিছুই নয় | যখনই কাহাকেও কোন কশ্ম করিতে

ছেন, তাহ! দেখাইয়া দিলেন £ কিন্তু শিষ্গণের মনঃক্ষৌভ ঘুচিল না। তখন নানক কাতরে ভগবানকে ভাকিয়। কহিলেন, “ভগবান ! ভক্তের মান রক্ষা কর; তুমি অবৌধগণকে জানিয়ে দেও, ভগবান ভক্তকে কখনও ছাড়েন নাই।” ভক্তের ভগবান সে রাত্রেই সোনার থালায় করিয়া মন্দিরের প্রসাদ দিয়া গেলেন। কিন্তু সকলে তা জানিতে পারিল ন! বলিয়৷ নানক আবার কাতরে নিবেদন করিলেন, “সমুত্রের

জল লবণাক্ত, তুমি এখানে সকলের পানের জন্য শ্বচ্ছ, স্বাছু, স্বশীতল গঙ্গাজলের উৎম সৃষ্টি কর।” ভগবান ভক্তের আবীর রাখিলেন।

আজও সে উৎস গুপ্ত-গঙ্গ। নামে খ্যাত।

৭৯

বেদ-বাণী

দেখিতে পাও, মনে কর-_“ভগবানই শরীরে কর্দ করিতেছেন; কর্তা তিনি, কম্মও তিনি, শরীরও তিনি ।,

যখনই কাহারও কথা বা আচরণে তোমার অসন্তোষ, বিরক্তি বা ক্রোধ উৎপন্ন হয়, অমনি স্মরণ কর-_-এই কথা বা আচরণের কর্তা মঙ্জলমযম ভগবান» যখনই ছুই জনের মধ্যে তুলন। করিতে ইচ্ছা হয়, অমনি মনে কর-- “এক জনই এই ছুই বিভিন্ন রূপ ধারণ করিয়া বিভিন্ন প্রকারের অভিনয় করিতেছেন। প্রত্যেকেই ব্রন্ম-স্বরূপ ; কে ছোট, কে বড়?” কাহারও প্রতি স্বণা বা বিদ্বেষ জন্মিলে চিন্ত কর--এ হৃদয়ে আমার আবরাধ্যদেব নিবাস করিতেছেন; তিনিই লীলা-শরীর ধারণ করিয়াছেন এবং তিনিই শরীরের কর্তী মনে রাখ--'্যখনই কাহাকে ঘ্বণা করি, তাহাতে ভগবাঁনকেই ঘ্বণা করা হয়; যখনই কাহারও প্রতি ক্রোধ করি, তখন ভগবানের প্রতিই ক্রোধ করা হয়; যখনই কাহারও নিন্দা করি, তাহাতে ভগবানেরই নিন্দা করা হয়।” সর্ব্বদা সর্বত্র ব্রহ্ম-দর্শন করিয়া সমালোচনা দৌষ-দর্শনাদি পরিহার কর। অন্যের দৌষধ-দর্শন আমাঁদিগের একটি গুরুতর দোষ; তাহ। নিবারণ করিবার জন্য সর্বদা সতর্ক থাক এবং বিচার প্রার্থনার সাহাধ্য গ্রহণ কর। যখন কেহ তোমার প্রশংসা করে, তখন মনে কর-_যে কর্মের জন্য এই প্রশংসা হইতেছে, তাহার কর্তা ভগবানই তিনিই এক

৮০

বেদ-বাণী

শরীরে এক কন্ম করেন, অপর এক শরীরে আবার সেই কন্মের সালোচনা করেন। এই তাহার লীলা এই সমালোচনার আবার গুরুত্ব কি?” জাতি-কুল, বিদ্যা-বুদ্ধি, শক্তি-সামর্ঘ্য, ধন-মান কিন্বা। গুণ ব৷ সৌন্দর্যের জন্য যখন অভিমান জাগে, তখন মনে কর-_“কর্তী ভগবান, আমি অভিমান করিবার কে? ভাব--ভগবানই অভিমান করিতেছেন, অভিমান-তরঙ্গও ভগবানই 1, মনে কর --ভগবান তাঁর যে শরীরে যখন যেমন ইচ্ছা, সেই শরীরে তখন তেমনই খেলিতেছেন। তার ইচ্ছা! হইলে শরীরের সাজ পরিবর্তন করিতেও পারেন। যে শরীর আজ সুন্দর, কাল তাহা কুৎসিত হইতেছে, ধনী নির্ধন হইতেছে, বুদ্ধিমান বিরুত-মস্তিফ হইতেছে, বলবান হুর্ববল হইতেছে। পক্ষান্তরে, ছোট বড় হইতেছে, মূর্পণ্ডিত হইতেছে, নগণ্য ব্যক্তি সম্মানাম্পদ হইতেছে দশ জন অপেক্ষা আমি অধিক গুণ- সম্পন্ন বটে, কিন্ত আম! অপেক্ষা গুণবান লোকের সংখ্যাও কম নহে কোন না কোন প্রকারে প্রত্যেক শরীরই আমা! অপেক্ষা! উৎক্ষ্ট।+ চিন্তা কর-__“দেহাত্মবুদ্ধি যতই বাঁড়িতেছে, ততই আমি ভগবান হইতে দূরে যাইতেছি।” ভাবনা কর __'সকলই ব্রহ্ম, আমিও ব্রহ্ম। সকল শরীরই আমার নিকটে সমান ; তবে আর শরীর-বিশেষকে “আমি” বা “আমার” মনে করিয়া অভিমান-পাশেই বা বদ্ধ হইব কেন, আর স্থখ-ছুঃখের ফাদেই বা পড়িব কেন ?” ৮১

বেদ-বাণী

চলিবার সময়ে মনে কর--“ভগবানই এই শরীরে চলিতেছেন।, বলিবার সময়ে মনে কর__“ভগবানই এই শরীরে বলিতেছেন» আহারের সময়ে মনে কর-- “ভগবানই আহার করিতেছেন, তিনিই আহার্য, তিনিই আহার কখনও মনে কর--“তিনিই সকল সাজিয়াছেন, তিনিই সকল শরীরে “আমি” “আমি” করিতেছেন; আমি তিনিই; আমি অখণ্ড সচ্চিদানন্দ

একটা কথা আছে “আমি ক্রহ্--এ ভাব কোন কোন সাধকের ভাল লাগে না কখনও কেহ মনে করে-_ “ভগবানই এই সকল হইয়াছেন যাঁ কিছু, সকলই তিনি আমি তার দাস। আমি যতদূর পারি, সকল শরীরে তার সেবা করিব। ভগবানই সকল শরীরে শরীরী সকল শরীর ল্ইয়াই তীহার শরীর। প্রত্যেক শরীরই ভগবৎ-শরীরের এক একটা অবয়ব। তাই, যে কোন শরীরের মেবা করি, তাহাতে সর্বময় বিশ্বাধারেরই সেবা! করা হয়।” ধন, মন, বাণী শরীর দ্বারা যথাসাধ্য জীবগণের উপকার করিয়া, নিজে কষ্ট স্বীকার করিয়াও অন্যের ক্ষতি এবং অস্থবিধা-বোধ নিবারণ করিক্বা সে মনে করে-_সে ভগবানেরই সেবা করিতেছে এইরূপ সেব! করিতেই সে ব্যগ্র, সেবা করিতে না পারিলেই তাঁর অতৃপ্তি, সেবা করিবার স্থযোগ পাইলেই তার আনন্দ। কোন শরীর দেখিলেই তাহাতে ভগবৎ-সতা' প্রত্যক্ষ করিয়া সে

৮২

বেদ-

ভক্তিভরে প্রণাম করে। সে প্রত্যেককেই মঙ্গলময় ভগবান মনে করিয়া তত্কৃত ত্বণা নিন্দা, প্রহার তিরস্কার অবিরুৃতচিত্তে সা করিয়। থাকে সে দেব- মন্দিরে যাইয়া মনে ভাবে__যদ্িও ভগবৎ-শরীরের-অবয়ব- স্বরূপ প্রত্যেক-শরীরেই তাহাকে পুজা করা যায়, তথাপি আমাদিগের প্রদত্ত পূজা গ্রহণ করিয়া আমাদিগকে চরিতার্থ করিবার জন্য, আমাদিগের সর্বপ্রকার কল্যাণের নিমিত্ত, তিনি অনন্ত থাকিয়াও এই সকল দেব-মুন্তি প্রকীশিত করিয়াছেন। এই সকল বিগ্রহের চরণতলে যে প্রণাম এবং অর্থ্যাদ্রি প্রদভ হয়, ভাহা বিশ্ব-মুর্তি অনস্তদেবকেই প্রদত্ত হয়, এবং তিনিই তৎসমুদয় গ্রহণ করেন। সে প্রার্থনা করে__“হে ভগবন্! আমাকে অভিমানশূন্য কর, নির্দোষ কর, প্রেমময় কর, তোমার সহিত যুক্ত করিয়। লও হে ভগবন্! য!কিছু দেখিতেছি, তোমাকেই দেখিতেছি; তথাপি আমার মোহ-কাঁলিম! দূর হয় ন! কেন? যা কিছু শুনিতেছি, তোমারই কথা শুনিতেছি; তবু আমার শান্তি হয় না কেন? যা কিছু খাইতেছি, €তোমারই প্রসাদ খাইতেছি; তবু আমার প্রেম হয় না কেন? তোমার ভিতরেই সর্ধ্বদা ভুবিয়া আছি, তবু আমার আনন্দ হয় না কেন? হে ভগবন্‌! আমাকে কপ! কর। তোমাকে কোন শরীরে দ্বণা করিতেছি, কোন শরীরে বিদ্বেষ করিতেছি, তবে তোমাকে কেমন করিয়া

৮৩

বেদ-বাণী

পাঁইব, কেমন করিয়। ভালবাসি ? হে দয়াময়! আমাকে নিশ্মল কর ।,

আর এক শ্রেণীর ভক্ত আছে, সে সেবা করিতে চাক্ষ না। সে মনে করে-_“আমার কতটুকু শক্তি, কতটুকু বুদ্ধি, কতটুকু জ্ঞান যে আমি সেবা করিব ! কখনও করিতে যাই কোন শরীরের দুংখ-নিবৃতি,-কিন্ত বুদ্ধির দোষে এমন ভাবে সেবা করি, যাঁতে তার ছুঃখ আরও বাড়িয়া যায়! যাহা কাহারও পক্ষে অপকারজনক মনে করি, তাহা তাহার পক্ষে উপকারজনক বলিয়াই হয়ত তারপর বুঝিতে পারি কোন্টা বাস্তবিক উপকার, কোন্টা বাস্তবিক অপকার, তাহা বুঝিতে পারি কই? আর, তাহা! না বুঝিলে কেমন করিয়াই বা সেবা করিব? সেবা করিতে একমাত্র ভগবানই সমর্থ এবং তিনিই সর্বদাই সকল শরীরের সেবা করিতেছেন। তিনি প্রেমময়, মঙ্গলময়, জ্ঞানময় সর্বশক্তিমান। যে শরীরের জন্য যেরূপ সেবার প্রয়োজন, তিনি নিজেই সর্বদা তাহার ব্যবস্থা করিতেছেন। বুঝি আর না বুঝি, তিনি সর্বদা সকল শরীরের ম্ঙ্গলই করিতেছেন আমি অভিমাঁনবশে সেবা! করিতে যাইয়া! তাহার শান্তিময়, স্ুশৃঙ্খলাময় ব্যবস্থার উল্লজ্বঘন করিব? আমার অন্তের জন্য--সমন্ত জগতের জন্য যখন যাহা প্রয়োজন, তিনিই তাহা সম্পন্ন করিতেছেন তাহার মঙ্গলময়ত্বে বিশ্বাস রক্ষী করিয়া আমি কেমন

৮৪

বেদ-বাণী

করিয়। কর্শে প্রবৃত্ত হইতে পারি? আমার কোনই কর্তব্য নাই। যত দিন অভিমান আছে, তত দ্দিন যথাসম্ভব ভগবৎ-ম্মরণই আমার একমাত্র কার্য ;_-তাহাকে ডাকিব, তাহাকে ভাবিব, তাহাকে দর্শন করিব |

ভক্তদের আরও কত রকম ভাব আছে; পত্রে আর কত লেখা যায়? এই যে বিভিন্ন ভাবসকল, ইহার কোনটিকেই মন্দ মনে করিও না। প্রত্যেকটিই সিদ্ধিগ্রদ তোমার মনে যখন যেটি উদিত হয়, তখন তদন্নকুল ব্যবহারই করিও। মোটের উপরে একটি কথা মনে রাখিও,--"আমাদের মন সাধারণতঃ বিষয়ের দিকেই ধাবমান, নাম-রূপ লইয়াই ব্যস্ত। যখনই কোন বিষয়ের দিকে মন আকৃষ্ট হয়, তখনই, যে ভাবে হউক্‌, সেই বিষয়টিকে ব্র্মময় ভাবনা করিয়া মনটিকে একবার চৈতন্ত-মমুত্রে ডুবাইয়! লও এইরূপ বারম্বার ভূবাইতে ডুবাইতেই মনে ব্রদ্ধের রঙ. ধরিবে। রঙ. যখন পাকা হইবে, জীবনও তখন ধন্ত হইবে 1,

কন্থল্‌ঃ

৪1১০1১১৭।

৮৫

ভিতভীন্ম অন্তন্বান্ড £

১। ভগবানই সৎ, আর ঘা কিছু সবই অসৎ। ভগবৎ-সঙ্গই সৎ-সঙ্গ।

২। নাম করিতে কোন নিয়ম নাই, কোন বিচার নাই। যত অধিক কাল সম্ভব, যত অধিক বার সম্ভব, নাম কর। বসিয়া থাকিতে নাম কর; যখন াড়াইয়। থাক, নাম কর; যখন শুইয়। থাক, তখনও নাম কর। নাম করিতে শুচি অস্তুচি ভেদ নাই; কালাকাল নিরূপণ নাই ্বানে, আহারে, ভ্রমণে, মল-মৃত্র-ত্যাগে সর্বদাই নাম করা যায় করিতে হয়। নামের সংখ্য! রাখিবারও আবশ্যকতা নাই; যে মনটুকু দ্বারা সংখ্যা রাখিবে, সেটুকু মনও নামাম্ৃতে ডুবাইয়া দাও সংখ্যাদ্বার! কি হইবে? যত বেশী বার পার, নাম লও। সাধনের সময় যদি না জোটে, হাতে কাজ করিতে থাকিয়াও মুখে নাম কর। ভাল লাগুক আর মন্দ লাগুক্‌, মন লাগুক আর নাই লান্ডক্‌, নাম করিতে থাক। নাম করিতে করিতে__নামের গুণে সকল বাধা, সকল'

৮৯

বেদ-বাণী

অস্থৃবিধা দূর হইয়! যাইবে। জ্ঞান, ভক্তি, ভগবদর্শন-_ সকলই নামের গুণে মিলিবে। ধৈর্যের সহিত নাম করিতে থাক।

৩। সাধারণতঃ উত্তরমুখো হইয়াই ভজন করিতে বসা ভাল।

৪। যিনি তোমার প্রাণের ঠাকুর--ধিনি তোমার আরাধ্যদেব, তিনিই পুণ্ক্ষ, তিনিই বিশবেশ্বর, তিনিই বিশ্বময়, তিনিই বিশ্ব-ৃদ্তি। তিনিই বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন সাধকের উপাস্ত | তীহাকেই বিভিন্ন নামে, বিভিন্ন লোকে ডাকিতেছে। তাহারই মহিম! বিভিন্ন শাস্ত্র প্রচার করিতেছে। তিনিই বিভিন্ন রূপে বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন ভক্তের মনোরঞ্জন করিতেছেন। তাহারই পুঁজ! সকল মন্দিরে; তাহারই শক্তি সকল তৃবনে। প্রত্যেক মন্দিরে তাহাকেই প্রণাম কর, প্রত্যেক সাধককে তাহাঁরই উপাসক মনে কর, প্রত্যেক নামে তাহাকেই স্মরণ কর এবং প্রত্যেক বাতিল

£। তোগার ইনি যেন বিহেবে গ্রতিটিত না হয় তোমার ধর্ম যেন সাম্প্রদায়িকতার নামাস্তর না হয়? ৯৩

বেদ-বাঁণী

তোমার জ্ঞান যেন বৈষম্য-ছুষ্ট না হয়; তোমার প্রেম যেন সন্কীর্ণতা-পক্থিল না৷ স্্য়।

৬। তোমার ইষ্ট-নিষ্ঠা সর্বত্র ত্রহ্মদর্শন করুক্‌, আত্রম্ষ-স্ত্ব পধ্যস্ত সকলের নিকটে সমভাবে প্রণত হউকৃ। তোমার ধর্দ-মন্দির উদ্বারতার উচ্চ-শৃঙ্গোপরি প্রতিষ্ঠিত হউক্‌। তোমার জ্ঞানাগ্নি সমুদয় ভেদ-দর্শন নিরাশ করুকৃ হিংসা, দ্বণা স্বার্থপরত৷ তাহাতে সমূলে দ্ধ হইয়া যা+ক্‌। তোমার প্রেম-গঙ্গা বিশ্বব্যাপিনী হইয়া সকলকে সমান ভাবে আলিঙ্গন করুকৃ; তাহাতে আনন্দ অমৃতের তরঙ্গ সর্বদা খেলিতে থাকুক্‌।

৭। সিদ্ধাসন, স্বস্তিকাসন বা পদ্মাসন--যেটি হউকৃ, . যে কোন একটি আসনে অনেকক্ষণ অক্লেশে বসিয়! থাকি- বার অভ্যাস করা মন্দ নয়। |

৮। সন্ধ্যাকালটা বাজে কন্মে ব্যয় করা ভাল নয়।

৯। যেহত ত্যাগী, যে যত ক্ষমাশীল, যে যত ধৈর্য্য- পরায়ণ, সে তত বড়। | ৯১

বেদ-বাঁণী

সা শ্রীকৃষ্ণের তিন শিপ্ত,--অঙ্জুন, গৌপিনী উদ্ধব।

১১। যে ম্বভাব-দীতা, সে কাহারও কোন অভাব দেখিলেই মনে করে, এর সম্পূর্ণ অভাবের প্রতিকার করা একক আমারই কর্তব্য “অন্যে কিছু করিতেছে না, আমি কেন করিব?--এ সকল ভাব তার আসে ন|। অভাবের যতদূর প্রতিকার তাঁর চেষ্টায় সম্ভব, ততদূর না করিয়। সে থামে না।

১২। অনেকে অনেক সময়ে করিতে যাঁয় উপকার, কিন্তু হইয়৷ পড়ে অপকার।

১৩। আহীর করিবার সময়ে সাত্বিক ভাব বজায় থাকিলে তামসিক থাগ্ের দৌষ অনেকটা দূর হইয়া যায়।

১৪। শুধু-শুধু কাহারও মনে কষ্ট দেওয়া ভাল নয়।

১৫।. যখন কেহ আচরণ-বিশেষ দ্বারা ভোমার ক্রোধ, স্বণা বা বিরক্তি উত্রিক্ত করে, এবং সেই চাঞ্চল্যের সম্পূর্ণ ৯২

বেদ-বাণী

দোষ তাহার স্বন্ধে অক্লেশে অপিত করিয়! তাহার মৃণ্ড- চর্বণের নিমিত্ত যখন তুমি কটি-বন্ধন করিতে প্রয়াসী হও, তখন--তার খাতিরে না হউক্‌, অন্ততঃ তাঁর বিধাতার খাতিরে-_কিছুক্ষণ ধৈর্যধারণ করিয়া, একটু কাল চিন্তা করিও, চাঞ্চল্যের-_এঁ দুর্বলতার সম্পূর্ণ দোষ তাহারই কিনা? তোমার মন যদি সংযত হইত, তাহা! হইলে অন্যের ব্যবহার তোমাকে ক্রুদ্ধ বা বিরক্ত করিতে নমর্থ হইত কিনা?” একটু কাল বিবেচন| করিও, “তাহাকে তিরস্কার বা শান্তি প্রদান করিতে যে শক্তি সময় ব্যয়িত হইবে, তাহা তোমার মানসিক দুর্বলতার দূরীকরণার্থে ব্যয় করিলে তোমার অধিকতর কল্যাণ হইতে পারে কিনা? একটু কাল মনে করিও, “যে দোৌষগুলি বহুপূর্কেই সংশোধিত হওয়। উচিত ছিল, সেগুলির অস্তিত্ব এবং অনিষ্টকারিত্ব বিস্থৃত হইয়া যখন তুমি দুর্ববলচিত্ত লইয়া, সন্তোষের সহিত, ঘরকন্না করিতেছিলে, তখন যদি কাহারও ব্যবহার-বিশেষ তোমার গুপ্ত-দোষগুলিকে-_সেই গুপ্ত ব্রণগুলিকে চোখের সাম্নে প্রকাশিত করিয়া দেয়, তবে তার প্রতি কৃতজ্ঞতা- প্রদর্শন কর্তব্য কিন?” একবার ভাবিও, “পরীক্ষা দ্বারাই সকল শক্তি, সকল শিক্ষা, সকল অভ্যাসের প্রকার-ভেদ নিরূপিত হয়। পরীক্ষা হইতে পলায়নই চতুরতা নহে) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হুওয়াই পুরুষত্ব। এবারের পরীক্ষায় অন্ুতীর্ণ হওয়াতে তোমার দুর্বলতা! বুঝিতে পারিয়া ষদি ৯৩

বেদ-বাণী

তুমি পূর্ণ উৎসাহের সহিত ভবিষৎ পরীক্ষার জন্য প্রস্তত হও এবং অন্যের এপ “প্রতিকূল” আচরণগুলিকে যদি উন্নতি-বিধায়ক পরীক্ষা মনে করিয়৷ অভিনন্দন করিতে পার, তবে কি তাহা সাধকের পক্ষে অধিকতর মঙ্গলগ্রদ হয় ন1?, একবার স্মরণ কর,_-“ ঈিশ্বরঃ সর্বভূতানাং হদ্দেশেহজ্জুন তিষ্ঠতি। ভ্রাময়ন্‌ সর্বভূতানি যন্ত্রার্টানি মায়য়া॥” যে আচরণ তোমার চিত্তকে বিচলিত করিতেছে, তাহার কর্তা! অপর কেহ নহে-তোমাঁর প্রেমময়, মর্জলময় বিধাতা ।” একবার বিচার কর, “তুমি যদি দেহেন্দিয়াদিকেই অজ্ঞান- বশতঃ আত্মা বলিয়া মনে না করিতে, তবে এই উত্তেজন! তোমার হইত কিনা? এবং ভোমার ভ্রান্তিবশতঃই যে ছুঃখভোগ তুমিঃকরিয়াছ, তজ্জন্ত অন্যকে দোষী না করিয়া নিজেই লজ্জিত হওয়া উচিত কি না? একবার ভাব, “আমি আত্মা সর্বব্যাপী, জ্যোতির্দয় আত্মা__ধীর, স্থির, 'অচল, অটল, নিরাকার, নির্ব্বিকার, নির্ব্বিকল্প, উদাসীন আত্মা-কিছুতেই আমাকে স্পর্শ করিতে পারে না কিছুতেই আমাকে চঞ্চল করিতে পারে না ;-স্পর্শ করিবে কে? আমিভিন্ন আর কেহই নাই, আমি ভিন্ন আর কিছুই নাই--আমি আনন্দন্বরূপ--আমি শাস্তিম্বরূপ-_ আমি অমৃতন্বরূপ 1,

১৬। ধন্মের নামে--ধশ্মের আবরণে যেন নি কুরববলতাকেউ্িজ্জ হইতে দিও না।

৯৪

বেদ-বাণী

১৭। পরকে শিখাইতে যাইবার পূর্বের নিজের শিক্ষা সম্পূর্ণ করিয়া! লইও।

১৮।: 93155550216 086 009. 20000 8101, 006 5081] 1১৩ ০02107660.--গীতার অজ্জুন এবং যৌগবাশিষ্টের রামচন্দ্রের এই বিষাদ আসিয়াছিল; তাহারা সান্বনাও পাইয়াছিলেন।

৯৫

১। যখনই কোন বৈষয়িক চিন্তা মনে উদ্দিত হয়, অমনি বিচার প্রার্থনার সাহায্যে তাহাকে তাড়াইয়! দাও এবং ষত অধিক ক্ষণ সম্ভব ভগবানকে ম্মরণ কর। ধৈর্ধ্য অধ্যবসায় হারাইও না। ইহাই শান্তি-লাভের সহজ উপায়।

২। সংসার সত্য কি মিথ্যা--সে বিচার লইয়। মাথা ঘামাইবার কোনই প্রয়োজন নাই। সংসার যেন মনকে দখল ন! করে, ইহাই সর্বদা দেখিতে হইবে।

৩। ভোজন যেন আমাদিগকে না খায়। আহার করিবার প্রাক্কালে সতর্ক হইবে যেন ভগবানকে বিস্বৃত না হও এবং স্বাদের দিকে মন না যায়।

৪। কোন কোন স্থানে মুদলমানেরা আত্মীয়-স্বজনের ্বত্যুকালে হাসিয়া থাকে। অঞ্চলের অধিবাসীরা বং ৯৬

বেদ-বাণী

প্রায়ই কাদে না। বঙ্গদেশে কৌন কোন সময়ে তান-লয় সহকারেও কাদে গুজরাটে খুব বুক চাপড়ায়। হাসি- কান্নাও কি অভ্যাস নয়? পাগল হইলে গো-বধেও আনন্দ পায়!

৫| ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণরূপেই ভগবানের হস্তে এবং অতীতের চিন্তা অনেক সময়েই বৃথা এই যনে করিয়। সাধক কেবল বর্তমান লইয়াই থাকে এবং ভগবানকে ডাকে।

৬। কর্ম সহজে তমাদি হয় না। মনকে আজ যে আহার দিবে, পঁচিশ বছর পরেও মন তাহার ঢেকুর তুলিতে পারে। তাই, সাবধান হইয়া কর্তব্য নির্ধারণ

করিবে

৭। কোন দ্রব্য দেখিলে সংসারী মনে করে, হিহা কি কাঁজে লাগান যায়? সাধক মনে করে, হহা না হইলে আমার চলে কি না?”

৮। কোন বাসন! মনে উঠিলে চিস্তা করিবে, “এটি লইলে ভগবানকে পাওয়া যাইবে না। দু'টির মধ্যে

কোন্টি ভাল? ৯৭

বেদ-বাণী

৯। তিন জন সাধকের আধপেটা খাবার জুটিয়াছে। এক জন বলে,উদর পূর্ণ করিয়া দাও, নহিলে ভজনের বিদ্ব হইবে” আর একজন বলে, “তুমি মঙ্গলময় বিধাতা, যেটুকু দিয়াছ, নিশ্চয়ই এই খাগ্ঠটুকৃতেই আমার মঙ্গল। তাই, এটুকুতেই যেন সন্তষ্ট থাকিয়া তোমাকে ডাকিতে পারি।, তৃতীয় বলে, “এ শরীরকে খাগ্ দাও বা না দাও, অল্প দাও আর বেশী দাও,সে তোমার কাজ; সে দিকে আমার মন যাবে কেন? আমার ষৌল-আনা মন যেন সর্বদা তোমাতে থাকে

১০। ডাঁকা*ত তোমার য্থাসর্বস্ব লুট করিয়। দৌড়াইল। তুমি পুনরুদ্ধারের আশায় পেছনে পেছনে ছুটিলে। কতক্ষণ পরে যখন কিয়ৎ পরিমাণে ক্লান্ত হইয়াছ, তখন ডাকাস্ত তোমায় একটা পুটুলি হইতে একখান। কাপড় ফেলিয়া দিল। তা লইয়াই তুমি সন্তপষ্ট চি্ে ফিরিলে ; ডাকাতও “আপদ চুকিল” ভাবিয়া, হাসিতে হাসিতে চলিল। অনেক সাধকই ভগা-ডাকা'তের নিকট হইতে এইরূপ অনুগ্রহ পাইয়া ফিরিয়া আইসে।

১১। যাহার! পিদ্ধাই দেখিয়া কোন ব্যক্তি-বিশেষের প্রতি অঙ্ুরাগমম্পন্ হয়, তাহাদের সিদ্ধি-লাভ স্ৃকঠিন।

৯৮

বেদ-বাঁণী

১২। পুতুল-বাজি অনেক কাল দেখিলে! এখন একবার খেলার ঘর ছাড়িয়া পেছনের ঘরে চল--খেলো- যাড়কে দেখিবে; তখন খেলার সমুদয় রহস্যই টের পাইবে

১৩। কোন মজার কথা শুনিয়া, ভাল খাবার পাইয়া, প্রিয় বন্ধুকে হঠাৎ দেখিয়া, একটি পয়সা হারাইয়া! যদি ভগবানকে তুলিয়। যাই, তবে ভগবানে অনুরাগ বা কত, আর বৈরাগ্যই বা কি?

১৪। মৃত্যু-কালে ভগবচ্িন্তা প্রয়োজন অথচ, “মরণের অবধারিত কাল নাই।” বে ভগবানকে ভুলি কি করিয়া?

১৫। ভগবান এমনই ভালমান্ষ যে তাকে যতই জান্বে, ততই তার উপর টান বাড়বে ; আবার সে টানে যতই তার দিকে এগোবে, ততই তাকে বেশী বেশী জান্তে পারবে

১৬। এমন স্থানে এমন ভাবে সাধন করিতে বসিবে, যেন অন্তে তথায় তখন যাইতে না 855

৯৯

বেদ-বাণী

১৭। এক ঘণ্টা ভজন করিয়া তারপর বাজারে যাইব+--এরপ ঠিক করিয়া সাধন করিতে বসিলে আসনে বসিয়া অনেক সময়েই মাছ কিনিতে হয়। যতক্ষণ পারি, সাধন করিব; কোন বাধা নাই'--এই চাই।

১৮। নিরভিমান না হইলে ভক্তি-লাঁভ হয় না

১৯। তুমিকি মুক্তি কামনা করিতেছ? বিষয়ের তীত্র জালা হৃদয়ে অনুভূত হইতেছে কি? বাসনাই বদ্ধন-- ইহা। বেশ বুঝিয়াছ কি? আসক্তিই ভয়,আশঙ্কা সন্দেহের মূল--তাহা জানিয়াছ কি? ভেদজ্ঞানই ছুঃখ, কষ্ট যন্ত্রণার কারণ--ইহা উপলব্ধি করিয়াছ কি? যদি হইয়া থাকে, তবে তুমি সাধক বট। সরল অন্তঃকরণে ভব- বন্ধন-হারীর নিকটে প্রার্থন! কর, পূর্ণকাম নিশ্চয়ই হইবে

২০। প্রত্যেক উত্থান পতনে, জয় পরাজয়ে, সম্পদ বিপদে, রোগ ভোগে, সৎ অসৎ আচরণে গ্রতিমূহ্র্তে প্রত্যেক ব্যক্তি- প্রত্যেক প্রাণী উন্নতির দিকে_-কল্যাণের দিকে ধাবমান হইতেছে,ইহা' কি সর্বদা উপলব্ধি করিতে চেষ্টা কর? নতুবা, ভগবান ম্গলমন্ ইহা! কথার কথা মাত্রই হইবে। «তিনি

১০০

বেদ-বাণী

ম্গলময়'_এ বিশ্বাস বদ্ধমূল না হইলে তাঁহার উপর পূর্ণ নির্ভরতাই বা আসিবে কেন?

২১। ছৈতবাদ সত্য কি অদ্বৈতবাদ সত্য, ব্রহ্ম সাকার কি নিরাকার, নিগুণ কি সপ্ুণ--এ সকল তত্ব যুক্তি- তর্ক দ্বার! মীমাংস1! করিবার জন্য বিশেষ ব্যস্ত হইও না। যে ভাব তোমার ভান লাগে, তাহা অবলম্বন করিয়াই, সরল ভাবে, সাধন-পথে অগ্রসর হইতে থাক। যথাসময়ে সকল রহস্তই তোমার নিকটে প্রকাশিত হইবে।

২২। আগন্তক লোককে রাস্তার প্রত্যেক চৌমাথায়ই নৃতন নৃতন লোকের সাহায্য লইতে হয়। একই গঙ্গার বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন পাগ্ডার সাহায্য প্রয়োজন। একই স্কুলে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভিন্ন মাষ্টার পড়ান। শাস্ত্রের আছে-_-গুরোগুরবস্তরং গচ্ছেৎ।

২৩। একটা" সহজ উপায় আছে। সমুদয় গোল- মালের মূল এই শরীরটা এটাকে ভগবানের কাছে ফেলিয়া! দাও; তারপর, নিশ্চিন্ত হইয়া তার নাম কর।

২৪। গবানই কর্তা, আর সব অকর্ত!--"এটি বেশ ১০১

বেদ-বা

চিন্তা করা চাই। সকল কর্ম সংকল্পের সময়েই যেন এটি মনে থাকে

২৫। সাধন-কালে একমাত্র উপদেষ্টাই সঙ্গী, অপর কেহ নহে।

২৬। সাধককে অনেক সময়ে বলিতে হয়

90 140105 3956 106 ঠি0]0 00 15005.

২৭। যে ভগবানে নির্ভর করিতে ন। পারে, তাহার একজন উপদেষ্টার উপর নির্ভর কর। চাই। নিজের বুদ্ধিতে চলিবে না।

২৮। পত্রিকা পড়া সাধকের কর্তব্য নহে।

২৯। অবিশ্বাসী নাস্তিকের সঙ্গ কিছুতেই করিবে না।

৩০। প্রথম প্রথম তীর্থ ভ্রমণ করা মন্দ নহে।

বর্ণবাস।

১০২

১। আজ দেওয়ালী। এই দিনে হিরখুয়ী কঝ্িণী দেবী নরকাস্থুরকে বিনাশ করিয়াছিলেন। তাই, আজ হিমালয় হইতে সিংহল পধ্যত্ত সমগ্র হিনদুস্থানেপ্দীপাবলী”র উত্সব তোমরাও এই উৎ্মব স্থৃসম্পন্ন কর। প্রেমময় বিশ্বজননীর নিকটে প্রার্থনা কর-_মায়ের কাছে ছেলের মত আবদার কর,-তার কৃপায়, তার ইচ্ছায় অজ্ঞানাস্থর ধ্বংসপ্রাপ্ত হউক্‌-_মোহাম্ষকার দূর করিয়া জ্ঞানীলোক চতুদ্দিক উদ্ভাসিত করুকৃ।

২। প্রত্যেক হ্ৃদয়-কাননে এই উৎসবের আয়োজন হউকৃ। দ্বেষ হিংসা, দর্প অভিমান, কপটতা সঙ্কীর্ণতা- এই আগাছাগুলিকে সধত্বে উৎপাটিত কর। ক্ষমা ধৈর্য, সত্য সরলতা, সংযম পবিভ্রতা--এই সকল পুস্প-তরুর রক্ষণ বদ্ধন কর। কেন্ত্র-স্থলে ভক্তির উৎস নাচিতে থাকুক। তাহা হইতে জ্ঞান-মন্দাকিনীর অমৃত-ধার৷ প্রবাহিতা৷ হইয়া সমুদয় বাগানকে সগ্তীবিত শোভায়মান করিতে থাবুকু। পুলিনে, ুক্প-কুক্থমৌপরি

১০৩

বেদ-বাণী

উপবিষ্ট হইয়া বিহঙ্গমগণ জীব-প্রেম--বিশ্ব-প্রেমের মধুর বঙ্কারে দশ দিক পরিপৃরিত করুকৃ। সন্তোষের মৃদু হিল্লোল সমুদয় শ্রান্তি বিদুরিত করুকৃ। স্গিঞ্কোজ্জলকান্তি লাবণ্য- ময়ী শাস্তিদেবীর মণিমণ্ডিত সিংহাসন রত্ববেদীর উপর প্রতিষ্ঠিত হউক্‌। তীহার রূপের বিমল ছটা দশ দিক আলিঙ্গন করুকৃ। পত্র পুষ্প, পুলিন তরম্ব, জল স্থল-_সর্বত*্প্রতিফলিত আলোকমাল! হৃদয়-কাননকে অতুলশোভাসম্পদের অধিকারী করুক্‌।

৩। ভক্তি-লাভই যদি না হইল, তবে জীবন-ধারণে ফল কি?

৪। 'পুষ্পের পরিবর্তে শ্রীরামচন্দ্রের মত নয়ন প্রদান করিব--এমন ভক্তি আমার নাই, তবে তোমার পূজা করিব কিন্পে? শরীর-_ছূর্ববল, ব্যাধি্রস্ত, ক্লেশ-সহনে অক্ষম) তোমার সেবাতেই বা আমার অধিকার কই? মন- চঞ্চল, অসংযত, বাসনাগীড়িত; ধ্যানের সম্ভাবনাই বা আমার কোথায়? হে ভগবন্‌! আমি একান্তই তোমার কপাপাত্র। হে দীনদয়াল! আমাকে যদি উদ্ধার করিতে না পার, তবে তোমার পতিতপাবনী 0 বলিতে হইবে।

_&। হে ভগবন্! তুমি সকলই আকর্ষণ ধারণ ১০৪

বেদ-বাণী

করিতেছ। আমার হৃদয়কে আকর্ষণ করিতেছ ন! কেন? মধুভাও ছাড়িয়া আমার ভরমর-মন দিগ্দিগন্তে বৃথা ইটা করিতেছে কেন?

৬। হে প্রেমময়! গুণময়ী প্ররুতিরাণী সর্বদাই তোমার পূজায় নিঝিষ্টচিত্ত-__আত্মহারা ! আমি যে দিকে চাই, তাহার উপরেই আমার দৃষ্টি পতিত হয়, তোমার মধুর মুক্তি আমি দেখিতে পাই না! হে কৃপানিধান! দয়া করিয়া আবরণ অপসারিত কর।

৭। হে ভগবন্‌! আমি আর কিছুই চাই না_-আমার মন যেন সর্বদাই তোমার পাদ-পদ্স চুম্বন করিতে থাকে

৮। আমাকে গৃহস্থই কর আর গৃহত্যাগীই কর, চগ্ডালই কর বা ব্রাঙ্ষণই কর, মানুষই কর কিংবা কীট- পতঙ্গই কর, ধনীই কর আর দরিদ্ুই কর, নিন্দিতই কর অথবা! প্রশংসনীয়ই কর,-_কিছুতেই আমার আপত্তি নাই, যদি হে ভগবন্! আমার হৃদয়-সিংহাসনে তুমি সর্বদা বিরাজমান থাক ।,

৯। তুমি অগণিত বিশ্ব-্রম্বাণ্ডের অনস্ত ভার সর্বদা অনায়াসে বহন করিতেছ”-আর আমার মন কি এতই ভারী যে তাহা তুমি গ্রহণ করিতে পারিতেছ না?

১০৫

বেদ-বাণী

১০। হে ভগবন্‌! সমগ্র ত্রন্ধাণ্ডে যাহা কিছু আছে, শরীরেও তাহা আছে শরীরে যা কিছু আছে, হ্বখপুণুরীকে তৎসমুদয়ই আছে। এই হ্ৃৎপন্মেই তোমীর পূজা! করিব, হ্ৎপয্মেই তোমাকে দর্শন করিব, স্ৃৎপন্মই তোমার সম্মুখে বলি প্রদান করিব।

১১। মন যখন ভগবন্ময় হয়, তখন জগৎও ভগবন্ময়, মধুময় হইয়া যায়। আর মন যতক্ষণ বিষয়াভিমুখ থাকে, ততক্ষণই জগৎ জড় ছুঃখময়।

১২। ঞ্রুবের মন যখন ভগবানের জন্য ব্যাকুল হইয়াছিল, তখন প্রতিপত্রের পতনে সে মনে করিতেছিল -_খিই বুঝি তিনি আসিতেছেন”। ব্যা্রের ভয়াবহ মৃদ্ত নয়নগোচর হইলেও সে মনে করিয়াছিল-_-এই বুঝি প্রেমময় আসিয়াছেনঃ

১৩। নিজের বিদ্যা-বুদ্ধির বলে ভগবানকে লাভ কর! বড়ই কঠিন। হয়, সম্পূর্ণরূপে ভগবানের শরণাগত হও; নতুবা, যোগ্যতর “উপযুক্ত” ব্যক্তির অধীনতা স্বীকার কর।

১৪। ভ্রমণে অনেক কুসংস্কার সক্কীর্ঘত! দূর হয়? ইহাতে আরও অনেক উপকার আছে। ১০৬

বেদ-বাণী

১৫। সাধ্যান্গসারে মাঝে মাঝে লোককে নিমন্ত্রণ করিয়া, শ্রদ্ধার সহিত, পরিতোধপূর্ব্বক খাওয়ান--গৃহস্থের একটি উৎকুষ্ট কর্ম

১৬। বিশেষ ভাগ্যের ফলেই লোকে সেবা করিতে সমর্থ হয়।

১৭। কর্তব্য কর্মগুলি ভগবানের শ্রীত্যর্ঘে সম্পন্ন করিতে যত্বুবান হও

১৮। সম্পূর্ণ অপরিজ্ঞাত পরমূহূর্তের প্রতি যখন বিন্দমাত্রও হাত নাই, তখন আর ভবিষ্ততের জল্পনা-কল্পনা লইয়া সময়ের অপব্যবহার করিব কেন?

১৯। শিবনেত্র বা শবনেত্র হইবার জন্য, নাক টিপিয়া শ্বাসবন্ধ করিবার জন্য, অঙ্গভঙ্গিসহকারে আসনবিশেষে অভ্যস্ত হইবার জন্য--অত ধর্াক্তকলেবর হইতেছ কেন? যে ভাবে বসিলে কষ্ট না হয়, এমন “সথখাসনেঃ বসিয়া মন ভগবানে লাগাইয়া দাও শরীরের অঙ্গসংস্থানাদির চিন্তা তোমায় করিতে হইবে না। মন যখনই ভাবরসে ডুবিবে, তখনই চক্ষু উপযুক্তভাবে আপনাআপনিই বিন্যন্ত হইবে, নিশ্বাসংপ্রশ্থাসও আপনাআপনিই বন্ধ হইয়া! যাইবে, শরীরও

১০৭

বেদ-বাণী

নিজে নিজেই স্থির হইবে। (মনে কিন্তু করিও না৷ যে আসন প্রাণায়ামকে নিরর্থক বলিতেছি।)

২০। যাহাদিগকে দ্বণা কর, যাহাদিগকে নিন্দা কর» যাহার্দিগকে ছেষ কর, তাহাদের মধ্যেই কেহ কেহ হয়ত তোমার পূর্বেই লক্ষস্থানে পহ“ছিতে সমর্থ হইবে; হয়ত তাহাদিগের অন্গগ্রহও তোমার পক্ষে প্রয়োজন হইবে।

কর্ণবাস) দেওয়ালী, ১৩২৩।

১। যদি নিত্যানন্দ লাভ করিতে চাও, তবে মনকে শান্ত করিতে হইবে।

মনকে শান্ত করিবার জন্য, তাহাকে একনিষ্-_একাগ্র করা প্রয়োজন

মনের একাগ্রতা সম্পাদনের জন্য, প্রকৃতির বিভিন্নত অনুসারে, ধ্যান-যৌগ, জ্ঞান-যোগ, লয়-যোগ, মন্্রযোগ, প্রপ্ভি-যোগ প্রভৃতি অবলম্বনীয়।

যদি যোগে শ্রদ্ধা অধিকার লাভ করিতে বাসনা থাকে, তবে সর্বপ্রযত্বে ইন্ড্িয়সং্ঘম সদাচরণ করিতে হইবে।

সৎসঙ্গ সংশান্ত্র হইতে ইন্দ্িয়সং্ঘমের উপায় সদাচরণের উপদেশ মিলিবে।

২। নবীন বয়সেই পুগ্তরীকের কর্মজীবনে এমন শ্রদ্ধ!

ধৈর্ধ্য, উৎসাহ অধ্যবসায়, একাগ্রতা নিপুতার

প্রীতিকর সমাবেশ হইয়াছিল যে তাহার ক্ষুপ্র, বৃহৎ প্রতোঁক ১০৯

বেদ-বাণী

কর্তব্যটিই অতি স্ুন্দরভাবে--অতি পরিপাটি রূপে অনুষ্ঠিত হইত। একদিন তাহার বৃদ্ধ পিতা আহারান্তে শয়ন করিয়! আছেন ; তাহার চরণোপান্তে বদ্ধাসনে উপবেশন পূর্বক পুগতরীক পিতৃ-পদ-যুগল স্বীয় উরুদেশে সংস্থ(পিত করিয়। অতিশয় মনৌযোগের সহিত তাহার সেবা করিতেছেন যুবক হঠাৎ মস্তকোত্তোলন করায় দেখিতে পাইলেন, সম্মুখে --অনতিদূরে যশোদানন্নবর্ধন, প্রেমময় বাস্থদেব কটিদেশে হস্তঘয় রক্ষা করিয়া প্রসন্নবদনে দণ্ডায়মান ! পুণ্ুরীক-_ পিতৃসেবারত পুগুরীক তদবস্থায় থাকিয়াই ভূলুন্তিত শিরে ভক্তিভরে শ্রীশ্রীভগবানকে প্রণাম করিলেন, এবং প্রণামান্তে গদ্গদ্দ বচনে বলিতে লাগিলেন, “ঠাকুর ! যদি কৃপা করিয়া দেখাই দিয়াছ, তবে হে দয়াময়! আমাকে ক্ষমা কর। আমি পিতৃসেবায় নিযুক্ত ;--উঠিয়া, তোমার চরণ বন্দনাদিও 'করিতে পারিতেছি না হে কৃপানিধান ! যদি প্রসন্ন হইয়! এখানে পদার্পণই করিয়াছ, তবে অনুগ্রহ পূর্বক নিকটস্থ ইঞ্টকখণ্ড গ্রহণ করিয়৷ তদুপরি উপবেশন কর।” দিব্য- মধুর-মৃত্তি ভগবান সহাস্ত বদনে বলিলেন, “পুণ্তরীক ! আমার বসিবার প্রয়োজন নাই তুমি যে প্রেমের সহিত পিতৃ-সেব। করিতেছ, উহাতেই আমি সন্তুষ্ট হইয়াছি। উহা! দেখিবার জন্যই এখানে দীড়াইয়া আছি। তুমি পদ-সেবায় এমন তন্ময় হইয়াছিলে যে এতক্ষণ আমাকে দেখিতেই পাও নাই। “আমি এখন চলিলাম। তোমার মঙ্গল হউক্‌।” ভগবান ১১০

বেদ-বাণী

নন্দ-নন্দন এই ভাবেই ছুই তিন শত বৎসর পূর্বের মহারাষ্ট্র দেশে প্রকটিত হইয়াছিলেন। তদবধি এই কটি-্ন্ত-বাহ বিঠ্ঠলদেব বা! বিঠোবা বাবা মহারাষ্ট্রের গৃহে গৃহে পুজিত হইতেছেন। তখন হইতেই পুগুরপুর মহারাষ্ট্রে-_তথা সমগ্র হিন্মুস্থানের একটি পবিত্র তীর্থ।

৩। ক্ষত্রিয় বিশ্বামিত্র ত্রাদ্ষণ বিশ্বামিত্রের প্রভেদ অবগত হও

৪। যাহা কিছু পাইবার সাধ থাকে, সে সকলের জন্যই ভগবানের উপর নির্ভর করিতে যত্বশীল হও। বাহ কিছু পাইতেছ, সকলই ভগবানের নিকট হইতেই পাইতেছ।

মনে রাখিও, তিনিই সকল কর্মের কর্ত। | ৫। ভক্তিই সাধনের ভিত্তি।

৬। অপরাহ্ন ,কাল। মেলা বসিয়াছে। পিতার হস্ত ধারণ করিয়া একটি মুসলমান বালিকা এদিক ওদিক চাহিতে চাহিতে ধীরে ধীরে মেলার মধ্য দিয়া চলিয়াছে। হঠাৎ বালিকা একথানি পুতুলের দোকানের সাম্নে, থমূকিয়া দড়াইল। পিতাকে বলিল, “বাবা ! পুতুলটি

১১১

বেদ-বাঁণী

আমাকে কিনিয়! দাও ।” পিতা বলিল, “মা ! কাফেরের দেবতা মুত্তিতে কাজ নাই। আর কোন পুতুল কিনিয়। দেই” বালিকা সে কথা মানিল না। সে _ বলিল, “এঁটির মত সুন্দর পুতুল আর একটিও নাই আমি এঁটিই চাই ।” অগত্যা সেই পুতুলটিই কেনা হইল বাড়ী আসিয়াই বালিকা! পুতুলটিকে লইয়! খেলিতে বসিল। কিছু দিন পর হইতে সে পুতুল-খেলায়ই প্রায় সমস্ত সময় কাটাইতে লাগিল। শেষে, তার আর কিছুই ভাল লাগে না )_ কেবলই পুতুল-খেলা ;__দিন-রাত পুতুল-খেলা সে পুতুলটিকে আর পুতুল মনে করিত না;-__পুতুল তার খেলার সঙ্গী। বালিকা আর পুতুল দুজনে এক সঙ্গে খেলিত, নাচিত, হাঁসিত, কথাবার্তী বলিত। উভয়ের কথোপকথন মাঝে মাঝে অন্য ২১ জন লোকেও শুনিতে পাইত। উপযুক্ত বয়সে বালিকার বিবাহের আয়োজন হইল বালিক৷ বলিল, “পুতুলের সহিত আমার বিবাহ হুইফ়্াছে ; আমি আর বিবাহ করিব না।” বিবাহ দিতে কিছুকাল চেষ্টা করিয়া বিফলপ্রযত্ব হওয়াতে পরিশেষে অভিভাবকবর্গ নিরস্ত হইল। লীলাময়ের কি অপার মহিমা ! বালিকার সরল প্রেমের পুণ্য কিরণে ক্রমে ক্রমে আতীয়গণের হৃদয়ও রঞ্জিত হইল ! কিছুকাল পরে তথায় গগনস্পশী মন্দির নিশ্মিত হইল। তন্মধ্যে কনকাঁসনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুদি প্রতিষ্ঠিত হইল। মহাসমারোহে তাহার দৈনন্দিন পূজার ১১২

বেদ-বাণী

ব্যবস্থা হইল আজও সিন্ধু-দেশে সেই মন্দির বিরাজমান আজও না কি তথায় কতিপয় সহল্র কৃষ্ণতক্ত মুসলমান- সন্তান এক সম্প্রদায়বদ্ধ থাকিয়া বৈদিক ধন্মের অন্থুসরণ করিয়া থাকেন

৭) কদাপি এমন ভাবে কাহারও সেবা করিও না যাহাতে তার অস্বিধা হয়।

৮) নিক্ত্রৈগুণ্য হইতে যাইয়া যেন প্রকারাস্তরে জড়োপাসক হইও না। ব্রহ্ম টতন্ত-স্বরূপ |

৯। যাহাতে তোমার স্থবিধ! বা অস্থবিধা, তাহাতে অন্যের সুবিধা বা অস্থৃবিধা বোধ না হইতেও পারে

১০। অতিরিক্ত ভোজনের অনেক দোষ

১১। রামচন্দ্র হন্থমানকে জিজ্ঞাসা করিলেন,“হনুমান্‌! জল হইতে বিষুক্ত.হইলে মত্স্ত প্রাণধারণ করিতে পারে নাঃ তবে আমা হইতে বিষুক্ত হইলেও সীতার শরীরে প্রাণ আছে কির্ূপে ?” মহাবীর উত্তর করিলেন, “ভগবন্‌! শরীর হইতে প্রাণ বাহির হইবে কিরূপে? প্রাণ শরীরের মধ্যে আবদ্ধ ; শরীরের কপাট রুদ্ধ, কপাঁটে তালা বদ্ধ,

১১৩

বেদ-বাণী

তালার সম্মুখে সতর্ক প্রহরী দণ্ডায়মান তোমার ধ্যানই সেই কপাট, পাঁদাঙ্ছুষ্ঠে নিবদ্ধ দৃষ্টিই চাবিবন্ধ তালা এবং তোমার নামই সতর্ক প্রহরী 1৮

১২। ক্ষণিক আমোদের জন্ত, বন্ধুবর্গের প্রীতির জন্য, অনিচ্ছা বা অলসতার জন্য, কিম্বা অন্ত কোন কারণ বশতঃ, ধশ্মানুষ্ঠানের নিয়ম ভঙ্গ করিও না।

১৩। সত্য-রক্ষার জন্ত প্রাণ-পণে ষত্ব করিবে যত- ক্ষণ চতুরতা' কপট! বর্তমান থাকিবে, ততক্ষণ ধর্ম-লাভ হইতেই পারে না |

১৪। মুমুক্ষু সাধক সম্মানের লোভ করিবে না, বরং অবিকৃতচিত্তে অপমান সহ করিতে সচেষ্ট হইবে

নিরীকারী আশ্রম, বন্ধ,

১৪1৮।,১৭।

১১৪

১। অবিদ্ভার জন্যই দুঃখে স্থখবুদ্ধি, অশুচিতে গুচিবুদ্ধি এবং অনাত্মায় আত্মবুদ্ধি জন্মে

২। তত্ব-সাক্ষাৎকার ব্যতীত আর কিছুতেই অবিষ্ঠার নিরৃত্তি হয় না।

৩। নিষিদ্ধ কর্ম বজ্জন কর। উপাসনা অন্যান্য কর্তব্য কন্মগুলি বৈধ উপায়ে, ভগবং-গ্রীতি কামনায়, শ্রদ্ধা সংযমের সহিত, স্থচারু রূপে সম্পন্ন করিতে থাক। ক্রমে ক্রমে অভিমান বিগলিত হইবে, চিত্ত নির্মল হইবে, জ্ঞান ( অভেদ দর্শনং জ্ঞান) প্রকাশিত হইবে।

জ্ঞান ঈশ্বরারাধনার সহিত অন্বিত হুইয়া সাধককে বৈরাগ্যবান করে ।"

বৈরাগ্য এবং উপাসনার অভ্যাস হইতে মনন্থৈধ্য জন্মে।

স্থির শান্ত মনে ব্রহ্ম-ধ্যান করিতে করিতে তত্ব: সাক্ষাৎকার হইয়া থাকে

১১৫

বেদ-বাঁণী ৪। সাধনে শ্রদ্ধা না জন্মিলে সিদ্ধিলাভ হইবে কিরূপে?

৫। সন্তোষ লাভ করিবার জন্য বৈরাগ্য তিতিক্ষা উভয়েরই প্রয়োজন

৬। অভ্যাস তত্ব-বিচার দ্বারা ভিতিক্ষা লাভ হয়।

৭। সাধনকে অভ্যাস করিতে করিতে এমনভাবে অস্থি-মজ্জী-গত করিয়। লইতে হইবে যে আমাদের মন যেন রোগ এবং শোকে, সম্পদ এবং বিপদে, কর্-জীবনে এবং মৃত্যু-কালে ভগবানকে বিস্বৃত না হয়।

৮1 অনেক খণ জমিয়াছে , ইহা শোধ করিতে হইলে, বর্তমান ব্যয় অপেক্ষা বর্তমান আয় বেশী হওয়া আবশ্যক

বর্তমান ব্যয় অপেক্ষা বর্তমান আয় যত বেশী হইবে, তত কম সময়ে খণ শোধ করিতে পারিবে।

৯। যদি মনের চাঞ্চল্যই হয়, তবে তাহ ভগবানকে লইয়াই হউক্‌।

, ১০। সর্ব্বদা সতর্ক থাকিতে হবে যেন রাগ, ঘ্বেষ এবং অভিমান না জন্মে ১১৬

বেদ-বাণী

১১। সাধক যখন ভগবানের কুপাবলে তাহার শক্তি, এশ্বধ্য এবং মহিমা! উপলব্ধি করিতে পারে, তখন তার ঈশ্বরে বিশ্বাস জন্মে

বিশ্বাস হইতে গ্রীতি এবং প্রীতি হইতে ভক্তি লাভ হয়।

১২। গিয়াছি ঠাকুর দেখিতে; কিন্তু, ঠাকুর-বাড়ীর এশ্ব্য, মন্দিরের কাকুকাধ্য, ঠাকুরের পোষাকের পারিপাট্য প্রভৃতির আলোচনাতেই মন ব্যস্ত; ঠাকুরের প্রতি প্রেম

কতটুকু?

১৩। একটা নিয়ম আছে--রাজসিক-প্রকৃতি-বিশিষ্ট . লোক মাংস খাইতে ভালবাসে ; আবার, মাংস খাওয়ার ফলে রজোগুণ বদ্ধিত হয়।

১৪। বই পড়িয়াই সমুদয় জ্ঞাতব্য জানা যায় না» কতকগুলি কথ শ্বনিয়৷ লইতে হয়।

কন্থল্‌;

'81৯1,১৭।

১১৭

১। অবিদ্ভার দুইটা গ্রন্থি £-_-অহংতা! মমতা

২1 একটী মাত্র পদার্থেও যদি আসক্তি থাকে, পঞ্চাশটী পদার্থ তোমার মনোযোগ আকর্ষণ করিবে

৩। যত দিন মনে ছুইটি বিপরীত বৃত্তি-প্রবাহ থাকিবে, তত দিন ছুঃখ-নিবৃত্তির আশা! কোথায়?

৪1 ধন মানের বাসনা যখন জাগে, তখন সাধকের মন ধর্মকে পরিত্যাগ করিতে এবং কপটতার আশ্রয় গ্রহণ করিতে ইচ্ছা করে।

৫। যে ব্যক্তি ভগবৎ-প্রাপ্তির উদ্দেশে সকল ত্যাগ করিয়াছে, ভগবান কি তাহাকে পরিত্যাগ করিতে পারেন?

১১৮

বেদ-বাণী

৬। বৈরাগ্য-ভাস্কর উদ্দিত হইলে ভক্তি-পদ্ম আপনি ্রন্ফুটিত হয়। |

৭। ভক্ত কখনও নিজকে প্রচার করে না।

৮। লোক যেমন যত্বপূর্বব স্বীয় কুকর্ম গোপনে রাখে, তুমি তোমার সাধনও তেম্নি গোপনে রাখ

৯। ধন্মাচরণ-লোককে সন্তষ্ট করিবার জন্য নয়, ভগবানকে সন্তষ্ট করিবার জন্য ভগবানকে সন্তষ্ট করিতে সচেষ্ট হও, তা'তে লোকে যা ভাবে ভাবুকৃ।

১০। সকলকে সন্তষ্ট করা অসম্ভব যাঁহাই কর,--- কাহারও গ্রীতি, কাহারও অগ্রীতি ঘটিবেই। তবে আর লোক-রঞনের জন্য কর্তব্যকে পরিত্যাগ করিবে কেন?

১১। লোককে সন্তষ্ট করিবার জন্যই হউক্‌, কিনব! অন্য কোন উদ্দেশ্ঠেই হউক্‌, কখনও সরলতাকে পরিত্যাগ করিও না।

১২। রাম, লক্ষণ সীতা একত্রে বনগমন করিলেন রাম--বিবেক, লক্ষণ-_বৈরাগ্য, সীতা--ভক্তি। ১১৯

বেদ-বাণী

১৩। একজন সাধু কাহাকেও উপদেশ দিতেন ন।। কারণ জিজ্ঞাসা করায়, তিনি উত্তর করিলেন, (খন আমার হৃদয়ে উপদেশ দিবার বাসন! জাগ্রত হয়, তাই উপদেশ দিই না1।”

১৪। একজন সাধু প্রায়শঃই চুপ করিয়া থাঁকিতেন। কাহারও সমালোচনা করিতেন না, কোন-তর্ক-বিতর্কেও যোগদান করিতেন না। কেহ কারণ জিজ্ঞাসা করিলে তিনি উত্তর করিতেন, “সত্য বলিলে জগতের অগ্রীতি, আর মিথ্যা বলিলে ভগবানের অগ্রীতি তাই অনেক সময়েই চুপ করিয়া থাকি।”

১৫। আর একজন সাধুর কথা শোন। প্রায় ত্রিশ- বৎসর পূর্ধে--তিনি তখন ৬কাশীধামে থাকিতেন__-একদিন এক গুগ্ার প্রহারে জঙ্জরিত হইয়া স্ৃতপ্রায় অবস্থায় একটি গলির পার্থ পড়িয়াছিলেন। কয়েকজন ভদ্রলোক তাহাকে তদবস্থায় দেখিতে পাইয়া উপযুক্ত স্থানে লইয়া গিয়া শুশ্রষা করিতে লাগিলেন কিয়ৎকাল পরে সাধু যেন কিছু স্থস্থতা বোধ করিলেন কথা বলিতে সক্ষম হইলেন “কে আপনাকে প্রহার করিয়াছে ?-_জিজ্ঞাদিত হওয়ায় তিনি উত্তর করিলেন, “যিনি সেবা করিতেছেন,

৯২০

বেদ-বাণী

তিনিই প্রহীর করিয়াছেন।” অল্পকালের মধ্যেই কয়েক- জন পুলিশ নাগরিকের চেষ্টায় অপরাধী গ্রপ্ডাটা ধৃত হইয়া তথায় আনীত হইল একজন পুলিশ-কর্মচারী সাধুকে বলিলেন, “এই লোকটাই আপনাকে প্রহার করিয়াছে কিনা, বলুন ।” সাধু উত্তর করিলেন, “আহা! এই শরীরটাকে এত ক্লেশ দ্রিতেছ, ইহাকে ছাড়িয়া দাও শরীর যে ভগবানের মন্দির 1” এই বলিয়! উদ্দেস্টে ভগবানকে প্রণাম করিলেন |

১৬। আরও একজন সাধুর কথা বলি। ইনি এখনও জীবিত আছেন। এক সময়ে ইহার ইচ্ছা হইয়াছিল, তপস্তার অনুকুল একটা আশ্রম প্রতিষ্ঠিত করিবেন। কিছুদিন পরে ইহার পায়ে একটা ফোড়া হইল ফোড়াটা কিছু যন্ত্রণাও প্রদান করিল। তিনি ভাবিলেন, “একটা সামান্য ফোড়ার হাত হইতে আত্মরক্ষা করিতে আমি অসমর্থ” আর আশ্রম প্রতিষ্ঠিত করিয়া জগতের কল্যাণ সাধন করিতে নিজকে সমর্থ মনে করিতেছি! ধিক আমার অভিমানে ।” আর আশ্রম করা হইল না !

১৭। তুমি যখন নিজ্জনে বসিয়া থাক তখনও তথায় যে চৈতন্য বিরাজমান, কোন মৃদ্ভি নিকটস্থ হইলেও সেই ১২১

বেদ-বাণী

চৈতন্যই তথায় বিরাজমান তুমি স্থান ত্যাগ করিলেও তথায় সেই চৈতন্য বর্তমান। একই ঠচতন্য সর্বদা সর্বত্র পূর্ণবূপে বর্তমান

১৮। কপণতা সাধকের দুঃখের কারণ

১২২

৫৫

১। অষ্ট পাশ কি জান? কুল, শীল, মান, ঘ্বণা, লজ্জা, ভয়, আশঙ্কা জুগুপ সা-_-এই আটটি পাশবদ্ধ_জীব ; আর, পাশমুক্ত-শিব।

২। সংসার-সাগরের ছয়টা তরঙ্গ মানুষকে বিব্রত করে। শোক মোহ, ক্ষুধা তৃষ্ণ, জরা মৃত্যু-_-এই ষড়োশ্মি। প্রথম ছুইটি মনের, তার পরের দুইটি প্রাণের ও. শেষ দুইটি শরীরের ধর্ম

৩। মোক্ষের সাধন তিনটী-_তত্জ্ঞান, বাসনাক্ষয় মনোনাশ। যোগবাশিষ্ট বলেন, এককাঁলেই এই তিনটার অভ্যাস করিতে হইবে।

৪। একত্বদর্শা সাধকের পক্ষে লোকের সদসৎ ব্যব- হারের বিচার সমীলোচন! কর্তব্য নহে।

১২৩

বেদ-বাঁণী

৫। গীত৷ বলিয়াছেন, “মনঃপ্রসাদঃ”। ধাতু-বৈষম্য যেন না ঘটে। সহিষ্ণুত। ব্যতীত সিদ্ধি-লাভ হয় না৷

৬। ভগবান তাহার বিশাল রাজ্যসমূহে অনন্তপ্রকারের বৈষম্য, বৈপরীত্য শক্রতার পালন পোষণ করিতেছেন, আর আমর! আমাদিগের স্ব স্ব প্রকৃতি হইতে এক চুল পরিমীণ বিভিন্নতাঁও সহ করিতে নারাজ!

৭। যেযেবস্তর প্রতি আসক্তি থাকে, সেই সেই বস্তর সুখরূপত্ব বিচার দ্বারা বঙ্জন করিয়! পরিণাম ছুঃখ- 'হেতুত্ব দর্শন করিতে হয়। আরও চিন্তা করিতে হয়, এইটি আমাকে সাধন-পথ-ভ্ষ্ট করিবার জন্যই মনোমোহনরূপে সমাগত হইয়াছে; আমাকে অধঃপাতিত করিয়াই,বিদ্রপের হাসি হাসিতে হাসিতে চিরবিদায় গ্রহণ করিবে। তখন অন্তাপ- বৃথ! অন্গতাপই সার হইবে

৮1 যারা সংসারে “আপনার জন”, তারাই ধর্মকর্ধে বাধা প্রদান করে, তারাই উন্নতির পরিপন্থী!

আমক্তিবশত;ই--মর্ধ্যাদা লঙ্ঘিত হয় ; বুদ্ধি হ্রাস- প্রাপ্ত হয়; ছুঃখ, দৈন্য, ভয় সন্তাপ জন্মে এবং ধশ্ম ুর্মভ হয়।

১২৪

বেদ-বাণী

১০। গুটিপোকা নিজ-শরীর-জাত সুত্র দ্বারা নিজেই স্বশরীরকে দৃঢ়রূপে বন্ধন করে এবং পরে সেই বন্ধন ছেদন করিতে না পারিয়া তন্মধ্যেই দেহত্যাগ করে। মানবও কতকগুলি কাল্পনিক সম্পর্ক-জালে নিজকে বন্ধন করে এবং পরিশেষে সেই বন্ধনের সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু- কারাগারে উপস্থিত হয়।

১১। বিষয়ই বৈতরণীনদী, মুমুক্ষু সাধক প্রযত্বসহকারে অবিলম্বে ইহার পরপারে গমন করিবেন

১২। তুমি অনন্ত, সর্কগত, মহ্ান্‌। কিন্তু যখনই একটা ক্ষুদ্র বাসনা-বুদ্‌বুদ মনে উঠে, তখনই সাড়ে তিন হাত খাচার মধ্যে আবদ্ধ হও !

১৩। কামনাশূন্ত আমি শরীরে থাকিয়াও অশরীরী, মুক্ত, আনন্দময়, শান্তিময় কামনাযুক্ত হইলেই শরীরী, বদ্ধ, ভীত, দুর্বল ছুঃখময়।

১৪। “আমি কর্তা” “ইহাই আমার কর্তব্য”, “ইহা না করা অন্ায়”-:এই বুদ্ধিই কম্মের বীজ, ইহা হইতেই ংসার।

১২৫

“বেদ-বাণী

১৫। “হৃদয়-গ্রস্থি 1” গ্রস্থি-হৃদয়ের, আত্মার নহে

১৬। আমি কর্তীও নহি, ভোক্তাও নহি কর্তৃত্ব ভোক্তত্বাদি অন্তঃকরণের ধর্ম

১৭। ছোট বড় যে কোন কম্মই করিতে হয়, তৎ সঙ্গে সঙ্গেই মনে করিতে হয়_-“ইন্দরিয়া ইন্দ্রিয়াথেষু বর্তস্তে “নৈব কিঞ্চিৎ করোমি”।

১৮। আত্মানাম। রূপ ক্রিয়া হইতে ভিন্ন অথগ্ড সচ্চিদানন্দ। আত্মার কোন কম্দ্ কম্দমফল নাই

১৯। কাহারও কোন কম্ম আত্মাকে তিলমাত্রও স্পর্শ করিতে পারে না আত্মা সর্বদা একনপ, নির্বিকার, নিক্ষল, নিত্য অক্রিয়।

২০। আত্ম! আকাশবৎ নিলিপগ্ত, অসঙ্গ, দ্ুষ্টী নিবিষয়। |

২১। ক্কমধুর সঙ্গীত এবং প্রশংসার মনোমোহন-ধ্বনি ; মিথ্যা, নিন্দা এবং কর্কশ অযৌক্তিক বচন; লাবণ্যময় সৌন্দর্য এবং কুৎ্সিৎ বিরুতাঙ্গ কলেবর--এসকল কিছুই

১২৬

বেদ-বাণী

আত্মাকে স্পর্শ করিতে পারে না। আকাশে মুষ্টি-নিক্ষেপবৎ সকলে আত্মার কিছুই আসে যায় না অবিবেকীই প্রিয় রূপ-রসাদি দ্বারা নিজকে মহীয়ান্‌ মনে করে, আবার অপ্রিয় বিষয় দ্বারা নিজকে দীন-হীন মনে করে।

২২। সংদারিগণ আত্মার সহিত বিষয়ের কতকগুলি কাল্পনিক সেতু প্রস্তুত করিয়া অহরহঃ তদুপরি বিচরণ করে তৎফলে বারংবার জন্ম-মৃত্যুর অধীনতা৷প্রাঞ্চ হয়।

২৩। বিচারই মুমুক্ষু ব্যক্তির পরম বন্ধু। বিচার শাস্ত্রান্তকুল হওয়! চাই

২৪। মুক্তি-লাভের জন্ত যে চেষ্টা, তারই নাম পুরুষকার; অন্যান্য কম্ম পশুচেষ্টা মাত্র

১২৭

১। এক যাঁয়গায় এরূপ লেখা আছেঃ পরত্রক্ম পরমশিব ত্রিপুর-বধ-বাঁসনায় সজ্জিত হইলেন। তাহার সেই অভিযানে--( অভিযানে, না অভিনয়ে? )-_সাহায্য করিবার নিমিত্ত দেবগণও প্রস্তুত হইলেন। দেবতাদিগের মধ্যে কেহ হইলেন রথ, কেহ ঘোড়া, কেহ বা সারথী; কেহ হইলেন ধন্গু, কেহ শর, আর কেহ বা তুণীর এইরূপে প্রত্যেক দেবতাই কোন না কোন কর্ণ নিযুক্ত হইলেন। তখন হঠাৎ্ৎ সেই দেবমগ্ুলীর ভিতরে, কেনোপনিষদের দেবগণের মত, “অহং»-ভাব প্রাদুভূ্ত হইল। পৃথিবী মনে করিলেন, “আমি যদি রথ না হইতাম, তবে এই যে উদ্যোগ-আয়োজন,_-সবই পণ্ড হইয়। যাইত। ব্রদ্ধার মনে হইল, 'ভাগ্যে আমি সারথী হইয়াছি! নইলে দেখা যাইত-যুদ্ধটা কেমন চলে !” বিষ্ণু ভাবিলেন, “আমি শর হইয়াছি বলিয়াই না জিপুর- বধের আঁশা হইতেছে? আমার শক্তির উপরই সফলতা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করিতেছে ।' সর্ববান্তর্ধ্যামী ভগবান শস্তু দেবগণের এই অভিমানানন্দ তৎক্ষণাৎ জানিতে

১২৮

বেদ-বাণী

পারিলেন ; জানিয়াই, একটি হাস্য করিলেন ; এবং কেবল সেই হাস্তেই--দেবগণের সামান্য সাহায্য ব্যতীতও-_ ত্রিপুরাক্থর ধ্বংসপ্রাপ্ত হইল

২। মহারাষ্ট্রদেশে একজন সাধু ছিলেন; নাম__ জ্ঞানদীস। জ্ঞানদাস খুব ভক্ত; মাঝে মাঝে তিনি ইষ্টদেবের দর্শন পাইয়া থাকেন। একদিন এক ভাগারায়* অন্ান্ত সাধুর সহিত জ্ঞানদাসজীও পঙক্তিতে বসিয়াছেন, এমন সময়ে এক মহাপুরুষ সেখানে উপস্থিত হইয়! উপবিষ্ট সাধুগণের মন্তকে হস্তার্পণ করিয়া, কোন কোন সাধুকে “এ কাচ্চা”» কোন কোন সাধুকে “এ পাক্কা” বলিতে লাগিলেন জ্ঞানদাসজীকে তিনি “কাচ্চা”র দলে ফেলিলেন। জ্ঞানদীস দুঃখিত হইলেন ; ভাবিলেন, “ভগবান কৃপ। করিয়া মাঝে মাঝে আমাকে দর্শন দিয়া থাকেন, তবুও আমি কাচ্চা ! সেই রাত্রেই যখন ভগবান আবিভূ্ত- হইলেন, তখন জ্ঞানদাস জিজ্ঞাসা করিলেন, “ঠাকুর ! তোমার দর্শন পাইয়াও আমি কাচ্চা, আর যারা তোমার দিব্য-মুদ্তির দর্শন পায় নাই, তাদের মধ্যেও কেহ কেহ পাক্কা হইয়। গেল 1” আরাধ্যদেব বলিলেন, “হা জ্ঞানদাস ! তুমি কাচ্চা। অমুক স্থানে এক বৃদ্ধ ফকির আছেন, তার শিশ্তযত্ব গ্রহণ করিলে পাক্কা হইতে পারিবে ।” কি অদ্ভুত

* ভাগারা--ভোজ, পঙক্তি-ভোজন ১২৯

বেদ-বাঁণী

আদেশ ! অনাচারী শ্লেচ্ছ সুসলমান্‌্”-তার শিল্ত হইতে হইবে? অনেক ভাবিয়া চিত্তিয়্া জ্ঞানদাস মন স্থির করিলেন এবং ধীর-পদ-বিক্ষেপে ফকির সাহেবের নিকটে উপস্থিত হইলেন। কিন্তু হরি! হরি! দেখিতে পাইলেন কি? একটি শিবলিঙ্গের উপরে পদদঘ্বয় স্থাপন করিয়! ফকির সাহেব অতি আরামের সহিত নদী-সৈকতে বালুকা- শয্যায় শায়িত আছেন নিষ্ঠাবান ভক্ত জ্ঞানদাসের মন চঞ্চল হইল ক্ষোভে, ক্রোধে তীহার বদনম্গুল ভাবাস্তর প্রাপ্ত হইল তাহার মুখের দিকে চাহিয়! বুদ্ধ ফকির স্সেহ- ব্যগ্রক ত্বরে বলিলেন, “জ্ঞানদাস! কি ভাবিতেছ ?” জ্ঞানদাস বলিলেন, “শিবলিঙ্গ ব্যতীত অপর কোনও স্থলে কি আপনি পা রাখিতে পারিতেন না?” বৃদ্ধ বলিলেন, “আচ্ছা, তোমাঁর যেখানে খুসী, আমার পা ছু'খানা রাখিয়া দাও ।” জ্ঞানদাস পা ছু'খানাকে লইয়া যেখানেই স্থাপন করেন, সেখানেই দেখিতে পান-_পায়ের নীচে একটি শিবলিঙ্গ জ্ঞানদাস ঘর্াক্ত-কলেবর হইয়া বৃদ্ধের পদ- প্রান্তে বসিয়া পড়িলেন এবং কিয়ৎকাঁল পরে তার শিশ্তত্ব গ্রহণ করিলেন [গল্প শুনিলে;_-এখন, কোন কোন মহাভারত-শ্রবণকারীর মত, তোমরাও দেবযুদ্তি দেখিলেই পদীঘাত করিতে যাইবে না কি ?]

৩। অবরুদ্ধ ক্ষুন্্র প্রকোষ্ঠের মধ্যে যে প্রদীপ

১৩০

বেদ-বাণী

জলিতেছে, তাহার অস্তিত্ব প্রকাশ-শক্তি বহির্ভাগে কিঞ্চিন্নাত্রও অনুভূত হইতেছে না। প্রাচীরগুলি ভাঙ্গিয়া দাও, দেখিবে-__উহার আলো! সর্বব্যাপী হইয়াছে! তেমনই, যখনই জীব মোহ-নিম্মক্ত হইবে--যখনই তাহার অজ্ঞান।- বরণ অপসারিত হইবে, তখনই সে বুঝিবে, অন্ুভব করিবে-তাহার অস্তিত্ব এবং তাহার (ইচ্ছা, জ্ঞান ক্রিয়। ) শক্তি সর্বগত এবং সনাতন

৪1 ম্নযদি ভগবৎ-পদারবিন্দে লিপ্ত না হয়, তবে ৮৪ প্রকার আসনের অভ্যাসেই ব| লাভ কি, রাশি রাশি শাস্ত্-গ্রন্থ কস্থ করিয়াই ব। ফল কি, সারাদিন ধরিয়া তার স্বরে স্তোত্র পাঠেই উপকার কি, আর উপবাসাদি- ক্লেশ-সহনেরই বা! সার্থকতা কি?

৫। আসন-প্রাণায়ামই কর আর শাস্ত্র-চচ্চাই কর, জপ-পূজাই কর আর চান্দ্রায়ণাঁদিই কর, সর্বদা লক্ষ্য স্থির থাকা চাই,_যেন এগুলিতে মন স্থির করে, ভক্তি বদ্ধিত করে, জীবন ধন্য করে। নতুবা অন্যবিধ অপকার অসুবিধা ঘটাইবার সহিত ইহারা তোমার অভিমানের বোঝা আরও বাড়াইবে মাত্র

৬। একটি মাত্ত উপদেশের সম্যক পালনেই জীবন ১৩১

বেদ-বাণী

উন্নত ধন্য হইতে পারে একটি মাত্র শব্দের উচ্চারণেই মন ভাব-রসে নিমজ্জিত হইতে পারে।

৭। আদর্শটি নির্দোষ সর্কবোত্রুষ্ট হওয়া চাই যদি সে+টিকে সম্যক প্রকারে অনুসরণ করিতে না-ও পার,

যতদূর সাধ্য ততদূরই করিও ;_কদাীঁপি আদর্শকে ছোট করিও না।

৮। বেশ লইবে ত্যাগীর মত, আর রী করিবে হি মত,--এ ভাল নয়

৯। আমাদের বৃদ্ধ-প্রতিবেশী নারায়ণের কথা মনে কর। বৌধ হয় মনে আছে, সে এক সময়ে তোমার মিত্র (তুমি তাহাকে মিত্র মনে করিতে )ও আমার শক্র (আমি তাহাকে শত্রু মনে করিতাম ) ছিল। তাহার নিকট হইতে তুমি আশা করিতে স্সেহ সহাহ্ভূতি, আমি আশা করিতাম শক্রতা অপকার। তাহার মধ্যে তুমি দেখিতে বদান্ততা, আমি দেখিতাম যশোলিপ্সাঁ। তুমি বলিতে পলোকট! কি ধার্মিক!” আমি বলিতাম--“লোকটা কি কপট 1” তাহার রূপ দেখিলে, তাহার ক-শ্বর শুনিলে, সে কাছে খেঁষিলে--তোমার হইত আহ্লাদ, আর আমার হইত স্বণা বিদ্বেষ তার নাম মনে পড়িলে--তোমার

১৩২

বেদ-বাণী সামনে হাজির হইত একখানা “মধুর মৃন্তি” আর আমার সামনে দেখিতাঁম একখান। “বিকট চেহারা”। সে লোক একজনই--এক নারায়ণই, তথাপি তোমার আমার মনে তার ছবি সম্পূর্ণ পৃথকূ ; এক নীরায়ণেরই ছবি ছুই মনের উপর দুই রকম, বিভিন্ন মনের উপর বিভিন্ন রকমের

১০। লিখিবার উপকরণ--কলম, কালী, কাগজ প্রভৃতি ভাল না হইলে লেখায় সুবিধা হয় না সাধনের উপকরণগুলিও ভাল হওয়া চাই। নতুবা» সাধনে স্থবিধ হয় না।

১১। যে কাজের ভার ব৷ দায়ীত্ব গ্রহণ করিবে, তাহার স্ুসম্পাদনের জন্য প্রাণ-পণে যত্ব করা চাই।

কর্ণবাস।

১৩৩

১। চারি প্রকার শ্রদ্ধা চাই--(১) ভগবানের উপর, (২) গুরুর উপর, (৩) বেদের উপর (৪) নিজের উপর।

২। যত আসক্তি,--তত চাঞ্চল্য, তত অশাস্তি।

৩। বৈরাগ্যে স্থপ্রতিষ্িত না হইলে ধ্যান-নিষ্ঠ ইওয়৷ যায় না।

৪। দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করিয়া রাম লক্ষ্ণকে বলি- লেন, প্লক্্মণ! তুমি বিবেচক কর্শ-কুশল। কুটার- নিম্ধাণের উপযোগী স্থান নির্ধারিত কর।” লক্ষ্মণ বলিলেন, “আমি বরাবরই আপনার দাস। আমার কোনরূপ স্বাতন্ত্রই নাই। আমার ভাল মন্দ সকলই আপনি আপনাকে ছাড়িয়া অন্য কোনরূপ বিচার আমার আসে না আপনিই স্থান নির্ধারণ করুন। আপনি যে স্থান পছন্দ করিবেন, সেই স্থানই আমার ভাল লাগিবে।” রাম সন্তষ্ হইয়া স্থান নির্দিষ্ট করিলেন। রামময়-প্রাণ লক্ষণ কুটার

১৩৪

বেদ-বাণী

নিশ্মাণ করিতে লাগিলেন দেবতার। ভীলক্প ধারণ করিয়! লক্ষণের সহায় হইলেন। অবিলম্ষে স্থদৃগ্ত সুদৃঢ় আশ্রম প্রস্তুত হইল। লক্ষণ রামের প্রসাদ প্রাপ্ত হইলেন।

৫। যখনই তপস্তার বিদ্ন উপস্থিত হয়, সে বিদ্বের মধ্যেও যথা-সম্ভব শান্ত মনে ভগবানকে দর্শন করিতে অভ্যাস কর। ধধ্য-হীন হইও না। এখন সামান্ত অন্তরায়ই যদি তোমার মনকে অস্থির করে, ভগবানকে ভূলাইয়| দেয়, তবে শেষ মুহূর্তে_সৃত্যু যন্ত্রণার মধ্যে--তাকে মনে রাখিবে কিরূপে ?

৬। তন্ময় হইলে তিনিই যোগ-ক্ষেম বহন করিবেন ; _-তবে আর চিন্তা কি? তবে, “তিনি যোগ-ক্ষেম বহন করিবেন”-এ আশা লইয়া সাধন করিতে বস! মন্দের ভাল মাত্র। এয! হয় হউক্‌, সাধন করিব"__-এই চাই |

৭) চিত্ত অনেকটা শুদ্ধ হইলে জ্ঞানাভাস আসে, তৎপর পর-বৈরাগ্য, তৎপর শাস্তি

৮1 কতকৃটা বল! যায় না, আর কতকৃটা বল! উচিত না।

১৩৫

বেদ-বাণী

৯। কোন রূপের উপর স্সেহ, কোঁন ব্ূপের উপর বিদ্বেষ, কোন রূপের উপর ভয়,_-এরূপ হইলে, বিশ্ব-মুস্তি পূর্ণ-ত্রন্মকে পাওয়া যায় কিন্ূপে ?

১০। উপযুক্ত দানই প্রকৃত সঞ্চয় : ১১। সকলেরই সকল নাম

১২। অতীতের অনস্ত জন্মে ছুঃখ-নিবৃত্তির জন্য বিষয়- সেবা! করিয়াছি, এবারও এত দিন করা গেল। কিন্তু তাতে ফল হইল কি? একবার বরং অন্য চেষ্টা করিয়া দেখা যাক না?

১৩। আসক্তিই বুদ্ধির মল।

১৪1 উপায়_-শান্ত্র-সম্মত হওয়া চাই। উদ্দেশ্ট-_ সর্বদা মনে থাকা চাই।

১৫। ধন্মলাভ করিতে হইলে চারি প্রকার কপার প্রয়োজন ১৫১) ঈশ্বর-কৃপা, ২) গুকু-কপা, (৩) বেদ- কপা-ও 0) আত্ম-কপা ..

১৩৬

বেদ-বাণী

১৬। সন্ন্যাস মানে কি?--ভগবানে সম্পূর্ণ আত্ম- বিসর্জন

১৭। আচাধ্য যদি কেবল শিষ্তের মনস্তষ্টি সাধন করিতেই তৎপর হন, তবে শিল্তের কুশল হয় না।

১৮। স্থষ্টি দুই প্রকার,_-ঈশ্বর-স্থট্টি জীব-স্থষ্টি | ঈশ্বর-স্থষ্টিতে কোন হানি নাই; জীব-্থষ্টিই বন্ধনের কারণ।

১৯। এক জোড়া প্রেমের চশ্মা যদি পাও একবার পরিয়া দেখ--“জড় বালুকণ এবং প্রস্তরথণ্ডের মধ্যেও কত জীবন, কত লীলা! তার তোমার দিকে চাহিয়। কত হাসিবে--কত খেলিবে--কত বলিবে--কত শিখাইবে __ কত রহস্তের গুচ-দ্বার উদঘাটিত করিবে

২০। প্রভৃহেও কত অধীনতা ! হাতী চালাইতে হইলেও বাধ্য হইয়। মাহুতগিরি করিতে হয় !

২১। দারিদ্র্যের অন্ত কোথায়? তুমি কাহারও নিকটে যশের প্রার্থী, কাহারও নিকটে অর্থের ভিখারী, ১৩৭

বেদ-বাণী

কারও সহাশ্ত বদন দেখিবার জন্য লালায়িত। অনেকের নিকটেই ব্যবহার-বিশেষ পাইবাঁর জন্য সর্বদা ব্যগ্র। ছোট- বড়, শত্র-মিত্র, প্রভু-ভূত্য, ভাই-ভগ্মি, পিতা-পুত্র সকলেরই নিকটে কিছু-না-কিছু আশা করিতেছ ! হাঁয় মানব!

২২। কিবিড়ম্বনা! দীনাঁতিদীন, মূর্খের একশেষ, তৃণাদপি নগণ্য, সমাজের ঘ্বৃণিত এক রাস্তার-বালকও নিন্দা দ্বারা তোমাকে কষ্ট প্রদান করিতে, প্রশংস। দ্বারা তোমাকে সখ দান করিতে এবং ব্যবহাঁর-বিশেষ দ্বারা তোমার অন্তবিধ চিত্ত-চাঞ্চল্য ঘটাইতে সর্বদাই সমর্থ! তুমি ত্বত্ত দুঃখের অধীন, তার দ্বারে স্থখের কাঙ্গাল, তার ভয়ে তুমি ভীত! তোমার আবার স্বাধীনতা! তোমার আবার এশ্বধ্য ! তোমার আবার প্রতৃত্ব

২৩। রামের প্রয়োজন সত্বেও সে এক ফোটা ছুধ খেতে পায় না) আর তুমি তার এঁ প্রয়োজন এবং অন্থান্ত স্কবিধা-অস্থবিধার দিকে মোটেই দৃষ্টিপাত না করিয়া, তার তোমার বন্ধু শ্টামের জন্য ছুপ্ধ-বহনে তাকে অঙন্গরোধ করিলে একি ভাল?

২৪। ইশ্বর সর্বশক্তিমান হ্ইয়াও সর্বদা সর্বত্র লুকাইয়া আছেন ; আর দুর্বল মাঁচ্ষ চায় সর্ধদা নিজকে যথা অযথা ব্ধপে প্রকাশ করিতে !

১৩৮

বেদ-বাণী

২৫। বাসনার মূল সন্বল্প। সঙ্কল্প-পরিত্যাগে বাসনার ক্ষয় হয়। বিষয়ের আলোচনা সর্ধ্থা পরিহ্র্তব্য।

২৬। স্থিতিকে আশ্রয় না করিয়া গতি থাকিতে পারে না। শিবকে আশ্রয় করিয়া কালী নৃত্য করিতেছেন।

২৭। অজ্ঞানও এক প্রকারের জ্ঞান। আবার অন্ত পক্ষে, জ্ঞানও এক প্রকারের অজ্ঞান

২৮1 এক ঈশ্বরেচ্ছাই এবং এক ব্রহ্ষানন্দই বিভিন্ন কোশের ভিতর দিয় বিভিন্ন রূপে প্রকাশিত হয়।

১৩৯

১। ডাক্তারখানায় কত গুঁধধ আছে, কিন্তু প্রত্যেকটি গুঁধধই সকলের জন্য নয়। শান্ত্র-ভাগ্ারেও হাঁজার হাজার উপদেশ আছে, কিন্তু তার প্রত্যেকটিই প্রত্যেকের জন্য নয়। ওষধ উপযুক্ত না হইলে, উপশম দূরের কথা, রোগের বৃদ্ধিও অসম্ভব নয়।

২। যদি আম-বাগানেই আসিয়াছ, তবে আম খাওয়ার পরিবর্তে (কেবল) পত্র-গণনায়ই সময় পাত করিও না। যদি গীতা পড়িতেই বসিয়াছ, তবে তাহা হইতে উপদেশ গ্রহণের পরিবর্তে, গীতাকারের কবিত্বের আলোচনায়: ই) মনোনিবেশ করিও না। যদি সংকীর্তন শুনিতেই বসিয়াছ, তবে ভগবানের নাম মহিমায় অমনো- যোগী হইয়া, তাল-মানের : শুদ্ধাশুদ্ধতার নিরূপণে( ই) ব্যস্ত হইও না।

৩। প্রত্যেক দ্রব্য, প্রত্যেক শক্তি প্রত্যেক সময়েরই সর্বোত্তম ব্যবহার করিতে হইবে ১৪০

বেদ-বাণী

৪। সময়-নিষ্ঠা নিয়ম-নিষ্ঠা সচ্চরিত্রতার প্রধান অঙ্গ

৫) যতটুকু সম্ভব, ততটুকু মন এবং ততটুকু সময়ই বর্তমানে সাধন-ভজনে লাগাও ; বাকী মন বাকী সময়- টুকুর এমন ব্যবহার কর, যাহার ফলে ভবিষ্ততে সম্পূর্ণ মন সম্পূর্ণ সময়ই ভগবানে লাগাইতে সমর্থ হইবে

৬। সাধনের জন্য একটি ভাব, তা যাই হোক্‌, ধরিয়া থাকা চাই “কখনও এটি, কখনও ওটি*__এক্প হইলে স্থবিধা হয় না।

৭। যখন সাংসারিক কর্ম করিতে হয়, তখন পরীক্ষা করিতে চেষ্টা করিও-__কম্্টি তোমার সাধনের “ভাবশটিকে গ্রাস করিতেছে কি না, কর্ম-শ্রোতের টানে ভগবানকে বিস্বাত হইতেছ কি না, এবং সাধনের পরিপন্থী কোন ভাব তোমার ভিতরে প্রবেশ করিতেছে কি না। যদি সতর্ক থাক, তবে, অভ্যাসের ফলে, কম্মের সময়েও সাধনের ভাব বজায় থাকিবে এবং ভগবচ্চিন্তা চলিবে

৮। বাসনা, সংস্কার--এগুলি আর কি ?--মনের বিভিন্ন প্রকারের স্পন্দন মাত্র অভ্যাস দ্বারা এগুলি ১৪৭

বেদ-বাঁণী

দৃট-মুল হইয়াছে অভ্যাসে যাহার জন্ম অভ্যাসে তাহার মৃত্যুও অবশ্তস্ভাবী। স্পন্দনগ্তলি রৌধ কর, বিরুদ্ধ স্পন্দনের অভ্যাস কর, কালক্রমে বাসনা সংস্কার দূর হইবেই।

৯। যখনই “আমি”--এই শব্দ মনে উদ্দিত হয়, অমনি ভাবিবে, "আমি মানে দেহ নয়, আমি মানে আত্মা, আমি ব্রহ্ম |”

১০। সকল শরীরই আমার, সকল শরীরেই আমি; তবে কে আমাকে ঠকায়, কে আমার শক্র, কে আমাকে নিন্দা করে?

১১। আমি ভিন্ন আর কে আছে ?_-আমিই আমার প্রশংস। করি, আমিই আমার নিন্পা করি। তবে আর প্রশংসা নিন্দীর জন্য স্খ-ছুঃখ কি?

১২। আমি বরাবর আছি, বরাবর থাকিব আমার আবার জন্ম, মৃত্যু কোথায়? |

১৩। আমাকে আশ্রয় করিয়া--আমার ভিতরে অনস্ত- €কোটি ব্রহ্মাণ্ড ঘৃণিত হইতেছে, গ্রহ-নক্ষত্র চলিতেছে, ১৪২

বেদ-বাঁণী

বায়ু বহিতেছে, পাতা নড়িতেছে, এই শরীর অন্থান্ত শরীর ( সমুদয় জীব-জন্ত ) বিচরণ করিতেছে, এই মন অন্তান্স সকল মন স্পন্দিত হইতেছে ইহাতে--এই সকল কম্পনে আমার কিছুই আসে যায় না। আমি নিঃসন্, নির্ব্বিকার, ধীর, স্থির, শাস্ত, উদ্বাসীন, সর্বব্যাপী পরমাত্া। “টনৈব কিঞ্চিৎ করোমি।”

১৪।, সকলই ক্রহ্ম। ভোক্তা, ভোজ্য ভোগ; জ্ঞাতা, জেয় জ্ঞান ত্রষ্টা, দৃশ্ত দর্শন; কর্তা, কর্ম ক্রিয়া ;_এ সকলই ্রহ্ধ। দ্রব্য, গুণ ক্রিয়া প্রত্যেকেই ্্ম। ব্রদ্মভিন্ন আর কিছুই নাই। যা কিছু সকলই ব্রন্ম। তবে আর ভাল-মন্দ কি? বন্ধন-মুক্তি কি? ত্যাজ্য-গ্রাহ্থ কি?

১৫। ু-টি কৌোথায়ও নাই। আমি তুমি, আমার অন্যের-_এ সকলই ফাকি!

১৬। অংশহীন, সর্বব্যাপী মাত্র এক সত্বাই বর্তমান তবে আর “আমি পরোপকার করিতেছি”__এরূপ অহঙ্কারের স্থান কোথায়?

১৭। আমি শরীর নই ৮-তবে আর শরীরের কর্মে আমীর অভিমান হইবে কেন? |

১৪৩

বেদ-বাণী

১৮। নিজকে কেন আমি “গাড়ে তিন হাত” গণ্ডির মধ্যে শুধু-শুধু আবদ্ধ করিয়া সঙ্থীর্ঘতা, অন্ুদারতা বিদ্বেষ-বুদ্ধিকে প্রশ্রয় প্রদান করিব?

১৯। “সর্বং খন্দিদং ত্রদ্ষ, তজ্জলান--ইতি শান্ত উপাসীত”। |

২০। “এই কর দেব দীন-দয়াময় ! তোমায় আমায় যেন ভেদ নাহি রমন) জলের তরঙ্গ জলে কর লয়, চিদ্ঘন শ্যামস্ন্দর 1”

২১। আমি যে অচল, অটল, সর্বব্যাপী ব্রহ্ম ;-- আমার আবার যাওয়া-আসা কি? আমার কর্মই ব| কি?

২২।, আমি ভিন্ন যে আর কিছুই নাই,_-আমার আবার বাসনা কি?

২৩। এক ত্রদ্ষই আছেন। যা কিছু সকলই ব্রদ্ধ। আমিও ত্রদ্ম। আমি ব্রহ্মই।

১৪৪

বেদ-বাণী

২৪। “একমেবাদ্বিতীয়ম্” ;_কার তরে ক্রন্দন, কার জন্য প্রফুল্লতা, কার নিমিত্ত ভাবনা, আর কিসের জন্তই বা ছটাছুটি?

২৫। “আমি শরীর” «এই শরীরটিই আমার” এই ছুই মিথ্যাজ্ঞানকে আশ্রয় করিয়াই সমুদয় লোক-ব্যবহার চলিয়া আসিতেছে।

২৬। লোক-ব্যবহারের সময়ে মনে থাক চাই--এ সকল অভিনয় মাত্র। আমি সঙ্গহীন সর্ধগত ক্রহ্ম। অভ্যাসের ফলে এরপ স্তথৃতি লাভ হয়।

২৭। যখন মনে কোন বিষয়-বাসনা উদিত হয়, তখন সেই বাসনা-_সেই ম্পন্দনের মধ্যে ব্র্ষ-দর্শন করিবে। এরপ ত্রহ্ষ-দর্শন ত্রক্ম-্মরণের ফলে বাসনা অন্তহিত হইবে।

২৮। “আমি ব্রহ্ষ”--আমার আবার সাধন কি, সমাধি কি, সিিই কি, আর মুক্তিই বা কি?

২৯। যতক্ষণ অন্ুমানি, টা বিচার। জ্ঞান হইলেই বিচার বন্ধ। 5১৪৫

বেদ-বাণী

৩০। ২৪ ঘণ্টাকে তিন ভাগ করিয়া-এক ভাগ আহার নিজ্রায়, এক ভাগ বিষয়-কর্মে এক ভাগ সাধন- ভজনে ব্যয় করিবে ক্রমে সাধন-ভজনে যতই মন লাগিতে থাকিবে, ততই অন্ত ছুই ভাগ হইতে সময় কাটিয়৷ লইয়া ভজনের সময় বাড়াইতে থাকিবে।

৩১। তুমি হাজার চেষ্টাই কর, জগতের বিন্দুমাত্র কর্তৃত্বও ভগবান তোমার হাতে ছাড়িয়া দিবেন না। তবে আর জগৎ লইয়া! মাথা ঘামান কেন? এস, জগতের সমুদয় চিন্তা পরিত্যাগ করিয়া আমরা আত্মচিস্তায় রত হ্ই।

৩২। যদিও আমর! হূর্ববল, যদিও আমাদের বাধ! বিস্ব অনস্ত, তথাপি হতাশ হইবার কারণ নাই। চড়ুই পাখীর নমুদ্র-শোষণের গল্প জান তো? এস, আমরাও, চড়ুই পাখীর মত, আমাদিগের স্থযৌগ সামর্থ্যের সঘ্যবহার করিতে যথাসাধ্য যত্ব করি; চড়ুই পাখীর মত, আমরাও, ভগবানের ক্কপায়, নিশ্চয়ই সফলকাম হইব

৩৩। মীন্্ষটা যেমনই হউক্‌,--তার ভিতরে দেবস্ব দেখিলে তোমারই লাভ, আর তার ভিতরে পশুত্ব দেখিলে তোমারই ক্ষতি। তোমার যেমন ভাব, তেমন লাভ। ১৪৬

বেদ-বাণী বিষয়ের ভিতরে যদি ভগবানকে দর্শন করিতে পার, তবে বিষয়ের বিষয়ত্ব দূর হইয়া! যাইবে

৩৪। তোমা অপেক্ষা বড়ই বা কে, আর তোম! অপেক্ষা ছোটই বা কে?

৩৫। গীত! বলেন,-_“অনন্তা। ভক্তি” ব্যতীত ভগবান লাভ হয় না। |

৩৬। সাধনের সময়ে যে সকল বিস্তর আসে, তজ্ঞন্ উদ্দিগ্ন বা হতাশ হইও না। শান্ত মনে সাধনে লাগিয়া থাক। ভগবানই সে সকল বিদ্ন দূর করিবেন

৩৭। তোমার ইচ্ছামত সকল কাজ না হইলেই বিরক্ত হইও না।

৩৮1 অন্ত কন ছাড়িয়া আগে আসল কাজটি শেষ করিয়া লও শেষে যদি সময় না পাও?

৩৯। জন্মও একাকী, মৃত্যুও একাকী, ধর্ম-লাভও একাকী

আশ্বিন, শুক্লা ভ্রয়োদশী, ১৩২৩।

১৪৭

১। কুরুক্ষেত্র-যুদ্ধের পর যুধিষ্টির বলিলেন, “কৃষ্ণ! আমাদের সমুদর শক্রই ধ্বংসপ্রাপ্ত হইয়াছে। রাজ্য এখন নিষ্ষপ্টক। কোখায়ও অশান্তির লেশমাত্র বিদ্যমান নাই” বাস্থ্দেব বলিলেন, “নরনাথ ! কয়েকজন দুর্বল অক্রকে পরাস্ত করিয়াই অতিমাত্র আশ্বস্ত হইবেন না। আপনার এক মহশিক্র এখনও জীবিত; কেবল জীবিতই নহেশ-সে আপনারই রাজ্যে থাকিয়া, আপনারই অন্ধ গ্রতিপালিত হইয়া, ক্রমেই অধিকতর বলসম্পন্ন হইতেছে! শে ম্হাশক্র জীবিত থাকিতে আপনার শান্তি-লাভের মন্তাবনা কোথায়?” ত্রস্ত এবং বিম্মিত হইয়া ধর্শ-নন্দন জিজ্ঞাসা করিলেন, “বল কি কৃষ্ণ! এমন শক্রর কোন মন্ধীনই এত দ্রিন জানিতে পারি নাই! তাহার সমুদয় বৃত্তাত্ত অবিলম্বেই বর্ণন কর।” ভগবান বলিলেন, “মহারাজ! নে শক্র আপনারই দেহ-ছুর্গে বদ্ধিত হইতেছে তার নাষঅভিমান?। সে যত দিন অপরাজেয় থাকিবে, তত দিন অশান্তি আপনাকে পরিত্যাগ করিবে না 1”

১৪৮

বেদ-বাণী

২। বাহিনলক দেশে এক রাজা ছিলেন কালক্রমে তাহার বৈরাগ্যোদয় হইল। তিনি রাজোশ্বধ্য পরিত্যাগ পূর্ববক অতি দুরে এক সাধুর আশ্রমে উপনীত হইলেন এবং তাহার নিকটে দীক্ষ। গ্রহণ করিতে চাহিলেন সাধু রাজার প্রশ্নের উত্তর ন। দিয়! তাহাকে আশ্রম-কাধ্ে নিয়োজিত করিলেন রাজাকে প্রত্যহই এক পাহাড়ে উঠিয়া কাষ্ঠ সংগ্রহ করিতে এবং কাষ্ঠের বোঝ। মাথার করিয়! আশ্রমে পহুছাইতে হইত এরূপ কম্মে অনভ্যন্ত হইলেও, রাজ! অত্যন্ত ধৈধ্য এবং অধ্যবসায়ের সহি যথাসম্ভব স্ুচারু রূপে তাহার কর্তব্য সম্পাদনে প্রবৃত্ত ছিলেন একদিন কাষ্ঠের বোঝ বাঁধিতে সামান্য একটু ত্রুটি হওয়ার জন্ত আশ্রমের একজন নীচকুলোভ্ভব চাকর রাজার গণডদেশে এক চপেটাঘাত করিল রাজ। তাহার সহিত ঝগড়া-বিবাদ করিলেন না। “আজ যদি আমি বাহিলিক দেশে থাঁকিতাম, তবে লোকট1 বুঝিতে পারিত-- এই চপেটাঘাতের মুল্য কত” স্ৃছুস্বরে এইমাত্র বলিক্মাই এক স্থানে বসিয়া চিন্ত। করিতে লাগিলেন চিন্তা করিভে করিতে তাহার মনোমধ্যে ছুঃখের উদয় হইল। তিনি উঠিয়৷ সাধুজীর পদপ্রান্তে উপস্থিত হইলেন এবং প্রণামাঁদ সমাপনান্তে বলিলেন, “ভগবন্‌! আপনার শিশ্ত হইবার আশায় কত কাল এই আশ্রমে অতিবাহিত করিলাম"! আমার পরে কত লোক আসিল, তাহাদের মধ্যেও

১৪৯

বেদ-বাণী

অনেকের দীক্ষা হইয়া গেল; কিন্তু আমার ভাগ্য প্রসঙ্গ হইল না!” সাধু উত্তর করিলেন, “এখনও বিলম্ব আছে এখনও তোমার গায়ে বাহিলকের গন্ধ বিদ্যমান ।৮

৬কামাখ্যাধাম ; ৪ঠা ফাল্গুন, ১৩২৫।

স্পেস

১৫০

১। মহামুনি বেদব্যাস ভগবান পিনাঁক-পাণির সমীপে গমন পূর্বক প্রণামাঁদি সমাপনাস্তে কৃতাঞ্চলিপুটে নিবেদন করিলেন, “জগদগ্ডরে ! শ্রীমান শুকের উপনয়- নের কাল সমুপস্থিত হইয়াছে আমার প্রার্থনা, আপনি অন্থকম্পা পুরঃসর তাহাকে সময়ে ব্রহ্ষ-বিদ্যার উপদেশ প্রদান করুন 1৮ শঙ্কর বলিলেন, “ব্যাস ! আমার নিকটে পরব্রন্মের উপদেশ প্রাপ্ত হইলে সেকি আর তোমার সঙ্গে থাকিয়! গৃহস্থজীবন যাপন করিবে ?-সে যে তখনই জ্ঞান লাভ করিয়া, নিঃসঙ্গ-চিত্তে যথ| তথা বিচরণ করিতে থাকিবে ।” ব্যাসদেব উত্তর করিলেন, “ভগবন্‌! সংসার- পাশ-বিমৌচক আপনার দ্বারা উপদিষ্ট হইলে, মৎপুন্র যে অবিলম্ষেই সর্বজ্ঞত্ব লাভ করিবে, সে বিষয়ে সন্দেহ কি? তবে, সে গৃহেই থাকুক্‌ কিম্বা পরিব্রীজকই হউক্‌, সে বিচারে আমাদের প্রয়োজন নাই। আমি আমার কর্তব্য সম্পন্ন করিব )--তাহার উপনয়নের জন্য শ্রেষ্ঠতম-আচার্য- নিক্মোগের চেষ্টা করিব। ফল কি হইবে, সে চিত্তা করিব

১৫১

অর

বেদ-বাণী

না। তাই, মিনতি করিতেছি, আপনি দয়। করিয়! শ্রীমানকে উপদেশ প্রদান করুন ।৮

২। কীর্তন-পীযুষ সমুদয় দিকে পরিবেষণ করিতে করিতে প্রেমৈক-সম্বল নারদ যখন নৈম্ষারণ্যে উপনীত হইলেন, তখন শৌনকাদি তপোনিষ্ঠ মুনিগণ সসম্মে গাত্রোখান পূর্বক সোৎসাহে তাহার পৃজ1 করিয়া জিজ্ঞাস! করিলেন, “ব্রহ্গ-পুত্র ! অধুনা কোন্‌ স্থান হইতে শুভাগমন করিতেছেন ?৮ দেবষি উত্তর করিলেন, “যাহার বরণীয় কীন্ডি, ত্রিভূবন পরিব্যাপ্ত করিয়াছে, সেই সার্থক-জন্ম। পরীক্ষিত-নরপততি্ নিকট হইতেই.আসিকতিছি।” শৌনক বিনীত বচনে কহিলেন, “ভগবন্! ভবদীয় মুখারবিন্দ ধাহার প্রশংসা-সৌরভ প্রচার করিতেছে, তিনি ভাগ্যবান পুরুষ, সন্দেহ নাই। তাহার কথা শ্রবণ করিতে আমা- দিগের আগ্রহ জন্সিতেছে। যদি তীহার বর্ণন-প্রসঙ্গে শ্রীভগবানের অলৌকিক মহিমা কীন্তিত হয়, তবে অনুগ্রহ পূর্বক তাহার চরিত্র ব্র্ণন করিয়া আমাদিগের কর্ণকুহর পবিত্র করুন কিন্তু যদি তাহার জীবন-কথনে হরি-গুণ- কীর্তন না হয়, তবে সে উপাখ্যানে আমাদিগের প্রয়োজন নাই: ভগবৎ-প্রসঙ্গ ব্যতীত অন্ত আলোচনা আসর! পরিত্যাগ করিয়াছি”

৯৫২

বেদ-বাণী

৩। মহষি যাজ্ঞবন্ক্য একাস্ত-তপস্তার নিমিত্ত কোন নিজ্জন প্রদেশে গমন করিতে অভিলাধী হইয়া, গৃহস্থিত যাবতীয় তৈজস-পত্র ভাধ্যাদ্বয়ের মধ্যে বণ্টন করিয়া দিতে- ছেন, এমন সময়ে দ্বিতীয়া পত্ব মৈত্রেয়ী বলিলেন, ভগবন্! সসাগরা বস্ম্ধর! যদি বিত্তপূর্ণা হইয়া আমার উপভোগ্য। হয়, তবে কি তৎ্সাহাধ্যে আমি অমরত্ব লাভ করিতে সক্ষম হইব ?” যাঁজ্ঞবন্ধ্য বলিলেন, “ন1। অনিত্য পদার্থের দ্বার নিত্যবস্ত--অমু তত্ব লাভ করা যায় না।” মৈত্রেয়ী বলিলেন, প্যাহা আমাকে অমরত্ব প্রদান করিতে পারে না, এমন দ্রব্যে আমার কি প্রয়োজন? আমি সকল মোহ-ভাগু চাই না। যাহার সাহায্যে আমি অমরত্ব লাভ করিতে পারিব, এমন কিছু আমাকে প্রদান করুন ।” যাজ্ঞবন্ধ্য মৈত্রেয়ীকে সাধুবাদ প্রদান পূর্বক সহষে বলিলেন, “মৈত্রেয়ি ! তোমাকে ত্রদ্মবিগ্ভ। প্রদান করি- তেছি। মনোযোগপূর্বক শ্রবণ করিয়া নিদিধ্যাসনে প্রবৃত্ত হও। অচিরেই অমরত্ব লাভ করিতে পারিবে |”

৪। তপস্তায়, প্রবৃত্ত হইবার কালে শাক্য-সিংহ প্রতিজ্ঞা করিলেন, “তপস্তা করিতে করিতে শরীর যদি শুষ্ক হইয়া! যায়, অস্থি-চন্ম-মাংস যদি প্রলয় প্রাপ্ত হয়, তাহাও স্বীকার; তথাপি বিজ্ঞানাম্তত লাভ করিবার পূর্ববে--কিছুতেই তপন্ঠা পরিত্যাগ করিব ন1।৮

১৫৩

বেদ-বাঁণী

৫। তপস্যা-নিরত উঈশার সমক্ষে যখন কামদেব মনোমোহন মৃত্তিতে আবিভূতি হইয়া তাহাকে সমুদয় কাম্য বস্ত প্রদান করিতে চাহিলেন, ঈশ1 অকুন্ঠিতচিতে বলিয়া উঠিলেন, ০৪৮ 075০. 15০10০১ 59,005 ]009 79০

5৮21) 1062.

৬। উপনিষদের খষি বলিয়াছেন, “এই তিমিরাতীত, জ্যোতিশ্ময়, মহান্‌ পুরুষকে আমি জানিয়াছি। কেবল ইহাকে জানিয়াই মানব মৃত্যুকে অতিক্রম করিতে সমর্থ হয়। অমরত্ব (মুক্তি )-লাভের অন্ত পন্থা বিদ্যমান নাই ।৮

আজকার চিঠি এই খানেই শেষ করিয়া, এস, সম্মুখাগত মহাত্সার পাঁদ-পদ্মে প্রণত হই। ষে প্রসন্ন-মূত্তি পরিব্রাজক ধীরপদে আগমন করিতেছেন, উহাকে চিনিতে পারিয়াছ কি?--উহারই নাম শ্রী- শুকদেব ; জ্ঞান-সিদ্ধু শঙ্ষরের উপদেশে প্রবুদ্ধ হইয়াই, তদবধি, ব্রহ্মীম্ৃত-সাগরে ডুবিতে ভূবিতে--প্রতিপদক্ষেপে ধরণীর পবিত্রতা বদ্ধিত করিতে করিতে এই প্রপঞ্চ- পরাজুখ, জ্ঞানতৃপ্ক মহাপুরুষ নিব্বিকার চিত্তে, সর্বত্র সম্ভাবে বিচরণ করিতেছেন। এরূপ দুর্লভ সঙ্গ, এরূপ মহীয়ান আদর্শ আর কোথায় মিলিবে? অতএব,

১৫৪

বেদ-বাঁণী

আর সমক্ব-ক্ষেপে প্রয়োজন নাই চল, আমরা অবিলগেই এই অথগ্ডানন্দ-বিগ্রহের অন্ুগমন করিয়া! জন্ম জীবন সার্থক করি।

কাশীধাম 3 ওঠা পৌষ, ১৩২৫

জুডভীন্স অন্হন্বান্ত £

৫৪৫

নারায়ণেষু।

যখন ভাল-মন্দ বুঝিতে আরম্ভ করিয়াছি, তখন হইতে আজ পধ্যস্ত-_এই স্থদীর্ঘ কালের মধ্যে, উন্নতি-লাভের কত সুযোগই হেলায় হারাইয়াছি! এই সকল সুযোগের সঞ্যবহার যদি করিতাম, আজ অশান্তির দাবানলে দগ্ধ হইতাম না!

কিন্তু অন্থশোচনায় ফল কি? যা হইবার, তা হইয়াছে। অতীতের দুর্বদ্ধির কুফল আমাকে বর্তমানে সাবধান করুকৃূ। আত্মোন্তির যে সকল স্থুযোগ এখন আসিতেছে এবং ভবিষ্যতে আদিবে, তাহাদিগকে যেন 'সাদরে গ্রহণ করিতে সক্ষম হই।

যে দিন যায়, সে দিন আর ফিরিয়া আসে না) ষে স্থযোগ এখন চলিয়া যাইতেছে, সে স্থযোগ আর ফিরিয়া পাইব কি না, কে জানে? তাই, সর্বদা সতর্ক থাকিব, জাগিয়া থাকিব, দুয়ার খুলিয়া রাখিব,_যেন স্থঘোগরূপী প্রেমময্নের-কোন-অগ্রদূত দুয়ারে আসিয়া, ছুয়ার হইতেই ফিরিয়! না যায় !

আচ্ছা, এখনই যে আমার সম্ষুথে সাধনার অনন্ত

১৫৯

সাধনার সুযোগ

প্রেম ব্যাকলত। কোন বিদ্বুই মানে ন!

বেদ-বাণী

সুযোগ উপস্থিত রহিয়াছে! এগুলিকে পরিত্যাগ করিব কেন?

আমার জিহ্বা তো আড়ষ্ট হয় নাই, তবে এখনই ভগবানের নাম কীর্তন করিব না কেন? আমার কর্ণ তো বধির হয় নাই, তবে এখনই প্রেমময়ের মহিমা শ্রবণ করিব না কেন? আমার চক্ষু তো অন্ধ হয় নাই, তবে এখনই দীনবন্ধুর সন্তাপহারী মুদ্তি দর্শন করিব না কেন? আমার হস্ত তো অবশ হয় নাই, তবে এখনই ভগবৎ- সেবায় নিযুক্ত রহিব না কেন? আমার চরণ তে চলচ্ছক্কি হারায় নাই, তবে এখনই পুণ্য-স্থানে গমন করিব না কেন? আমার মন তো চিন্তা করিতে অসমর্থ হয় নাই, তবে এখনই ভগবঙ্চিত্তায় তন্ময় হইব না! কেন?

আমাদের প্রতিবাসী যে বিলাস-পরায়ণ বৃদ্ধ, উহার কথাই একবার চিন্তা করি। উহার ধন-জনের অভাব নাই। শিবিকারোহণ ব্যতীত সামান্য দূরেও উনি গমন করেন না। বহুমূল্য পরিচ্ছদে স্থশোভিত ন| হইয়া উনি বাটার বাহির হ'ন না। কখন কিসে মান কমিয়। যায়, এই চিন্তায় উনি সর্বদা ব্যন্ত। এই উহার সাধারণ অবস্থা। কিন্ত, যেদিন উহার একমাত্র পুত্র সর্প-দংশনে মৃতপ্রায় হইল, সে দিন উহার অবস্থা অন্য প্রকার। নগ্নপদে, অনাবৃতশরীরে ছুটিয়! চলিয়াছেন? সন্গে লোক-জন কেহই নাই; ঘর্মাক্ত কলেবরে এক ক্রোশ দূরবর্তী এক

১৬০

বেদ-বাণী

মুচির গৃহে উপনীত হইলেন। সর্প-দংশনের চিকিৎসায় মুচির নাম-যশ ছিল; অনেক কাকুতি-মিনতি করিয়! সেই মুচিকে নিজের বাড়ীতে লইয়া আসিলেন। এই যে এতটা ব্যাপার ঘটিল, ইতিমধ্যে-বৃদ্ধ মান-মর্ধ্যাদার চিন্তা একবারও করেন নাই; রাস্তার লোকে কে কি বলে, সে কথা একবারও ভাবেন নাই ; অত দূর চলিতে পারিবেন কিনা, সে সন্দেহে একবারও চিন্তিত হন নাই) সঙ্গে কাহাকেও লইবার বাসনাও করেন নাই 7 চরণতল যখন গ্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত হইয়াছিল, তখনও তাহাতে ভ্রক্ষেপ করেন নাই!

কাল-দষ্ট আমিও যখন ভব-রোগ-বিনাশক বৈদ্যরাজের সন্ধানে ছুটিতেছি, তখন- মান-অপমানের চিন্তা করিৰ কেন, স্থখ-ছুঃখের বিচার করিব কেন, যন্ত্রণার দিকে মন াইবে কেন, অন্যের অপেক্ষা করিব কেন, অন্ত কিছু ভাবিব কেন?

অন্য দিকে মন দিবার অবসর আমার নাই। এই খানেই চিঠি বন্ধ করিয়া, এই মুহূর্তেই, তন্ময় চিত্তে, প্রেম- ময়ের কাছে ছুটিয়। যাই! |

৬কাশীধাম) ১১ই পৌষ, ১৩১৫। রক *

১৬১

ভক্তের সাধন

নারায়ণেষু। ্‌

তোমার পত্র যথাসময়েই পাইয়াছি; উত্তর দিতে কিছু বিলম্ব হইল। পত্র পাইয়াই উত্তর দেওয়া--আজ-কাঁল সময়ে সময়ে ঘটিয়া উঠে না

ধ্যান-জপ যেরূপ ভাবে করিতে বলিয়াছি, সেই রূপেই করিতে থাক। বর্তমানে কোন পরিবর্তনের প্রয়োজন দেখি না। “সহশ্র-নাম” অর্থ-বুঝিয়। পড়িতে পারিলে ভালই হয়, কিন্ত তাহ! বোধ হয় তোমার পক্ষে সম্ভব হইবে না। তাই, অর্থ বুঝিতে না পারিলেও যথাসম্ভব ভক্তির সহিত নামীবলি পাঠ করিও; তাতেও অনেক উপকার হইবে পুষ্প-চন্দনাদির সাহায্যে মৃন্সয়ী প্রস্তরময়ী দেব-যুদ্তির বাহ্‌পূজা যেমন লোকে করিয়া থাকে, তূমিও তদ্রপ মানস- কল্পিত পুষ্প-চন্দনাদির সাহায্যে হৃদয়-সিংহাসনোপরিস্থিত। জ্যোতির্দয়ী ইষ্-ুত্তির মানস-পূজা প্রেমার্র-হৃদয়ে সম্পন্ন করিবে যে যে বন্ত দ্বার! ইষ্টদেবতার পূজা করিতে ইচ্ছা হয়, তৎসমুদয়ই তাহাকে নিবেদন করিয়া দিবে। প্রত্যেক

* ভ্রব্যটী অর্পণের সময়েই তোমার মন্ত্রী একবার বলিবে।

১৬২

বেদ-বাণী

হৃদয়ের দেবতাকে জাগ্রত, জীবস্ত বলিয়া বিশ্বাস করিবে তাহার সহিত কথ বলিবে, তাহার নিকটে প্রার্থনা করিবে, তাহার দিকে তাকাইয়! থাকিবে, তীহাঁকে সাজাইয়। দিবে বারংবার প্রণাম করিবে তীহার অন্থুমতি লইয়া, তীহার কৃপা ভিক্ষা করিয়া, তাহারই প্রীতির জন্ত, সমুদয় কর্তব্যকশ্ম স্ুসম্পন্ন করিতে যত্ববান হইবে। তিনিই তোমার ইষ্ট, তিনিই তোমার গুরু, তিনিই তোমার আশ্রয়, তিনিই তোমার সহায়, তিনিই তোমার বন্ধু, তিনিই তোমার প্রিয়তম, তিনি তোমারই, তুমি তারই তুমি সর্বদা! তাহার দিকে তাঁকাইয়া থাক, তাহার উপরই নির্ভর কর। এই পরিবর্তনশীল সংসার সর্বদাই মানব-মনকে মুগ্ধ করিতে প্রয়াসী। তুমি সাবধান থাঁকিও”-_কখনও যেন এখানকার কিছুতেই আশ। বিশ্বাস স্থাপন করিও না। মনে রাখিও এই নশ্বর জগৎ আমাদের চির-বাস-স্থান নয় ; যে অল্পকিছুকাল এখানে- এই পান্থশালায় থাকিতে হইবে, সেই সময়টুকুর মধ্যেই কৌশলপুর্ববক এমন কিছু করিয়। লইতে হইবে, যাহা আমাদিগকে চির-অমবত্ব প্রধান করিতে সমর্থ তাই, একটু সময়ও হেলায় হারাইও না, একটু কালও অসতর্ক থাকিও না। স্থযৌগপ্ুলি অনেক সময়েই আমাদের অজ্ঞাতসারে আসিয়া আবার আমাদের 'অজ্ঞাতসারেই পলায়ন করে কখনও কখনও, তাহাদের

৬৩

বেদ-বাঁণী

প্রস্থানের পরে তাহাদের সংবাদ পাইয়া, ২৪ মিনিট কাল বৃথা অনুতাপ করি মাত্র। কাজেই, সাবধান থাকিও। বিচারের মশাল যেন কখনও নিভিয়। না যায় কিন্ত, কেবল বিচারেও কুলাইবে না সংসারের পিচ্ছিল পথে দুর্বল মানবের জন্ত প্রার্থনার যষ্টিখানিও বিশেষ আবশ্যক যখনই শক্তির অল্পত। বোধ করিবে, সন্দেহ অবিশ্বাস আক্রমণ করিবে, ছুর্বলতার যন্ত্রণ। অন্ভূত হইবে, তখনই যুক্তকরে উদ্ধনেত্রে প্রার্থনা করিও, মায়ের নিকটে কদিতে কাঁদিতে আব্দার করিও ; দেখিবে--মেঘমালা ধীরে ধীরে অপসা- রিত হইতেছে, প্রাণে শান্তির বাতাস বহিতেছে, অভয়দাক্সিনী বিশ্বজননীর কোলে তুমি স্থান পাইয়াছ। মনে রাখিও, প্রার্থনা অসাধ্য সাধন করিতে সমর্থ; মায়ের কোষাগারে এমন কোন সিন্দুক নাই, যাহ! প্রার্থনার চীবিতে খোলা ঘায় না। তাই বলিয়। কিন্ত মায়ের কাঁছে যা-তা৷ চাহিতে হইবে নাঁ। মহারাঁজাধিরাজের চরণতলে উপস্থিত হইয়া কোন্‌ মূর্খ ধুলিমুষ্টির জন্য প্রার্থনা করিবে ? জীবনের যাহ। সার-_সাঁধনের যাহ! লক্ষ্য--অন্যের নিকটে যাহা পাঁওয়। যায় না-_যাহা পাইলে জীবন শান্তিময়, মধুময় হইয়া যায়-_ এমন অমূল্য পনই মায়ের নিকটে চাহিতে হইবে ব্যাকুল হৃদয়ে চাহিবে--যতদিন না পাঁও, ততদ্দিনই চাহিবে-_- অনবরত চাহিবে ; এইবূপে সরলভাবে চাহিতে চাহিতেই

১৬৪

বেদ-বাণী

মিলিবে- প্রার্থনা পূর্ণ হইবে-_-জীবন ধন্য হইবে__সমুদয় অভাব দূর হইবে আজ এই পথ্যন্ত সাধন-ভজন যথা- সম্ভব গোপনে রাখাই ভাল।

তেতুল তল।, বদ্ধমান 3 ২৫শে বৈশাখ, ১৩২৪ ** * ৯:

৬৪ দি

উন্নতি-লাতের উপায়

নারায়ণেষু।

তোমার কর্মই--তোমার স্বন্থষ্ঠিত কর্তব্যপরম্পরাই তোমাকে শক্তিপ্রদানে সমর্থ। কর্মজীবন হইতে ধর্- জীবনকে পৃথক করা সঙ্গত নহে। নৈতিক জীবনের স্থদৃঢ ভিত্তির উপরই আধ্যাত্মিক জীবনের শান্তি-মন্দির বিরাজ করিতে পারে। সত্য পবিভত্রতাকে পরিত্যাগ করিয়। জীবনকে উন্নত করিবার আশা করিও না। যদি মানব-জন্ম সফল করিবার বাসনা থাকে, তবে ক্ষুদ্রাদপি ক্ষুদ্র কার্যেও ন্যায়ের মর্যাদা অটুট রাখিতে হইবে। ন্যায়-নিষ্ঠার জন্য মহত্র ক্ষতি স্বীকারেও প্রস্তত থাকিতে হইবে। সত্য পবিত্রতাকে অঙ্ষুপ্ন রাখিবার জন্য, প্রয়োজন হইলে» সমুদয় আরাম-বিরাম এবং স্বার্থবাসনার পরিহারে কৃতসংকল্প হইতে হইবে যত দিন ন। পারিবে, তত দিন তোমাকে শ্রেষ্ঠতম অধিকার লাভে বঞ্চিত থাকিতে হইবে পশুধন্ম পরিহার করিয়া মনুষ্ধশ্ম গ্রহণ কর; প্রবৃত্তির দাসত্ব পরিহার করিয়। সংযম বিচারের আশ্রয় গ্রহণ কর; বৃথা পরিতাপে সময়ক্ষেপ না করিয়া, প্রবল-পুরুষকার-সহায়ে বিদ্রাশির

১৬৬

বেদ-বাণী

উন্মূলনে যত্ত্বান হও সর্ধোপরি ভগবানের নিকটে সরলাস্তঃকরণে দিদ্ধি-লাভের নিমিত্ত প্রার্থনা করিতে থাক »_-ইহাই তোমার পক্ষে সমীচীন পন্থা; স্থখ-লাভের, শান্তিলাভের, ছুঃখ-নিবৃত্তির জন্য তোমার পক্ষে অন্ত কোন পথ নাই। পথে চলিতে চলিতে যখনই চরণে দুর্বলতা অনুভব করিবে, ভগবানের নাম সে অন্তরায় দূর করিতে সমর্থ হইবে। নামের অসীম মহিমায় বিশ্বাসবান হইও। বরিশাল।

১০1৭।১১৮ কক

১৬৭

দুঃখ প্রেম অয়েরই দত

নারায়ণেষু।

পত্র পাইলাম সমুদয় ছুঃখ-কষ্টকে প্রেমময়ের মর্গলা- শীর্বাদ বলিয়া সাদরে গ্রহণ করিতে যত্ববান হও। জীবনের উন্নতিকল্পে বিশ্ব-বিপত্তির আবশ্তক আছে ; এবং আবশ্তক আছে বলিয়াই দয়াল ঠাকুর সন্ষেহে তাহার বিধান করিতে- ছেন। তাহার বিবেচনা-শক্তি তোমা হইতে অল্পতর নহে। তোমার উন্নতির জন্য তোমার পক্ষে ষাহ৷ প্রয়োজন, তাহ! তিনি তোমা অপেক্ষা নিশ্চয়ই অধিক জানেন। “দুঃখের আকারে যাহা আমাদিগের নিকটে আসে, তাহা আমাদের কল্যাণেরই জন্ত'-এ কথ বিশ্বাস কর; তাহার উপরে সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করিয়া সন্তষ্ট চিত্তে জীবন যাপন করিতে থাক এবং যথাসাধ্য তাহার নাম-কীর্তনে যন্ত্বান হও।

ছুংখকে সথখেরই নিদান বলিয়া যে মনে করে, তার কাছে আর দুঃখের তীব্রতা কি? 'ছুঃখ প্রেমময়েরই প্রেরিত”-_ কথা যে বিশ্বাস করে, তার আর ছুঃখে ভয় কি? _. এক দম্পতি জাহাজে চড়িয়া ইযুরোপের দিকে যাইতে- ছিলেন। হঠাৎ ঝড় উঠিল, সমূদ্র ভীষণাকার ধারণ করিল।

১৬৮

বেদ-বাঁণী

জাহাজ ডুবুংডবু হইল। আরো হিগণ আস্ব-মৃত্যুর ভয়াবহ চিন্তায় কাতর বিষপ্ন হইলেন; কিন্তু উক্ত দম্পতির মধ্যে স্ত্রী দেখিলেন,__তীহার স্বামী বিন্দুমাত্রও বিচলিত হ'ন নাই।

স্ত্রী স্বামীকে ইহার কারণ জিজ্ঞাস! করিলে স্বামী গল্ভীর- ভাবে পকেটস্থ পিস্তল বাহির করিয়া স্ত্রীর প্রতি লক্ষ্য করিয়! ধারণ করিলেন। স্ত্রী বলিলেন, “এ আবার কি? ব্যাপার কি? তোমার হয়েছে কি?” স্বামী বলিলেন, “পিস্তল দেখিয়া তোমার ভয় হয় না?” স্ত্রী উত্তর করিলেন, “তোমার হাতের পিস্তল দেখিয়া আমার ভয় হইবে কেন?” স্বামী বলিলেন, “তবে প্রেমময় জগৎ- স্বামীর হাতের ঝড়-তুফান দেখিয়া আমিই বা ভয় করিব কেন ?”

আজ এই পধ্যন্ত; বেশী লেখা অনাবশ্তক। এই একটি কথাই যদি ধরিয়া! থাকিতে পার, তবেই তোমার জীবন মধুময় হইবে আর যদি রাশি-রাশি গ্রন্থ অধ্যয়ন কর এবং একটি উপদেশওক্জীবনে আয়ত্ত করিতে ন৷ পার, তবে সে অধ্যয়নে ফল কি?

শিবমস্ত। ইতি।

৬কাশীধাম; কক ..২১।১১।১১৮

১৬৯

শারীরিক দুখ অপরিহার্য

ছুঃখে ধৈর্য

রে

নারায়ণেঘু।

জানিতে পারিলাম, তৃমি ব্যারামে খুব ভূগিতেছ। ব্যারামে ভোগার মধ্যে নৃতনত্ব বেশী কিছু নাই? কারণ সংসারে মৃত্যুর মত ব্যাধিও অপরিহাধ্য তোমার আমার তো! দূরের কথা, যে সকল মহাপুরুষ ভব-সমুদ্র উত্তীর্ণ হইয়াছেন, শান্তিময়কে লাভ করিয়াছেন, তাহাদের দেহও ব্যাধির কবলে, অল্লাধিক পরিমাণে, নিপতিত হইয়াছে বুদ্ধদেবের পেটের পীড়া, আচার্য শঙ্করের ভগন্দর, মহাপ্রভু চৈতন্যদেবের জর-রোগ এবং আধুনিক কালের পরমহংস রামকুষ্খদেবের গলক্ষত,_-এ সমুদয়ই তোমর। অবগত আছ। তাই বলিভেছি' ব্যারামে ভোগার মধ্যে নৃতনত্ব নাই। তবে নৃতনত্ব না থাকিলেও বিশেষত্ব কিছু নিশ্চয়ই আছে। মনের অবস্থাই সেই বিশেষত্ব ব্যারামে তুগিয়! ভূগিয়। আত্মহারা হইযাছ কি না,মনের ক্ষতি শাস্তি নষ্ট হইতেছে কি না, তাহাই স্থলে জ্ঞাতব্য কেহ কেহ অল্প কষ্টেই অধীর হইয়া থাকে বটে; কিন্তু, আমার ধারণা, তুমি সে দলের লোক নও। তোমার ব্যাধি যদিও কঠিন বটে,

১৭০

বেদ-বাণী

যদিও তুমি অনেক কাল যাবৎ ভূগিতেছ, তথাপি মনে হয়, ধৈর্য্য এবং উৎসাহকে পরিত্যাগ করা যেন তোমার উপযুক্ত নয়; হতাশ এবং নিরুগ্যম হওয়া যেন তোমার 'ক্ষ্যাপা, নামের, “্যতীন্ত্র নামের যোগ্য নয়। ধাহারা ধর্শ-রাজ্যের ইতিহাস পর্ধ্যালোচনা করিয়াছেন, তাহারা জানেন যে প্রেমময় যাহার প্রতি কপ! প্রকাশ করিবেন, তাহার প্রতিই অনেক সময়ে ভীষণ পরীক্ষার কঠোর বজ্র নিক্ষেপ করেন। গ্রহলাদের প্রতি কতই না অত্যাচার অনুষ্ঠিত হইয়াছিল, সকল অত্যাচারই তো প্রহ্নাদকে আমাদের সমক্ষে গৌরবান্বিত করিয়াছে! যে যত উপরের শ্রেণীতে গড়ে, তার পরীক্ষা তত কঠিন ; তাই, যন্ত্রণীর ভীষণতায় তোমার উৎসাহ না বাড়িয়া! বরং কমিবে কেন? আরও এক কথা-- যতটুকু যন্ত্রণা সহ করিতে আমরা বাস্তবিকই অসমর্থ, ততটুকু যন্ত্রণা প্রেমময়, জ্ঞানময়, বিশ্ব-বিধাতা কি আমা- দিগকে প্রদান করিতে পারেন? একজন ধারণ রজকও তার গর্দভের পিঠে এত বড় কাপড়ের বোঝ! চাপায় না, যাহাতে তার পিঠ ভাঙ্গিয়! যাইতে পারে ;_আর ভগবান তার প্রিয় সন্তানের উপর অসহনীয় বোঝ! চাপাইয়া দিবেন, ইহা কি যুক্তিসঙ্গত? আমরা অনেক সময়েই হতাশ হইয়া আত্মহারা! হই, নিজের শক্তি-সামর্থয ভূলিয়! যাই। অতীতে যে যন্ত্রণা ভোগ করিয়াছি, ভবিষ্যতে যে কষ্ট ভোগ করিবার সম্ভাবনা, তৎসমূদয়কে কল্পনার সাহায্যে বর্তমানের সামান্ট ১৭১

বেদ-বাণী

দুঃখের সঙ্গে যুক্ত করিয়া লইয়া বর্তমানের বোঝাটিকে বহনের অযোগ্য বলির। মনে করি ইহ! আমাদের বিচারের দোঁষমাত্র। অতীতে ধত আহার করিয়াছি, ভবিষ্যতে ঘত আহার করিব, তৎসমস্ত একত্র হইয়া কি বর্তমানে আমার উদরাময় জন্মাইতে সমর্থ? ভাবিয়া দেখ, বর্তমানের কষ্টটুকু সহ করিতে তুমি বাস্তবিকই সমর্থ কিনা। ঘি তৈষ্যের সহিত পরীক্ষা কর, দেখিবে-_প্রতি মুহূর্তেই তত- সময়ের ছুঃখটুকু সহ করিতে তুমি সম্পূর্ণ সক্ষম আর সহ্য তো! সর্বদাই করিতেছ, কেবল কতকগুলি আহা-উহ্ু, কতকগুলি ছুর্ভাবনা এবং কতকগুলি কাল্পনিক বিভীষিকার চিন্তা মিশ্রিত করিয়া অনর্থক 'বিলাপে শরীর-ম্ন ক্ষন করিতেছে প্রতিক্ষণই তার ছুঃখ-কষ্টরের বোঝা লইয়া! পর- ক্ষণের পূর্বেই চলিয়া যাইতেছে, তবে আর দীর্ঘকালের কষ্ট বলিয়া কষ্টকে অসহনীয় মনে করিবে কেন? মন স্থির কর, প্রতিজ্ঞা কর-- “আমি অবিরত চিত্তে কষ্ট সহিব” চিন্তা কর-_“আমি এই কষটটুকু সহিতে পারিব না কেন ? তাহা হইলেই দেখিবে-_কষ্ট আর তোমাকে বেশী কষ্ট প্রদান করিতে পারিবে না আরও বিচার কর-_“আমাদের কষ্ট কতটুকু? প্রহ্নাদের প্রতি যত অত্যাচারের বোঝা নিক্ষিপ্ঠ হইয়াছিল, সহশ্ম রোগের মধ্যেও কি এরূপ বোঝা আমার উপরে আপতিত হইয়াছে? যবন হরিদাসের প্রহার- যন্ত্রণার মত কোনও কষ্ট কি আমি ভোগ করিয়াছি ? ১৭২

ব্দ-বাণী

তপ্ত তৈলে নিক্ষিপ্ত স্ধস্বার মত ক্লেশ আমাকে কি কখনও ভূগিতে হইয়াছে? ক্রুশ-বিদ্ধ ষীশু্বষ্টের কথা মনে করিলে আমার যন্ত্রণা কত লঘু হইয়। যায়! তাই, আশ্বস্ত হও, নিজকেই সর্বাপেক্ষা দুর্ভাগ্য মনে করিও না আরও এক কথা। সঙ্রেটাজ যখন স্বহন্তে বিষ পান করিয়া হাসিতে হাসিতে দ্েহত্যাগ করিতেছিলেন, তখন কেহ প্রশ্ন করিয়াছিল,__“ভীষণ মৃত্যুর করাল কবলে পতিত হইয়া আপনি বদনের প্রসন্নত। রক্ষ/ করিতেছেন কিরূপে %” সক্রেটাজ প্রফুল্ল বদনে উত্তর করিলেন, “এই দেহ বরাবরই আমার শত্রুতা করিয়াছে; ধর্ম-কার্যে, সাধু-উদ্দেশ্ত-সাধনে কত বিদ্রই ঘটাইয়াছে; ক্ষধা পিপাসা, নিদ্। তক্জা, জর! ব্যাধি, আলস্য দুর্ধবলত। প্রভৃতি দ্বার। সর্বাদাই আমাকে অন্থৃবিধাগ্রস্ত করিয়াছে। আজ সেই চির-শক্রর হাত হইতে নিস্তার পাইয়া শান্তিময়ের সহিত মিলিত হইব, ইহা অপেক্ষা স্থখের কথা, আশার কথা, সৌভাগ্যের কথ। আর কি হইতে পারে ?” বাস্তবিকই সংসারে দুঃখ কষ্ট, ব্যাধি মৃত্যু যখন অপরিহাধ্য, তখন বিলাপে সময়” ক্ষেপ না করিয়া যাহাতে ইহাদের হস্ত হইতে চিরমুক্তি লাভ করিতে পারি, এমন চেষ্টাই কি কর্তব্য নয়? এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই ভারতের ব্রাঙ্গণগণ, খধিমুনিগণ সংসারে বীতল্পৃহ হইয়া হরি-চবণ-ম্মরণে দেহ-মন সমর্পণ করিয়া থাকেন। তুমিও ক্রাঙ্মণ-সন্তান, তুমিই বা ইহাতে কিন / ১৭৩

দুঃখের চির-

খ্ভগবৎ-কুপাই শাস্তিশলাভের মূল

স্ভগবৎ-স্মরণ

বেদ-বাণী

পশ্চাৎ্পদ হইবে কেন? যে শক্তি সুযোগ পাইয়াছ, তাহা ঘত সামান্যই হউক্‌ না কেন, এই উদ্দেশ্য-সাধানে নিয়োজিত কর। ইহার সদ্ব্যবহার যদি না কর, তবে এতদপেক্ষা অধিকতর শক্তি স্থযোগের দাবী করিবার অধিকার কি? তুমি হয়ত বলিবে, এই রুগ্ন দেহ ভগ্ন স্বাস্থ্য লইয়া কি সেই তপস্যা করা সম্ভব, যদ্্ারা চিরশান্তি লাভ কর! যায়? কিন্তু, তোমার কথা, তোমার প্রশ্ন নিতান্তই বালকোচিত। তপস্যা ঘতই কর ন। কেন, কোটি-কোটি বৎসর কঠোর তপস্তায় কাটাও না কেন, কিছুই শ্রীভগবানের কৃপা পাইবার পক্ষে গ্রচুর নহে তপস্তারূপ মূল্য দ্বার ভগবানকে কিনিবে,_ ইহা! অসম্ভব কথা, হাস্যকর উক্ভি। ভগবানের কুপাদারাই তাহাকে লাভ করিতে হইবে। সে কৃপা সম্পূর্ণ রূপেই তার ইচ্ছা-সাপেক্ষ ; তাহা তোমার শক্তি বা সময় সাপেক্ষ নহে। পরীক্ষিৎ সাত দিন মাত্র ভাঁগাবৎ-শ্রবণেই শান্তি-প্রাঞ্ধ হইয়াছিলেন। ভগবানের করুণায় এক মুহূর্তেই জীবন ধন্য হইতে পারে কাজেই, “আমীর সময় নাই, শক্তি নাই, স্থযোগ নাই,-_এ বলিয়া আক্ষেপে সময়-ক্ষেপের আবস্তক নাই। অন্ত চিন্তা, অন্ত কশ্ম বিসজ্জন দিয়া তাহার কপা- লাভের জন্ত, দিবা-রাত্রির যতক্ষণ সম্ভব, তাহার চরণই স্মরণ করিতে থাক। সর্ধদার জন্য তাহারই পদাশ্রয় করিতে সচেষ্ট হও। তাহাতে আত্ম-বিসঙ্জনের জন্যই ১৭৪

বেদ-বাঁণী

তোমার সমুদয় শক্তি নিয়োজিত কর। তাহার নাম, যতক্ষণ সম্ভব, মুখে বা মনে উচ্চারণ কর। তাহার দিব্য মধুর মৃদ্ঠ মনে মনে চিন্তা কর এবং সে মুষ্তির নিকটে মনে মনে পৃজা কর, প্রার্থনা! কর, আত্ম-নিবেদন কর। সে মৃট্টির সহিত কথা কও, আব্দার কর, ক্রীড়া কর। তাহার হাস্ত-বদন মানস-নয়নে নিরীক্ষণ কর তীহার সাক্মিধ্য সর্বদা অন্থভব ম্মরণ করিতে বিশেষভাবে যত্ববান হও। প্রত্যেক কম্মে তীহারই কর্তৃত্ব উপলব্ধি কর। প্রত্যেক শরীরকে তীহারই মন্দির মনে কর। প্রত্যেক শবে তীহারই বংশী-ধবনি শ্রবণ কর। তিনিই ডাক্তারের শরীরে চিকিৎসক রূপে, আত্মীয়-বন্ধুগণের শরীরে সেবকরূপে বম্ম করিতেছেন, ইহা! ধারণ! কর এবং তাহার প্রেম-হস্ত গ্রত্যেক ব্যাপারে দর্শন করিতে চেষ্টা কর। ছুঃখ-ছুর্দশার মধ্যে তাহার মঙ্গল হস্তেরই ইন্দিত অন্থভব কর) এবং তুমি সর্বদাই তাহার দ্বার! রক্ষিত পালিত, ইহা বিশ্বাস কর। তাহার মহিমা ম্মরণ কর, তাহার গুণ কীর্তন কর এবং তাহার গাথা অববণ কর। যাহাতে তাহার গ্রতি ভক্তি বিশ্বাস বদ্ধিত হয়, এমন পুস্তক সম্ভব হইলে পাঠ কর। আর, ধখনই দুর্বলতা বোধ করিবে, হতাশত1 আক্রমণ করিবে, সন্দেহ আসিবে, তখনই তাহার কৃপা ভিক্ষা কর এবং তাহার মঙ্গলময়ত্তের অন্ুধ্যান কর। এই ভাবে যদি চলিতে চেষ্টা কর, দেখিবে, তৌমার জীবন শান্তিময়, মধুময় হইয়া | ১৭৫

বেদ-বাঁণী

যাইবে পওহারী বাবাকে যে সাপটা দংশন করিয়াছিল, সেইটীকে দেখিয়া তিনি বলিয়াছিলেন, “এটা প্রেমময়ের দূত”। আশা করি তুমিও বলিতে পারিবে__এই যে রোগ শোক, এই যে ছুঃখ দন, এই যে জরা মৃত্যু, ইহাঁরাও প্রেমময়ের দূত 1” “জীবন থাক্‌ বা স্ৃত্যু আস্কক্‌, তাতে আমার কি? আমি হত পারি, তাহাকে স্মরণ করিব যতদিন শরীর থাকিবে, তাহার চিন্তা করিয়া কাটাইব ;-তারপর, যখন শরীর ছুটিয়! যাইবে, তাহারই সহিত মিলিত হইব'। তিনিই শরীর নিশ্মাণ করিয়া ছেন, শরীরের চিন্তা তিনিই করুন আমার কর্তব্য-_ তাহার চিন্তা করা, আমি কেবল তাহাই করিব ।”_এই প্রকার প্রতিজ্ঞাই তোমার হউক্‌। আশা করি, এই ভাবে চলিয়৷ অগ্রি-পরীক্ষায় তুমি উত্তীর্ণ হইবে বিশ্বাস করিও,__তুমি ভগবানের প্রিয় সন্তান, কোলের ছেলে; তুমি পরিত্যক্ত নও; তিনি তোমার সমুদয় ভার গ্রহণ করিয়াছেন। বিশ্বাস কর, নির্ভর কর। আজ এই পর্যন্ত। শিবমস্ত। ইতি।

ত্বর্গাশ্রম;

১৯শে পৌষ, ঈ্ সস

১৩২৬

নারায়ণেযু। নিত্য, নিধ্বিকার ভগবানই সৎ; আর যা কিছু, সকলই অসৎ ভগবৎ-সঙ্গই সৎসঙ্গ ; বিষয়-সঙ্গই অসৎসঙ্গ তোমার শরীর কোন কর্ধে লিপ্ত থাকুক বা না থাকুক্‌, তোমার নিকটে কেহ বা কিছু থাকুক বা না থাকুক, তাহাতে কিছুই আসিয়া যায় না। তোমার মন যদি ভগবৎ- স্মরণ করিতে থাকে, তবেই তোমার সত্সঙ্গ ; আর তোমাব মন যদি ভগবানকে বিশ্বৃত হইয়। বিষয়-সেবা করিতে থাকে, তবেই তোমার অসৎ সঙ্গ। কাজেই, সতসঙ্গ বা অসৎসঙ্গ করা সম্পূর্ণরূপে তোমার মনের উপরই নির্ভর করিতেছে যেখানেই থাক, সেখানে কোন সাধু-মহাজন উপস্থিত থাকুন্‌ বা না থাকুন, তোমার ইচ্ছা হইলেই তুমি অনায়াসে সৎ- সঙ্গের স্থধাময় ফল ভোগ করিতে সমর্থ তবে আমাদের কীচা মন সততই বিষয়ের দিকে ধাব- মান। প্রযত্ব-বলে ইহাকে ভগবানের দিকে টানিয়া লইতে হইবে। তাই, যাহার নিকটস্থ হইলে মন চঞ্চল হয়, ভগ- বানকে ভুলিয়া যায়, তাহা হইতে যথাসম্ভব দূরে থাকিবার চেষ্টাই এখন সঙ্গত। আর, ধার কাছে বসিলে মন পবিত্র ১৭৭

সাধন।

বেদ-বাঁণী

'হয়, ভগবানের দ্রিকে অগ্রসর হয়, তার কাছে যাওয়ার

জন্যও যথাসম্ভব চেষ্টা বর্তমানে অপ্রয়োজনীয় নহে। কিন্ত সর্বদাই আসল কথাটা মনে রাখা চাই»_ভগবানে সর্বদা! মন লাগাইবার চেষ্টা করা চাই।

ভক্তি-শাস্ত্র হইতে ভগবানের মহিমার বিবরণ পাঠ কর, সম্ভব হইলে সরল-হৃদয় ভক্তগণের নিকট হইতে তাহার প্রেম-লীলার মধুময় কাহিনী শ্রবণ কর, সত্য-কাম বন্ধু গণের সহিত ভগবং-প্রসঙ্গের আলোচনা! কর, এবং নিজ্জনে বসিয়া ভগবন্নাহাজ্ম্যের চিন্ত। কর। নিকটে যদি কোন মন্দির থাকে, মাঝে মাঝে সেখানে যাইয়! ইষ্টদেবকে প্রণাম প্রদক্ষিণ কর। স্তোত্র এবং নাম-মালা আবৃত্তি কর এবং ভক্তিবর্ধক সঙ্গীত গান কর। যখনই সম্ভব, ভগবানের নাম চিস্তা বা উচ্চারণ কর এবং সরল হৃদয়ে তাহার নিকটে প্রার্থনা কর। কখনও বা কাগজ-০ন্সিল লইয়া তাহার মৃত্তি অস্কিত কর। যে গৃহে বাস কর, তাহার প্রাচীরের কোন উপযুক্ত স্থানে ইষ্টদেবতার এক মনোহর প্রতিমূণতি স্থাপন কর, পুষ্পাদি দ্বারা তাহ! সজ্জিত কর, বারংবার তাহাকে দর্শন কর এবং সময়ে সময়ে প্রণাম কর। মনে মনে ভগবানের দিব্য-মধুর-মৃত্তির চিন্তা কর, মনঃকল্পিত উপকরণে তাহাকে পুজা কর, এবং তীহার নিকটে আত্ম-সমর্পণ কর। ভোজনের প্রাক্কালে আহীর্যয ভ্রব্য

ইষ্টদ্দেবকে নিবেদন করিয়া, তাহারই প্রসাদ ভক্ষণ কর।

১৭৮

বেদ-বাণী

তাহার সহিত কথা কও, আমোদ কর, আব্দার কর, ভ্রমণ কর। ভক্তের সহিত, ভগবানের লীলা-বিলাস শান্ত মনে অনুধ্যান কর। চলিবার সময়ে মনে কর--তিনি তোমার সঙ্গে সঙ্গে চলিতেছেন। পড়িবার সময়ে মনে কর--তিনি সাম্নে দীড়াইয়৷ তোমার পড়! শুনিতেছেন। লিখিবার সময়ে মনে কর--তিনি কাছে থাকিয়া! তোমার লেখা দেখি- তেছেন। ঘুমাইবার পূর্বে শয়ন করিয়। চিন্তা কর--তিনি প্রসন্ন বদনে তোমার দিকে তাকাইয়! আছেন। প্রত্যেক কর্মের সময়ে স্মরণ কর--তিনি তোমার কণ্ম এবং ভাব দর্শন করিতেছেন কোন জীব-শরীর নয়ন-গোচর হওয়া মাত্রই চিন্তা কর--উহার হৃদয়ে তোমার প্রিয়তম ইষ্টদেব বিরাজ- মান রহিয়াছেন। বাগানে ফুল ফুটিয়া রহিয়াছে দেখিয়| মনে কর-_-ভগবান স্থানে দাড়াইয়। আছেন, আর তাহার চরণোপরি ফুলগুলি শোভা পাইতেছে। এক দিন যিনি তমালের তলে, যমুনার কুলে বসিয়া কতই লীলা করিয়াছেন, কতই বাশী বাজাইয়াছেন, তিনিই সম্মুখস্থ তরু-শাখায় উপবিষ্ট আছেন, তিনিই নদীর.তীরে নৃত্য করিতেছেন ! “এ যে কেমন সুন্দর পুষ্পটা নিশ্মাণ করিয়া এইমাত্র গোপনে জঙ্গলের মধ্যে রাখিয়া দিয়াছেন! যে সন্ধ্যার আবরণে লুক্কাইত থাকিয়া ফুলটিকে প্রস্ফুটিত করিতেছেন! যে আকাশে কত রকমের রঙ. লাগাইতেছেন্, আর চঞ্চল বালকের মত কেবলই ১৭৯

বেদ-বাণী

রঙ, বদলাইতেছেন ! যে, কত মনোযোগ সহকারো, কত স্থন্দর সুন্দর নক্ষত্র আকিতেছেন ! যে শারদীক ব্রজনীর হাস্তময়ী জ্যোৎ্ন্গা, যে শ্োতশ্থিনীর সুন্দর তরঙ্গ- ভঙ্গ, যে মৃছু-মধুর মলয়-হিললোল, যে মনোহর কাকু" কাধ্য-সমন্বিত স্বন্দর কিশলয়, যে বূপ-লাবণ্য-সম্পক্ন বালকটার অনিন্দ-স্থন্দর মুখ-কাত্তি--এ সকলই যে তাহা- রই রচনা; সকলে যে তীাহারই সৌন্দধ্যের, তাহারই, নৈপুণ্যের, তাহারই মহিমার আংশিক প্রকাশ এই যে. অনস্ত ভাব-প্রবাহ, এই যে অনন্ত কর্দ-ভ্রোত--এ তাহারই লীলা-বিলাস। মেঘের গঙ্জনে, নদীর কুলুধবনিতে, স্টামার-গমন-শব্দে তাহারই নাম ধ্বনিত হইতেছে, মনে, কর। সগ্ভ-প্রস্থত বালকের ক্রন্দনে মৃত্যু-শয্যায় শায়িত

রোগীর আর্তনাদে প্রধব-ধ্বনি শুনিতে চেষ্টা কর। আর কত বলিব£ঃ ভাবের চশমা পরিয়া লও অনস্তভাবময় ভগবানকে সর্বদা সর্বত্র উপলব্ধি করিতে সচেষ্ট হও নানা ব্ূপে, নান! ভাবে, বিভিন্ত বিষজ্ে। তাহাকেই দর্শন.কর। এইক্প সৎসঙ্গ করিতে করিতেই তগবানে অন্থুরাগ জন্মিবে এবং ক্রমে বাড়িবে। তার পর যখন প্রেম-মধু তোমার হৃদয়-পক্চজকে পরিপূর্ণ করিবে, তখন ভগবৎ-ভূঙ্গের এমন শক্তি থাকিবে না, যদ্বারা সেই

অশ্থজাসন ক্ষণকালের জন্যও সে পরিত্যাগ করিবে পত্র কেবল পড়িলেই হইবে না। কাজ কর, কাজে ১৮৩

বেদ-বাঁণী

লাগিয়া! থাক। মনের চঞ্চলতায় তীাহারই লীল।-বিলাস ন্বরণ করিয়া তাহাতেই ডূবিয়া যাও। এরূপেও যখন মনকে শান্ত করিতে পারিবে না, বিচারাদির সাহায্যেও বখন উদ্দাম মনকে সংযত করিতে অসমর্থ হইবে, তখন তাহারই শরণাপন্ন হও, তীহারই কুপ। ভিক্ষা কর। বিশ্ব- বিপত্তিতেও মঙ্গলময়েরই হস্ত দর্শন কর। স্থখ-শাস্তিতে তাহারই নিকটে কৃতজ্ঞ হও সর্বতোভাৰে তীাহারই, আশ্রয় গ্রহণ কর। তাহারই দাস ভাবে, তীহারই প্রীতি কামনায়, সমুদয় কর্তব্য যথাসময়ে, যথানিয়মে, সুচার রূপে

সম্পঙ্গ কর খাগবাজার রীতি লাইজ্রেষী কন্থল্‌। দা তি: হাহি সত ২৩৯১৭ |

ধণ স্য। পতি

১৮৯